নরনারী কথা ( তৃতীয় পর্ব )

মৃত্তিকা মুখার্জি on

noronari_kotha_3

“ভ্রু পল্লবে ডাক দিলে দেখা হবে চন্দনের বনে… “

তখন বেশ রাত। প্রায় দেড়টা বাজছে। প্র্যাকটিকালের লেখালেখি নিয়ে ডুবে ছিলাম। বাইরে টিপটিপ বৃষ্টি পড়ছে। ফোনটায় দেখলাম টুং করে মৃদু শব্দ হলো। এত রাতে কে? কৌতুহলী হয়ে দেখি ছোট্ট মেসেজ
“kemon acho mam? Remember Me? “

রাজর্ষির মেসেজ। এই রে লোকটা রাতে ঘুমোয় না নাকি। এত রাতে মেসেজ করছে। ফোনটা নিয়ে টুকটুক করে টাইপ করলাম

” Ha nischoi. Vlo achi, ato rate jege achen?”

— “kaj theke elm. Bt it’s very late no? Tumi jege kno? “

এবার আমার বেশ মজা লাগলো! কেউ আমাকে এমন ভাবে আগে কখনো বলেনি। লিখলাম
— “m.sc er chap. Can’t help. Ato rate kaj theke elen? “

— “tomar ghorir sathe amar ghorir 2’5 hours difference hoi mam. Ekhane rat 11:00.”

— ” o! Apni to dekhlam vojohori manna! “

— ” what! Pardon? “

— “keno gan Ta sonen ni? Apnar profession er sathe matching “

— “oh! 🙂”

আমার হঠাৎ মনে হলো আমার সাথে এতদিন পর কথা বলছে কেন? জানতে ইচ্ছা হল বলে লিখলাম

“acha etodin por hotat Amake Frnd request pathabar karon? “

— ” I searched ur profile but khuje paini. Lots of rangana basus are there. U uploaded a pic some days ago. Ami sure holam eta Tumi.so…”

বলেই অফলাইন হয়ে গেল। আজব লোক তো!

আমার পড়াশোনার চাপ বাড়ছিল। রাজর্ষির সাথে যোগাযোগটা যদিও বন্ধ হলো না। প্রায় দিনই আমার সাথে কথা হতো রাতের দিকে। পরের দিকে আমার ছুটির দিন সকালে বা ওর ডে অফ থাকলে বিকেলের পরে ফোনও করতো আমাকে। শেষ কিছুদিন ধরে খুব একা হয়ে যাচ্ছিলাম। রাজর্ষির এই সামান্য মনোযোগটুকু আমার ভালো লাগতো। রাজর্ষিকে যেটুকু বুঝতাম ছেলেটা বেশ অদ্ভুত। মাঝে মাঝে মনে হত কেমন একটু আবেগহীন। যান্ত্রিক। টেক্সট করে একটু আধটু স্বাভাবিক ভাবে কথা বললেও ফোন করে বেশিরভাগই চুপ করে থাকত। খেয়াল করে দেখতাম আমিই একতরফা কথা বলে চলেছি ও বড়জোর “হুমম্” বা “আচ্ছা’ এই জাতীয় উত্তর দিত। তবে আমি ওর সম্পর্কে অনেকটাই জানতাম ততদিনে। মানে যতটুকু নিজে থেকে বলতো। ওর মা না থাকার কথা, ট্রেকিং,ক্যারাটে আর সাঁতার ভালোবাসার কথা,ওর প্রফেশনের সুত্রে দীর্ঘ আট বছর দেশের বাইরে থাকার কথা, ওর বাইক নিয়ে দূরে দূরে ঘুরতে চলে যাওয়ার গল্প, প্রথম প্রেম আর বিচ্ছেদের কথা….

আমিও দীর্ঘ দীর্ঘ গল্প করতাম ওর সাথে। আমার পড়াশোনা, কবিতা, বাবা না থাকার কষ্ট, আমাদের মা মেয়ের ছোট্ট সংসার,আমার পোষা বেড়াল ঠুংরি,কৃশানু…. আমার নতুন করে প্রেমে পরার ভয়, প্রত্যাখ্যানের ভয়! সব… রাজর্ষি আমার পারসোনাল ডাইরি হয়ে উঠছিল আস্তে আস্তে। তারপর যেদিন ও আমায় রাঙা বলে ডাকতে পারলো আর আমি আমাদের মধ্যের সাত আট বছরের দূরত্ব পেরিয়ে ওকে তুমি বলতে পারলাম সেদিন বুঝলাম ও আমার চেনা চৌকাঠের পৃথিবীরটার একটা অংশ হয়ে গেছে।
আমি বুঝতে পারতাম আমি ওর থেকে অনেকটাই অন্যরকম। আমার লেখা কবিতাগুলো পড়তো বেশ মন দিয়ে আর ফোনে জানতে চাইতো কি নিয়ে লিখেছি! মানে কি?
আমি রেগে গিয়ে বলতাম
— তুমি পড় কি জন্য?
হাসতো খুব হা হা করে। খুব রাগ হতো তখন।
থার্ড সেম পরীক্ষা চলছিল বলে খুব ব্যস্ততার মধ্যে ছিলাম। ওই সময়টা রাজর্ষির সাথে যোগাযোগ প্রায় ছিলনা বললেই হয়। কখনো সখনো সামান্য মেসেজ। পরীক্ষা শেষ হয়ে যাওয়ার পর আমি যোগাযোগ করলাম ওর সাথে। সেমেস্টার শেষের পর দু তিন দিন ছুটি ছিল। মেসেজ পাঠাবার পনেরো মিনিটের মাথায় রাজর্ষির ফোন এল। গম্ভীর গলায় বলল
— বলো? এক্সাম হলো?
কিছু মামুলি কথা হওয়ার পর আমি দুম করে বললাম,
— এতদিন যে সেভাবে কথা বলিনি ফোন করিনি একটাও, তোমার আমার কথা মনে হয়নি?
— নাহ্। কেন?
— ও!
আমি আর কি বলবো ভেবে পেলাম না! সরাসরি এমন না শুনে আমার খারাপ লাগছিল। মনে হচ্ছিল আমার কারোর কাছেই কোনো গুরুত্ব নেই। একটু চুপ করে থেকে বললাম

— রাখি এখন! তুমি ব্যস্ত মানুষ!আর সময় নষ্ট করবো না।
— হুমম…
ফোনটা রেখে চুপ করে বসে ছিলাম। আমি বুঝতে পারছিলাম না এত খারাপ কেন লাগছে আমার! আমি কি রাজর্ষিকে নিয়ে একটু বেশিই ভাবছি না? নিজের ওপরই বিরক্তি লাগছিলো। এমন সময় টুং করে একটা মেসেজ এল ফোনে। দেখি রাজর্ষির মেসেজ।

“Pagli! 🙂”

আমার মেসেজটা দেখেই গা পিত্তি জ্বলে গেল। ফোনটা বন্ধ করে দিয়ে স্নান করতে চলে গেলাম…


ক্রমশ…


পূর্ববর্তী পর্ব…


ফেসবুক অ্যাকাউন্ট দিয়ে মন্তব্য করুন


মৃত্তিকা মুখার্জি

বাসস্থান - দুর্গাপুর। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাণীবিদ্যা নিয়ে স্নাতকোত্তর পড়াশোনা। বর্তমানে পেশা শিক্ষকতা। কলমে ভালোবাসা বলতে কবিতা, প্রেম, সম্পর্ক, মানুষ। সখ বলতে বই, তেল রং,এবং মানুষকে জানা। প্রকাশিত লেখা - অপদার্থের আদ্যক্ষর, ব্ল্যাকবোর্ড, মাসিক কৃত্তিবাস ,শনিবারের আসর ইত্যাদি।

0 Comments

মন্তব্য করুন

Avatar placeholder

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।