দিনাজপুরে রামনবমীর মেলা ও লোকখাদ্য “কানমুচড়ি”

কৌশিক বিশ্বাস on

kanmuchri


শুধুমাত্র চট, চিড়ে, মুড়ি আর গুড় ; এই নিয়ে দিনাজপুর ছাড়া লোকখাদ্যের সম্ভারেও দিনাজপুর বৈচিত্রময়। বাঙালী জীবন গড়িয়েছে ধর্মযাপন আর লোকাচারের মধ্যে দিয়ে। কিন্তু বিবর্তনের এই ধারায় আমরা এই আপ্তবাক্যকে বড় আপন করে নিয়েছি নিজের অজান্তেই – “পেট ঠিক তো সব ঠিক “। তাই আজও কি গ্রামীণ, কি শহর সমস্ত জীবনেই পালনীয় আচারের সাথে খাদ্য এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। শুধু কি ধর্মীয় জীবন কেন্দ্রিক এই খাদ্যাভ্যাস। তা তো নয়। আজও তো আমরা বৃষ্টি মুখরিত দিনে খিচুড়ি খাবার কথা ভাবি কিংবা গরমকালে গুড় সরবত বা শীতকালে খেজুর গুড়ের পিঠে। সুতরাং খাবারের জন্য যে কোন অজুহাতই আসলে সবচেয়ে বড় হাত! সে সরস্বতী পূজার দিন খিচুড়িই হোক বা নবান্নের নতুন চালের ভাত বা রথের মেলায় পাপড়ভাজা। দিনাজপুরে এক-একটি মেলায় একেক রকম খাবার খাওয়ার চল অনেক পুরাতন৷ মেলার বিশেষ আকর্ষণও বটে৷ ঠিক এমন একটি মেলা রঘুনাথপুরের রামনবমীর মেলা। একেবারে আত্রেয়ী পাড়ে বসা এই মেলা সকল পূন্যার্থীদের কাছে মহাকুম্ভ! আর এই মেলায় এসে বড়- ছোট সবার কাছেই ” কানমুচড়ি” খাওয়া একটি অবশ্য কর্তব্য! পারিবারিক ঐতিহ্য মেনে এখনো কিছু পরিবার এই “কানমুচড়ি ” বানিয়ে চলেছেন। প্রথমে মোটা ধানের আতপ চাল কিনে তা তিন-চার দিন জলে ভিজিয়ে রাখতে হয়৷ তারপর সেটা রোদে শুকিয়ে ওই চাল ভাঙিয়ে আটা করে বাড়ি নিয়ে এসে সেটাকে মন্ড করে টিনের ছিদ্রযুক্ত ডাইসে ফেলে হাত দিয়ে ঘষে লম্বা লম্বা আকারে বের করা হয়। এরপর সেগুলি ভালো করে রোদে শুকিয়ে সেগুলি শুকনো কুড়মুড়ে হলে রোদ থেকে তুলে বস্তায় ভরে নেওয়া হয়। এরপর কড়াইয়ের মধ্যে গরম বালিতে মুড়িভাজার মতো করে ভেজে নিলেই তৈরি হয়ে যায় “কানমুচড়ি “৷ এই চৈএমাসে চড়কের মেলায় বিক্ষিপ্তভাবে “কানমুচড়ি” বিক্রি হলেও রঘুনাথপুরের মেলায় এটি খাওয়ার প্রথা সর্বাধিক প্রচলিত। বস্তুত এই মেলায় বিক্রির অবশিষ্টাংশ অন্য জায়গায় বিক্রি হয়। বর্তমান চলমান সময়ে প্যাকেটবন্দী নানা খাবারের মাঝেও লৌকিক জীবন, লোকাচার আর লোকখাদ্য “কানমুচড়ি ” প্রাচীনতা আর ঐতিহ্যে যে স্বমহিমায় উত্তীর্ণ একথা বলাই বাহুল্য!

তথ্যসূত্র :
ক) লেখকের ক্ষেত্রসমীক্ষা।
খ) মাননীয় শিক্ষক শ্রী তাপস সরকার মহাশয়ের সাক্ষাৎকার।


ফেসবুক অ্যাকাউন্ট দিয়ে মন্তব্য করুন


কৌশিক বিশ্বাস

তরিকুল্লাহ সরকার উচ্চ বিদ্যালয়ের ইংরেজির শিক্ষক। আঞ্চলিক ইতিহাস ও লোকসংস্কৃতি বিষয়ক প্রবন্ধ লেখক। বৌদ্ধ ইতিহাস, ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে গবেষণামূলক প্রবন্ধ লেখক।

0 Comments

মন্তব্য করুন

Avatar placeholder

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।