অপরাজিতা

বর্ণালি বসাক বোস on

aporajita
This image has an empty alt attribute; its file name is aporajita-1024x233.jpg

দীর্ঘ আট বছর পর দেশে ফিরল সুগত । সে এখন ফেসবুকের একজন উচ্চপদস্থ কর্মচারী । ইন্ডিয়াতে ওর পোস্টিং দিল্লিতে । সুগতর ইচ্ছা এবার সে বাবা মা কে নিজের কাছে দিল্লিতে নিয়ে যাবে । অনেক দিন সে বাবা মাকে ছেড়ে থেকেছে । তাই বাড়ী এসে বাবা মার কাছে বায়না ধরেছে তাদের এবার দিল্লী যেতে হবে । কনিকাদেবী ও সুজনবাবু তো ভেবেই পাচ্ছেন না কি করে তারা ওই ফ্ল্যাট বাড়ীতে চারদেওয়ালের মধ্যে আটকে থাকবেন । মফঃসল শহরের মানুষ খোলামেলা বাড়ী উঠোন, তুলসিতলা, খোলাবারান্দা, আমগাছ, নারকেলগাছ এসব ওই ফ্ল্যাট বাড়ীতে কোথায় ? আর ওই ছোট্ট বেড়ালছানা গুলো থাকবে কোথায় ? আর ফুলগাছগুলো তো জল না পেয়ে শুকিয়েই মরে যাবে । এসব তো সবই তাদের বাড়ীর সদস্যের মত তাদের ছেড়ে কি করে একবারে চলে যাওয়া সম্ভব  । কিন্তু ছেলেটিও তো এতদিন একা , তখন না হয় বিদেশে ছিল । এখন দেশে ফেরার পরও যদি একা থাকতে হয় ! কতদিন ছেলেটা বাইরের খাবার খাবে ? এরকম নানা চিন্তায় কনিকাদেবীর মন অস্থির হয়ে উঠেছে ।  এদিকে ছেলেও নাছোড়বান্দা মাকে যেতেই হবে । ঠিক হল কিছুদিন তারা সুগতর কাছে গিয়ে থাকবে । ওখানে গিয়ে ওর ঘরটা গুছিয়ে দিয়ে আসবে । নতুন জায়গা খাবাররের ব্যাবস্থাটাও তো করে আসতে হবে । ওরা তিন জনেই দিল্লী যায় । সুগতর অফিসিয়াল ফ্ল্যাটটি বেশ বড় । কনিকাদেবী সুন্দর করে ছেলের ফ্ল্যাটটি গুছিয়ে দিলেন । পরের দিনই চলে গেলেন শপিংয়ে, রান্নাঘরের যাবতীয় জিনিস নিয়ে এলেন । মনের মত করে রান্নাঘরটি সাজিয়ে দিলেন । বেশ কিছুদিন তারা ছেলের কাছে কাটিয়ে এবার বাড়ীর জন্য তাদের মন ছটপট  করতে লাগল । শহরের ঘিঞ্জি পরিবেশে তারা হাপিয়ে উঠলেন । এদিকে ছেলেকে একা রেখে ফিরতেও মন চাইছে না । ছেলেটা ক্লান্ত হয়ে অফিস থেকে ফিরলে এক কাপ চা দেওয়ারও যে কেউ নেই । কনিকাদেবী এবার মনে মনে ঠিক করলেন বাড়ী ফিরেই ছেলের জন্য পাত্রী খুঁজবেন । ছেলের এবার তিনি বিয়ে দেবেন একজন সুন্দরী গৃহকর্মে নিপুণা পাত্রীর সঙ্গে । কনিকাদেবীরা বাড়ী ফিরে এলেন । দুদিন পর থেকেই তিনি পাত্রীর খোঁজ শুরু করে দিলেন । অনেক খোঁজ আসে কিন্তু কনিকাদেবী ঠিক যেমনটি চাইছেন তেমন পাত্রীর সন্ধান তিনি পাচ্ছেন না । ওনার মনে মনে একটা ধারনা আছে আজকালকার আধুনিক মেয়েরা সংসারটা ঠিকমত করে না । সকলেই প্রায় বাবা মার একমাত্র সন্তান খুবই আদরে মানুষ তাই সংসারের দ্বায়িত্ব পালনে তারা ঠিক সক্ষম নয় । তিনি চান এমন একটি মেয়ে যে তার ছেলের ঠিকমত যত্ন করবে , ওর প্রতিটি প্রয়োজন মাথায় রেখে হাতের সামনে সব তুলে ধরবে । খুঁজতে খুঁজতে তিনি কিছুদিন পরে তার মনের মত একটি মেয়ে পেয়ে গেলেন । সুমনা । সুমনা খুব সাধারন ঘরের একটি মেয়ে । গ্র্যাজুয়েট বাংলায় অনার্স । গায়ের রং উজ্জল শ্যামবর্ণ । গৃহকর্মে নিপুণা । গান জানে । সেলাই, ফেব্রিকের কাজও জানে । কনিকাদেবী ও সুজনবাবু দুজনেই গেলেন সুমনাকে দেখতে । কনিকাদেবী প্রায় বিয়ে ঠিক করে ফেললেন । সুজনবাবু ছেলে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বললেন । কিন্তু কনিকাদেবীর ছেলের প্রতি অগাধ বিশ্বাস মায়ের পছন্দ নিয়ে ছেলে কোন আপত্তিই করবে না । অতঃপর ওনারা সুগতকে সব জানালেন এবং ছুটি নিয়ে তাড়াতাড়ি বাড়ী আসতে বললেন । সুগত ছুটি নিয়ে বাড়ী এল । এত তাড়াতাড়ি সুগতর বিয়ে করার ইচ্ছে ছিল না। কনিকাদেবী প্রায় জোর করেই ছেলেকে সুমনাদের বাড়ীতে নিয়ে গেল । সুগতর কিন্তু সুমনাকে দেখে পছন্দ হল না । কিন্তু কনিকাদেবীর কথাবার্তায় সুগত বুঝে গেল তিনি অনেক দূর এগিয়ে গেছেন আর আপত্তি করে কোন লাভ নেই । বাড়ী ফিরে সুগতর মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল । নিজে পছন্দ করে বিয়ে করার কথা সে ভাবেনি কখনও । বিয়ের জন্য সে বাবা মার উপর নির্ভরশীল  ছিল । কিন্তু তাই বলে এমন একটা গেঁয়ো , আনস্মার্ট মেয়ের সঙ্গে মা তার বিয়ে ঠিক করবে সে টা ভাবেনি । ও মনে মনে ভাবতে লাগল অফিস কোলিগদের সামনে ওর বউকে দাঁড় করাবে কেমন করে । ও যে সকলের হাসির পাত্র হয়ে উঠবে । তাছাড়া  কর্মসুত্রে তাকে প্রায়ই এদেশ ওদেশ যেতে হয় এমন একটি মেয়েকে নিয়ে সে ঘুরবে কি করবে । কনিকাদেবী সাতদিনের মধ্যে সুগতর বিয়ে ঠিক করে ফেললেন । ও দিকে সুমনাদের বাড়ীর লোকজন আর একটু সময় চাইছিলেন । মেয়ের বিয়ে বলে কথা । সাতদিনের মধ্যে কি আর সব ব্যবস্থা করা সম্ভব ।  যদিও কনিকাদেবীদের কোন দাবী নেই তিনি তো বলেই দিয়েছেন শুধু লালপেড়ে কাপড় পরিয়ে পাঠাতে । তার একমাত্র ছেলের বউ তিনিই সাজিয়ে ঘরে তুলবেন । সুমনার বাবা মা তাদের সাধ্যমত সুমনা ও সুগতকে সাজিয়ে দিলেন । বিয়ের প্রস্তুতিতে সুগতর বাবা মা এতটাই ব্যাস্ত যে ওর মনমরা ভাব ওদের চোখ এড়িয়ে গেল । ছেলের ছুটি শেষ হওয়ার আগেই বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন কনিকা দেবী । ১৫ দিনের ছুটিতে সুগত বাড়ী এসেছিল । কিন্তু ও ভাবেনি মা এর মধ্যেই ওর বিয়ে দিয়ে দেবে। ৭ দিন পরে ওদের বিয়ে হল। সুমনাকে বৌ করে ওরা বাড়ী নিয়ে এলো। সুমনার কিন্তু সুগতর ব্যাবহারটা স্বাভাবিক লাগছিল না। ও কথাটা ওর বাবা-মাকে জানিয়ে ছিল। ওনারা মনে করেছিলেন অ্যামেরিকা ফেরত ছেলে এই মফঃসলে হয়ত অসুবিধে হচ্ছে তাই একটু কথা কম বলছে। বৌভাতের দিন সুগতর শুধু মনে হতে থাকল তার বন্ধু-বান্ধব আত্মীয়স্বজন সকলেই হয়ত ওর বৌকে নিয়ে আলোচনা করছে। সবার কাছ থেকে সে একটু দূরে দূরে সরে থাকল। কনিকা দেবীই সব দিক সামলে নিলেন। রাতে ফুলশয্যা। সুগতর ঘরটা খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। সুমনা একটা লাল বেনারসী পরে খাটে চুপ-চাপ বসে রয়েছে। সুগত ঘরে এসে সুমনার পাশে বসল। জিজ্ঞেস করল, “তোমার কি আমাকে কিছু বলার আছে ?”

না।

তবে আমিই বলছি। মা আমাকে প্রায় জোর করেই তোমার সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দিল। আমার কোন মতামত নেয়নি। আমার চিন্তাধারায় যে আমার বৌ হবে, তার যে ছবি ছিল সেটি তোমার সঙ্গে একদম মেলে না। আমি তোমার খাওয়া-পরার কোন অভাব রাখব না। কিন্তু এর থেকে বেশী আমার কাছে তুমি আশা করবে না।

আপনি কি অন্য কাউকে ভালোবাসতেন ?

না। কেরিয়ারের পেছনে ছুটতে ছুটতে ওসব প্রেম-টেম করার সময় হয়নি। তবে এখন মনে হচ্ছে বিয়েটা নিজের পছন্দ মত করলেই ভালো হত।

এ কথাগুলো আপনি আপনার বাবা-মাকে বলেছিলেন ?

না। সুযোগ পাই নি।

তাহলে নিজের অপছন্দের মানুষটার সাথে সারা জীবনটা কাটাবেন কি করে ?

জানি না।

আপনার কি ধারনা আমি শুধু খাওয়া-পরার জন্য আপনাকে বিয়ে করেছি ?

আমি তা বলছি না। কিন্তু তোমাকে আমি ভালবাসতে পারব না। আমার এই পরিণতিটা আমি জাস্ট সহ্য করতে পারছি না।

এটা আপনার আগেই ভাবা উচিত ছিল। আপনি তো আমার জীবনটাও নষ্ট করে দিলেন। যেখানে এতটুকু সন্মান নেই সেখানে আমি থাকব কেন ? কিন্তু বিয়ের পরেই যদি বাবার বাড়ীতে ফিরে যাই বাবা-মা সমাজে মুখ দেখাতে পারবে না। সত্যিটা কেউ দেখতে আসবে না।

তোমার যা ইছা তুমি করতে পার।

আমি কিছু ভাবতে পারছি না । আমি যদি আপনার সঙ্গে দিল্লী যাই তো আপনার কি আপত্তি আছে ?

অগত্যা আর কি করা যাবে !

                                আড়াই দিন পর ওরা অষ্টমঙ্গলায় গেল। শ্বশুর বাড়ীতে সুগতর আদর-আপ্যায়নের কোন তুলনা নেই। কিন্তু সুগতর যেন সব কিছুতেই অনিহা। ও যেন দয়া করছে। সুমনা বাড়ীতে কাউকে কিচ্ছু জানাল না। একপ্রকার আত্মহত্যার মতো সে সুগতর সাথে নিজের জীবনকে জড়িয়ে ফেলল। সুমনা জানত সে সুগতর কাছ থেকে কখন কোন সন্মান বা মর্যাদা পাবে না। নিজের মনকে সে সেই ভাবেই প্রস্তুত করতে লাগল। অষ্টমঙ্গলা সেরে সুগত ও সুমনা ফিরে এলো। পরের দিনই দিল্লী যাওয়া। এদিকে কনিকা দেবী ছেলের নতুন সংসারের জন্য কত কিছু গুছিয়েছেন। সুমনাকে সব কিছু বুঝিয়ে দিচ্ছেন। ছেলে কি খেতে ভালোবাসে, ছেলের কখন কি চাই। সব কিছু। মনে মনে সুমনা ভাবল এতো ঘটা করে ছেলের বিয়ে না দিয়ে কনিকা দেবী সঙ্গে একটি কাজের লোক পাঠালেই পারতেন। সুমনা আস্তে আস্তে নিজের জায়গাটা বুঝতে পারল।

                                                    ওরা দিল্লী পৌছাল। সুগত তাড়াতাড়ি ট্যাক্সি বুক করে ফ্ল্যাটে যাওয়ার ব্যাবস্থা করল। পাছে কোন পরিচিত কেউ সুমনাকে দেখে ফেলে। যাওয়ার পর থেকে সুগত সুমনার সাথে একটাও কথা বলেনি। এমন একটা ভাব যেন অনাহুত কেউ ওর ফ্ল্যাটে ঢুকে পরেছে। সুমনা জিনিসপত্র সব গুছিয়ে রান্নাঘরটা পরিস্কার করে নিল। কিছুদিন চলার মতো মশলাপাতি কনিকা দেবী গুছিয়ে দিয়েছিলেন। সুগত কম্পানি থেকে যাতায়াতের গাড়ি পেয়েছে। ড্রাইভার এসে দেখা করে গেল। সুগত সুমনা কে বলল, “যখন তখন বাইরে বের হবে না। আর কাউকে আমার স্ত্রী হিসেবে পরিচয় দেবে না। সংসারে যা কিছু বাজার লাগবে ড্রাইভার কে দিয়ে আনিয়ে নেবে। খুব প্রয়োজন হলে ড্রাইভারকে নিয়ে যাবে।

                                           সুমনা কোন কথার উত্তর করে না। পরের দিন সুগতর অফিস। সুমনা সকাল সকাল রান্না চাপিয়ে দিয়েছে। ঠিক ৯ টার সময়ে সুগত খেতে বসল। খাওয়া দেখে মনে হল বেশ তৃপ্তি করেই খেয়েছে কিন্তু তার জন্য সুমনার ভাগ্যে কোন প্রশংসা জোটে না। সুগত অফিসে বের হওয়ার পর সুমনা একদম একা। চারদেওয়ালের মধ্যে ওর দম বন্ধ হয়ে আসে। সুগত আসে সেই রাত ৯ টায়। রোজ সুমনার সকাল থেকে রাত হয় এই ভাবেই। কত আর গল্পের বই পরবে। বাড়ী থেকে যত গল্পের বই এনেছিল সবই সাতদিনের মধ্যে পড়া হয়ে গেছে। সুমনা খুব ভালো গান করত। মাঝে মাঝে গুন গুন করলেও গান করতে ওর আর ভালোলাগে না। ও যেন একটা যন্ত্রের মতো, সব অনুভুতি গুলো হারিয়ে যাচ্ছে। বাড়ী থেকে অনেক অসম্পূর্ণ হয়ে থাকা সেলাই এনেছিল। সেগুলোও  শেষ করে ফেলেছে। এ ফ্ল্যাট বাড়ীতে একা থাকতে থাকতে ও হাপিয়ে উঠেছে। খুব ইচ্ছে করে দিল্লীটা ঘুরে দেখতে। সুগতর কাছে সে সব আশা সে রাখে না। এ দিন সুগত অফিস থেকে ফিরলে সুমনা বলল, “মা যা মশলাপাতি দিয়েছিলেন সবই প্রায় সেশ।”

ড্রাইভারকে বোলো। ও এনে দেবে।

সব কিছুই কি ড্রাইভারকে দিয়ে হয় ?

তাহলে তুমি চলে যেও। আমি অফিসে যাওয়ার পর গাড়ি পাঠিয়ে দেব।

সুমনা মনে মনে খুব খুশী। যাক বাইরে তো বের হতে পারবে। সুগত অফিসে বের হবার পর সুমনা তাড়াতাড়ি তৈরী হয়ে নিল। ড্রাইভার কলিং বেল বাজানোর সাথে সাথেই সুমনা বেরিয়ে এল। দরজা লক করে বেড়িয়ে পড়ল। সুমনা গাড়িতে গিয়ে বসল ড্রাইভার জিজ্ঞেস করল –

কোথায় যাবেন ম্যাডাম ?

জানি না।

মানে ?

যেখানে মশলা পাতি পাওয়া যায় সেখানে চল।

একটা কথা বলব ম্যাডাম ?

বল না কাকু। আর আমার নাম সুমনা আমাকে তুমি নাম ধরে ডেক।

না না তা কি করে হয় ! আচ্ছা আপনি কি সাহেবের ?

হ্যাঁ স্ত্রী। কিন্তু আমি তো গেঁয়ো মেয়ে তাই উনি কারো কাছে তা প্রকাশ করতে চান না।

মা তুমি আমার মেয়ের বয়সি। তাই জিজ্ঞেস করলাম আর তোমার বাড়ীতে বাজার দিতে গিয়েও আমার কেমন একটা লাগে তাই কৌতূহল চেপে রাখতে পারলাম না।

আচ্ছা কাকু তুমি কি বাঙালী ?

হ্যাঁ মা। এখানে পরিবার নিয়ে থাকি।

একদিন নিয়ে এসো না ওদের। আমি তো সারাদিন একাই থাকি।

আচ্ছা মা। তুমি কিন্তু আচেনা কাউকে তোমার ঘরে ঢোকাবে না। যায়গাটা কিন্তু মোটেই ভালো নয়। তুমি সহজ সরল মেয়ে সকলকেই সহজে বিশ্বাস কর। সবাই তো তোমার মত ভালো নয়। মা তুমি আমার সাথে এত কথা বলছ, আমায় কাকু বলে সন্মান করছ নিশ্চয় ভালো ঘরের শিক্ষিত মেয়ে তুমি। তাহলে নিজেকে এখানকার মত করে তৈরী করে নাও ।

মানে ?

একটা কথা বলি। আমি শুনেছিলাম এখানে নাকি একটা যায়গা আছে যেখানে ইংরেজিতে কথা বলা শেখানো হয়। হাঁটা চলা শেখানো হয়। মানে শহুরে মেয়েদের মত আরকি ?

তাই ? কোথায় ? আমাকে নিয়ে যাবে ?

নিশ্চই !

তাহলে আজই চলনা কাকু।

আর তোমার মশলা ?

ওসব যাওয়ার সময় কিনব।

বেশ।

ওরা এসে দাঁড়াল একটা কোচিং সেন্টারের সামনে। সামনেই লেখা ‘ স্মার্ট কোচিং ’। সুমনা জড়সড় পায়ে ভেতরে ঢুকল। রিসেপশানে একটি মেয়ে বসে। সুমনা আধ বাংলা – আধ ইংরেজীতে কথা বলে ওর  প্রয়োজনটুকু বোঝাল। মেয়েটি ওকে নিয়ে গেল সেখানকার একজন বাঙালী কর্মীর কাছে। সুমনা মন খুলে তার সাথে কথা বলল আগামী দিন থেকে সে ক্লাস জয়েন করবে। সুমনা দারুন খুশী । সুমনা যেন নতুন জীবন পেল ।মন দিয়ে সে ক্লাস করতে লাগল ।  রোজ সে ড্রাইভারের সঙ্গে যায় না। তাহলে তো সুগত টের পেয়ে যাবে। ড্রাইভারই তাকে রাস্তা  চিনিয়ে দিয়েছে । কোনোদিন ট্যাক্সিতে কোনোদিন অটোতে চেপে সুমনা চলে যায় ওর কোচিং ক্লাসে । কত বন্ধু হয়েছে সুমনার । দেখতে দেখতে সুমনা হয়ে উঠল শহুরে আদপ কায়দায় গড়ে ওঠা একটি মডার্ন মেয়ে । কোচিং ক্লাসের সবাই সুমনা কে খুব ভালো বাসে তার মধ্যে রিমা বলে একটি মেয়ের সঙ্গে ওর খুব বন্ধুত্ব। রিমা ওকে একদিন বলল, “সুমনা চল তো তোকে পার্লারে নিয়ে যাই। তোর লুকটাই চেঞ্জ করে দেব। তোর বর তোর সামনে দিয়ে গেলেও তোকে চিনতে পারবে না।” সত্যি পার্লারে গিয়ে নতুন হেয়ার স্টাইল করে সুমনা। তাছাড়া নিজেকে অনেক চেঞ্জ করে ফেলে সুমনা। নতুন আত্মবিশ্বাস জেগে ওঠে সুমনার মধ্যে। এখন সে গলা ছেড়ে রবীন্দ্র সংগীত গায়। অনেক নতুন সেলাই শুরু করেছে সে। সুমনার এতো ভালো হাতের কাজ দেখে সেন্টারে ম্যাডাম প্রমিলা দেবী ওকে বললেন, “সুমনা এতো ভালো হাতের কাজ তোমার ! একটা বুটিক খোলো না ! আমরাই হব তোমার প্রথম কাস্টোমার।” সুমনা তো এতো কিছু ভাবেই নি। কথা টা ওর খুব ভালো লাগল। মনে করল সত্যি তো সকাল ১১টা থেকে সন্ধ্যে ৭টা পর্যন্ত তো ওর ফ্ল্যাটেই বুটিক চালাতে পারবে ! সুমনা ওর ড্রাইভার কাকুকে সব বলল। তিনি সুমনাকে ওর বুটিক খোলায় সাহায্য করলেন। তিনি নিজে হাতে সব ব্যাবস্থা করে দিলেন। সুগত এসবের কিছুই জানল না। সুগত যখন বাড়ীতে থাকে, সুমনা সেই গেঁয়ো মেয়ে হয়েই থাকে। ওর পরিবর্তনটা সুগতর চোখে পরে না। সুমনা ওর বুটিকের নাম দিয়েছে ‘অপরাজিতা’। সুমনার হাতের কাজ এতো সুন্দর, ওর করা ফেব্রিক, অ্যাপলিক সব কিছু যেন জীবন্ত হয়ে ওঠে ওর হাতের ছোঁয়ায়। অপূর্ব ক্রুশের কাজ সুমনার। কাপড়ের কোয়ালিটিও খুব ভালো। আস্তে আস্তে ‘অপরাজিতা বুটিকের’ নাম সকলের মুখে মুখে ছড়িয়ে পরে। প্রচুর অর্ডার আসতে থাকে সুমনার কাছে। সকলের কথা মাথায় রেখে শাড়িতে – কুর্তিতে কাজ করে সুমনা। ছোটো থেকে বড়, সকলের মনে ধরে ওর কাজ। দরজা – জানালার পর্দা থেকে বেডকভার – পিলোকভার, কি নেই ওর বুটিকে ! সব কিছুতেই সুন্দর রঙের খেলা। অদ্ভুত একটা জগৎ ওর ফ্ল্যাটটার মধ্যে। রোজ সকাল ১১টায় ওর ফ্ল্যাটটা নতুন করে সেজে ওঠে। দেখে মনেই হবে না এই ফ্ল্যাটটাতেই ওরা থাকে। ৭টার মধ্যে ও বুটিক বন্ধ করে সব গুছিয়ে তুলে রাখে। সুগত ৯টার সময়ে ঢুকে কিছুই বুঝতে পারেনা।

                                        সুমনা এবার একটা স্মার্টফোন কিনেছে, নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলেছে, প্রোফাইল পিকচার দিয়েছে ‘অপরাজিতা’ ফুলের ছবি। নিজের নামও দিয়েছে ‘অপরাজিতা’। নিজের কাজের প্রচুর ছবি দেয় ও ফেসবুকে। আরও অনেক বেশি অর্ডার পেতে থাকে ও। ওকে সাহায্য করার জন্য দুটি মেয়ে রেখেছে সুমনা। ডাইনিংটাতে অফিস বানিয়েছে।

       দিপাবলির আগে একটি বড় কোম্পানি থেকে একটি বড় অর্ডার পেয়েছে সুমনা। এতো কাজ ও একা করবে কি করে খুব চিন্তায় পরে গেছে ও । এমন সময় ওর ‘স্মার্ট কোচিং’-এর ম্যাডাম প্রমিলা দেবী এলেন ওর কাছে। সুমনা তো ভীষণ খুশী। অনেক গল্প করল দুজনে। সুমনার চিন্তার কথা শুনে প্রমিলা দেবী হাসতে হাসতে বললেন, “ অ্যাড দাও সুমনা। সেলাই জানা কিছু মেয়েকে কাজে ঢোকাও। নিজের বুটিক আরও বড় করে তোলো।”

তাই তো ম্যাডাম ! এই জন্যই ঈশ্বর হয়ত আজকে আপনাকে আমার কাছে পাঠিয়েছেন। সত্যি আপনি সব সময়ে আমাকে সঠিক রাস্তা দেখিয়েছেন। আজ আপনি না থাকলে ‘অপরাজিতা’ হত না।

আরে না না ! আমি আর কি করেছি ? আগুন তো ছিলই। শুধু একটু উস্কে দিয়েছি।

সুমনা গতদিনের করা একটি শাড়ী নিয়ে এলো প্রমিলা দেবীর জন্য।

ম্যাডাম দেখুন তো শাড়ীটা কেমন হয়েছে ?

দারুন সুমনা ! অসাম ! তুমি কি করে জানলে আমি আজ শাড়ী দেখতে এসেছি ?

তা আমি জানিনা, কিন্তু এই শাড়ীটা আমি আপনার জন্যই করেছি। এটা আমার তরফ থেকে দিপাবলির গিফ্‌ট।

বলো কি ! এতো দামি শাড়ীটা আমায় গিফ্‌ট করছ ?

আপনি জানেন না আপনি আমার জীবনের কতটা জায়গা জুড়ে আছেন। এই বিদেশ বিভুঁয়ে সুমনা, যে আজ অপরাজিতা, সে তো শুধু আপনারই জন্য।    

আর এক জনের অবদান সুমনা কোনোভাবেই ভুলতে পারে না । তিনি হলেন সুমনার ড্রাইভার কাকু । যিনি প্রথম থেকে বাবার মত করে তাকে আগলে রেখেছে । প্রথম প্রথম যখন সুমনা দিল্লির কিছুই চিনত না তখন তো তার সঙ্গে গিয়েই বুটিকের সব জিনিস পত্র কিনে আনত । সুমনার যা কিছু প্রয়োজন কাজের ফাঁকে সব তিনি জোগাড় করে দিতেন । সুমনা আরও একটি শাড়ীতে নিজের হাতে কাজ করেছে ড্রাইভার কাকুর মেয়ের জন্য । মনে মনে ভাবল কালই ড্রাইভার কাকুকে ডেকে শাড়ীটা পাঠিয়ে দেবে ।

               প্রচুর ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট আসে সুমনার ওরফে অপরাজিতার । সবাই তার কাজের খুব প্রশংসা করে । আজও অনেক ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট এসেছে তার মধ্যে একজনের  ছবি দেওয়া নেই শুধু নাম দেওয়া আছে দেব । নিজের ব্যাবসার স্বার্থে  সুমনা প্রায় সব ফ্রেন্ড রিকোয়েস্টই  একসেপ্ট করে । এ ক্ষেত্রেও তাই হল । রাত নটার পর সুমনা ওর স্মার্ট ফোনটা বন্ধ করে লুকিয়ে রাখে । সুগত জানেই না সুমনা ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলেছে । সুগত নিজেই যেহেতু ফেসবুকে চাকুরিরত তাই দেব নাম দিয়ে ও ওর প্রোফাইল খুলেছে । এখন সুগত ওরফে দেব সুমনা ওরফে অপরাজিতার ফেসবুক ফ্রেন্ড । অবসর সময়ে তারা ম্যাসেঞ্জারে চ্যাটিং করে । একদিন দেব লিখল – আমি তোমার বুটিক দেখতে চাই । কি অপূর্ব হাতের কাজ তোমার । যার হাতের কাজ এত সুন্দর না জানি সে কত সুন্দর ।

বেশ তো চলে আসুন না একদিন , ঠিকানা তো জানেন ।

হ্যাঁ ওই এলাকাতেই তো আমার ফ্ল্যাট । কিন্তু আমি যখন ফিরি তোমার বুটিক তখন বন্ধ হয়ে যায় । তাই ভাবছি একদিন অফিস থেকেই যাব ।

বেশ তো আসার সময় বৌদিকেও সঙ্গে আনবেন ।

না না ও এসবের কিছু বুঝবে না । এগুল বোঝার জন্য চাই কালচার আর স্মার্টনেস ।

মানে ?

না কিছু না । ভাবছি কালই একবার ঘুরে আসি ?

না না কাল না । কাল আমি কোন অ্যাপোয়েনমেণ্ট রাখছি না । কাল আমার বুটিকে ইন্টারভিউ আছে । কিছু মেয়ে অ্যাপয়েণ্ট করতে হবে একা আর কাজ সামলাতে পারছি না। আপনি পরশু আসুন ।

আচ্ছা ওই এলাকায় গিয়ে তোমার বুটিকের নাম বললেই হবে তো ?

হ্যাঁ হ্যাঁ নাম বললেই সবাই দেখিয়ে দেবে ।

এদিন সুগত একটু অন্যরকম মানে অন্য দিনের থেকে ভালো পোশাক পরে অফিস যাচ্ছে । সুমনা ভাবল অফিসে হয়তো কোন মিটিং আছে । আর তাছাড়া ওসব খেয়াল করার মত সময় এখন আর সুমনার নেই । সারাক্ষণই ওর মন নানা রকম নতুন নতুন নকশা এঁকে চলেছে । সুগতর ওর প্রতি উদাসীনতা ওকে আর কষ্ট দেয় না । সুগত বেরিয়ে গেল । ওদের ফ্ল্যাটটা আবার সেজে উঠল সুন্দর সুন্দর নকশা করা শাড়ী , কুর্তি , বেডকভার , নানারকম ক্রুশের তৈরি জিনিস সব দিয়ে । সুমনার ডাইনিং টেবিলে চলে এল রজনীগন্ধা রাখা ফুলদানি । খুব সুন্দর করে ওর অফিসটি সাজিয়ে নেয় সুমনা । আজ নতুন মেয়েগুলো কাজে এসেছে । সুমনা খুব ব্যাস্ত । ওদের কাজ বুঝিয়ে দিচ্ছে সুমনা । ও ভুলেই গেছে দেবের আসার কথা । ওদিকে সুগত ওদের ফ্ল্যাটের কার পারকিংএর কাছে দাঁড়িয়ে দেখছে দুজন হেঁটে যাচ্ছে হাতে অপরাজিতা বুটিকের ব্যাগ । সুগত ওদের ডেকে বলল , “শুনছেন অপরাজিতা বুটিকটি ঠিক কোথায় বলুন তো । ”

ওই তো এই বিল্ডিংএর ছ – তলায় ।

ছ – তলায় ?

হ্যাঁ ।

সুগত ভাবছে, “ছ – তলায় তো আমার ফ্ল্যাট। তাহলে বুটিকটা কোথায় । যাক গে ওখানে গিয়ে তো দেখি।” সুগত ফ্ল্যাটে এসে ভেতরে ঢুকতে যাবে এমন সময় গেটের ছেলেটি ওকে আটকে দেয় বলে, “কোথায় যাচ্ছেন ? ম্যাডামের অ্যাপোয়েন্টমেন্ট নেওয়া আছে ?

হ্যাঁ

নাম বলুন । আমি শুনে আসি ভেতর থেকে কখন পাঠাব আপনাকে ।

ম্যাডামকে বল দেব এসেছে ।

ছেলেটি ভেতরে গিয়ে বলল, “ম্যাডাম দেব নামে একজন আপনার সঙ্গে দেখা করতে চায় । পাঠাব ?

হ্যাঁ । আমার টেবিলে বসতে বল আমি আসছি ।

ছেলেটি সুগতকে ভেতরে নিয়ে গেল । সুগত ভাবছে এটা আমাদের ফ্ল্যাট ? চেনাই তো যাচ্ছে না । একদম একটা বুটিক সেন্টার । কত লোক কাজ করছে । ছেলেটি বলল, “এখানে বসুন ম্যাডাম আসছে ।” সুগত ভাবছে বোঝাই যাচ্ছেনা এটা আমাদের ডাইনিং টেবিলটা । তার মানে সুমনাই অপরাজিতা ? ও কিভাবে এত কিছু ? আমি কিছুই জানতে পারলাম না ? আমার এতটুকু সাহায্য ছাড়াই নিজের একটি এত সুন্দর বুটিক চালাচ্ছে সুমনা ? এত ভালো হাতের কাজ সুমনার ? আমি এই মেয়েটাকে এত অবহেলা করেছি ? কি করে যে ওর সামনে

দাঁড়াব ? আমার এতদিনের চেনা সুমনাকে কেন অপরাজিতা বুটিকের ম্যাডাম বলে ভাবতে পারছিনা ? ভাবতে ভাবতেই পেছন থেকে সুমনা বলল , “সরি ফর কিপিং ইউ ওয়েটিং । আই ওয়াজ কয়াইট বিজি অ্যাকচুয়ালি । ওয়েল কাম টু মাই বুটিক অপরাজিতা ।”কথা বলতে বলতে সুমনা ওর চেয়ারে এসে বসে । সামনে বসা মানুষটিকে দেখে ঘাবড়ে যায় সুমনা ।

একি আপনি ?

হ্যাঁ কেন ? আমার বাড়ীতে আমি আসতে পারি না ?

হ্যাঁ অবশ্যই পারেন । কিন্তু মিথ্যে নাম দিয়ে ?

তুমিও তো তোমার নামটা গোপন করেছ ।

না । ওটা আমার বুটিকের নাম ।

আর ওটা আমার ফেসবুকে দেওয়া নাম ।

দুটো কখনই এক না ।

হ্যাঁ মানছি । আচ্ছা সুমনা তুমিই অপরাজিতা ? তুমিই এই বুটিকের মালিক ?

কেন হতে পারিনা ?

না অবশ্যই পার । আমি জাস্ট ভাবতে পারছি না এত সুন্দর করে সেজে তুমি এই চেয়ারে বসে বুটিক চালাও ।

কি ভাবতে পারছেন না ? একটা গেঁয়ো মেয়ে কি করে এতটা পপুলার হয়ে গেল ? নাকি একটা বাজে দেখতে মেয়ে কি করে এরকম একটা চেয়ারে বসল ? যদিও ফ্ল্যাটটা আপনার… কি হল কি দেখছেন অমন করে ? এতটা আবাক হবার কি আছে ?

না ভাবছি এত সুন্দর তুমি ? কোথায় লুকিয়ে রেখেছিলে নিজেকে ?

আমি কোথাও লুকিয়ে রাখিনি । আপনারই দেখার চোখ ছিল না।

হবে হয়তো । পারবে ? পারবে সুমনা আমায় ক্ষমা করতে ? ফিরে আসবে তুমি আমার কাছে ? আমি তোমার কাজে বাধা দেব না বিশ্বাস কর । শুধু যে সন্মানটা তোমায় এতোদিন দেইনি আজ তা তোমায় দিতে চাই। সকলের সামনে চিৎকার করে বলতে চাই ‘অপরাজিতা বুটিক’-এর ম্যাডাম আমার স্ত্রী। সুমনা তুমি দেখিয়ে দিলে, সত্যি তুমি ‘অপরাজিতা’।


———সমাপ্ত———

ফেসবুক অ্যাকাউন্ট দিয়ে মন্তব্য করুন


বর্ণালি বসাক বোস

বর্ণালি বসাক বোস একজন পুরপুরি গৃহবধূ । রাষ্ট্র বিজ্ঞানে মাষ্টার ডিগ্রি করেছেন বর্ধমান ইউনিভার্সিটি থেকে । ছাত্রজীবন থেকেই লিখতে ভালোবাসেন । স্বামীর উতসাহে, ছেলের উদ্দীপনায় ও ভাগ্নির আব্দারে আবার লেখার জীবনে ফিরে আশা । সংসারের কাজের ফাঁকে গান আর লেখা তার সঙ্গী । সমাজের চারিপাশের বিভিন্ন রকম চরিত্র যেটা তার মনকে নাড়া দেয়, তাই নিয়েই তিনি লিখতে ভালোবাসেন । এসবের পাশাপাশি সংসারের সবার প্রতি দায়িত্ব পালন করার চেষ্টা করেন । এতদিন স্বামীই ছিলেন তার লেখার একমাত্র পাঠক তারই অনুপ্রেরণায় আজ এই লেখা সকলের কাছে পৌঁছে দেবার জন্য প্রকাশিত । বাবা, মা এবং শাশুড়ি মায়ের আশীর্বাদকে ও ছোট বোনের ভালোবাসাকে জীবনের পাথেয় করে চলতে চান ।

0 Comments

মন্তব্য করুন

Avatar placeholder

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।