লোকাল

জয়দীপ চট্টোপাধ্যায় on

“একটা পাঁচ টাকা, একটা পাঁচ টাকা… সেট-এ পাঁচ টা, সেট-এ পাঁচ টা… মাত্র কুড়ি টাকা… কুড়ি টাকা, কুড়ি টাকা, কুড়ি টাকা!” আওয়াজটা আসতে আসতে কাছে আসছে। ভিড় কম না, কোনও রকমে লোকজন হাতল ধরে ঝুলছে আর ট্রেনের তালে তালে দুলছে… ঘটাং ঘটাং, ঘটাং ঘটাং। ভিড়ের মধ্যে এই পাঁচ টাকা, কুড়ি টাকার বিক্রেতা বা পণ্য দেখার উপায় নেই। কারও দেখার ইচ্ছে আছে বলেও মনে হয় না। তবে সেই কথাগুলো এগিয়ে আসছে… “এই যে, এই যে… বলবেন বড়দা… আর মাত্র চার সেট আছে… কুড়ি টাকা, কুড়ি টাকা, কুড়ি টাকা!” যারা নিয়মিত যাত্রী, তাঁদের বুঝতে অসুবিধে হবে না… সেই ছেলেটা আসছে… বল পয়েন্ট পেন নিয়ে… ঠিক বাজারে চলতি একটা নামি কোম্পানীর পেনের মত দেখতে, কিন্তু প্যাকেটে লেখা নামটা অন্য। এক কালে দশটাকা ছিল, এখন দেখতে দেখতে কুড়ি টাকা হয়ে গেছে। গলার আওয়াজটা কাছাকাছি আসতে একজন বয়স্ক নিত্যযাত্রী একটু জোরেই স্বগতোক্তী করলেন “ভিড়ে পা ফেলার জায়গা নেই… তোর পেন কে দেখবে বাপ?” সঙ্গে সঙ্গে কামড়ার এক প্রান্ত থেকে আর একটা স্বর ভেসে এলো, “মাত্র কুড়ি টাকা… হুহ! লটে এক একটা দু’টাকায় পাওয়া যায় বুঝলেন… দু’টাকায়।  কিস্‌সু সস্তা নয়, হেব্বি লাভ তুলছে!”  জানলার দিক থেকে কেউ ঘাড় ঘুরিয়ে বললেন  “কীইইই করবেএএএ… এদেরও তো করে খেতে হবে… কীইইই করবেএএএ?”  “কুড়ি টাকা, কুড়ি টাকা, কুড়ি টাকা… আর বেশি বাকি নেই… সামনের স্টেশনেই নেমে যাব।” ভিড়ের মধ্যে থেকে বেরিয়ে থাকা  দু’প্যাকেট পেন… একটা কালো কালি, একটা নীল কালি… ভিড়ের মধ্যে দিয়েই পাশ কাটিয়ে কাটিয়ে কামড়া পার হয়ে চলে গেল। এই পাশ কাটিয়ে যাওয়ার ফাঁকে হয়ত কারও পায়ের ওপর কারও পা উঠেছে। হাতল ধরে ঝুলতে থাকা ভিড়ের মধ্যে থেকে ভেসে এলো “উফ্‌! ডিজ্‌গাস্টিং!” জানলার পাশে বসে থাকা সেই ভদ্রলোক একই ভাবে টেনে টেনে বললেন “কীইইইই করবেএএএ…”
…                              …                             …                              …
লোকাল ট্রেনের কামড়া, সকালবেলা রোজ একই রকম থাকে। ব্যস্ততার রকমফের হয় না, ভিড়ের নাম হয় না, তবে রোজ একসাথে যেতে যেতে নিত্যযাত্রীদের মধ্যে কেউ কেউ মুখ চেনা হয় যায়।
– “উহ!… এরা মানুষ?”
– “কেন? কি হয়েছে?”
– “আরে দেখুন দেখুন… খবরটা পড়ুন… চলন্ত ট্রেন থেকে ধাক্কা খেয়ে নিহত কিশোর…”
– “কই দেখি দেখি… কি সাঙ্ঘাতিক কাণ্ড অ্যাঁ!”
– “কেস্‌টা ভাল করে পড়ুন… লেডিজ্‌ কম্পার্টমেণ্ট থেকে ধাক্কা খেয়ে… রানিং ট্রেনে লেডিজ্‌ কম্পার্টমেণ্টে উঠেছিল, তারপর লেডিজ্‌ প্যাসেঞ্জাররা ঝামেলা করে… তখনই কেউ ধাক্কা দিয়েছে।”
– “হুম… মর্মান্তিক।”
– “মেয়েদের কামড়ায় উঠেছে, তো পরের স্টেশনে নামিয়ে দে… বেয়াদপি করলে দে ঘা কতক… তা বলে এমন ধাক্কা দিয়ে জানে মেরে দিবি!”
– “আর চার পাশে যা চলছে… সবাই তেতে আছে বুইলেন? সবাই তেতে আছে!…”
– “অ্যাক্সিডেণ্ট কি আর বলে আসে?”
– “সেই… নিয়তি, নিয়তি… সবই নিয়তি… মানুষের জীবনের কী দাম? এই আছে, এই নেই!”
দৈনিক সংবাদ পত্রের কতগুলো পাতা বেশ কিছু হাত বদল করল, যারা দাঁড়িয়ে ছিলেন তাঁরাও কেউ আড় চোখে, কেউ সামনের দিকে সামান্য ঝুঁকে পড়ে খবরের পাতাটা দেখার চেষ্টা করলেন… সবাই যে সেই খবরটাই দেখলেন এমনও না… পাতা উলটে
কাশ্মীর, বি সি সি আই, দেব, শুভশ্রী… যার যা চোখে পড়ে। তবে ঘটনাটা যে সত্যিই হুজ্জুতি, তা এক কথায় অনেকেই মেনে নিলেন। আর, আপিস যাওয়ার সময় এই সব হুজ্জুতি হ’লে কেলেঙ্কারী কাণ্ড। ঘটনাটা এই ট্রেনে ঘটেনি… না আপে, না ডাউনে… অন্য কোনও লোকাল। অল্পক্ষণের জন্য হলেও, মোটামুটি সকলকেই এই রকম সামাজিক অবক্ষয়ের ঘটানায় দুশ্চিন্তা প্রকাশ করলেন। তবে প্রায় কেউই খেয়াল করলেন না, নিয়মিত লোকাল ট্রেনে বল পয়েণ্ট পেন ফেরি করা সেই ছেলেটার “কুড়ি টাকা, কুড়ি টাকা, কুড়ি টাকা” আজ আর শোনা গেল না।
…                              …                             …                               …
শহরের বেশ জনবহুল অঞ্চল, বড় রাস্তা ছেড়ে ছোট রাস্তা, সরু রাস্তা, অলিগলি, তস্যগলি… সব জায়গায় ব্যস্ততা চোখে পড়ে। উঁচু গলায় কথা, সাইকেলের বেল, রিক্‌শার ভেঁপু … যাকে বলে একেবারে ‘ঘিঞ্জি’ এরিয়া। মাটির টব বোঝাই সাইকেল ভ্যান, অ্যালুমিনিয়ামের বড় হাঁড়ি সাইকেলের কেরিয়ারে বসিয়ে ‘মাছ মাছ’ হাঁকা লোকটা আর গলির মোড়ে কলতলার সামনে লম্বা লাইনটা পেরিয়ে গেলেই যে সরু গুলি, সেখানে, একটা জটলা দেখা যায়। সব পাশাপাশি দরজা, ভাড়াটে ঘর। নোনা ধরা রঙ চটা দেওয়াল, ফিকে সবুজ ক’টা দরজা আর ঝুল পড়া খাঁচার মত জানলা। এক কালে কোনও পলিটিকাল পার্টি চুনকাম করে ওমুক চিহ্নে ছাপ দিন লিখে গেছিল এখানে ওখানে… তাও হেজে গেছে রোদে-জলে। রংচটা ফিকে সবুজ দরজা গুলোর দু’তিনটে তখন আধ-খোলা, আর একটা খোলা দরজার সামনে ভিড়। গত তিনদিনে দু’বেলা পুলিশ এনকোয়ারি করে গেছে। ও বাড়ির ছেলেটা ট্রেনে কাটা পড়েছিল, সে খবর কাগজেও বেরিয়েছে… পুলিশ পোস্টমর্টেমের জন্য বডি আটকে রেখেছিল… আজ দিয়ে গেছে। নীল পলিথিন শিটে মোড়া, ওপরে সাদা চাদর চাপা দেওয়া… মুখ দেখার উপায় নেই। প্লাস্টিকটা সরালে হয়ত এই ভিড়টা থাকবে না আর। ছেলেটার মা’কে কেবল মুখটা দেখানো হয়েছিল। পাশের বাড়ির দু’তিনজন মহিলা তাঁকে সামলাচ্ছেন, ডাক্তার ডাকা হয়েছে। দরজার একটা পাল্লা ধরে যে মেয়েটা ফ্যাকাশে মুখ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, সে ছেলেটার দিদি। হালকা বেগুনি রঙের ম্যাক্সিটার রঙ আসলে কী ছিল তা বলা মুশকিল, বুকের কাছে গামছাটা ওড়নার মত জড়ানো। চোখের তলায় কালি, আর গালে চোখের জল শুকিয়ে যাওয়া দাগ। দরজার পাল্লাটা আঁকরে এক ভাবে নীল প্লাস্টিকে মোড়া বডিটার দিকে তাকিয়ে আছে। চার বছর আগে তার বাবার দেহটাও পাড়ার লোকেরা নিয়ে গেছিল, তখন ভাই ছিল তাদের সঙ্গে। পাড়ার লোকজনই যা ব্যবস্থা করার করুক।
– “ঠিক কী হয়েছিল বল্‌ তো? সত্যিই অ্যাক্সিডেণ্ট? নাকি অন্য কেস আছে?”
– “কি জানি মামু… সব বলছে তো ট্রেন থেকে ফেলে দিয়েছে… কি একটা বাওয়ালি হয়েছিল… পেপারেও কি সব লিখেছে…”
– “আমারও কেমন জণ্ডিস্‌ লাগছে…”
– “হুম, করত তো ট্রেনে হকারি, টাউটার বলে তো শুনিনি… তাও এব্‌লা-ওব্‌লা মামারা খোঁজ নিতে আসছে!”
– “ফ্যামিলিতে তো ও একাই কামাতো… ট্রেনে অ্যাক্সিডেণ্ট, কিছু টাকা-পয়সা পাবে না?”
– “কি জানি, ট্রেন অ্যাকসিডেন্ট করলে হয়তো পেতো… এই কেসে পায় না বোধহয়…”
– “হ্যাঁ রে, বডি নিয়ে যাওয়া, পোড়ানো… এসবের খচ্চা দিতে পারবে তো? নাকি আমাদেরই পকেট কেটে… “
– “ওহ্‌, সে সব দেখা যাবে… আগে এ মাল এখান থেকে সরানোর ব্যবস্থা কর… এমনিতেই হেজে গেছে।”
– “কোনটায় নিয়ে যাব? কাছের টায়?… টেম্পু ডাকি? নাকি সাইকেল ভ্যানেই…”
তিন দিন ধরে মর্গে থাকা বডি বেশিক্ষণ রাস্তার মাঝখানে রাখা যায় না… ক্ষতিপূরণ, ফ্যামিলিটার কী হবে, এই  সব চিন্তা মাথায় খোঁচা দিলেও সকলে ব্যস্ত হয়ে উঠল বডির একটা গতি করতে। কারও জানার কথা নয়, এরই মধ্যে এক জন কর্তা-ব্যক্তি চুপি চুপি ছেলেটার দিদিকে কথা দিয়েছেন, পঞ্চাশ হাজার টাকার সাহায্য আদায় করার ব্যবস্থা হ’তে পারে। তবে তা বার করতে যা কাঠ-খর পুরবে, তার জন্য কোনওভাবে টেন পারসেণ্ট অ্যাডভান্স তাদের ব্যবস্থা করে দিতে হবে।
…                              …                          …                           …
ব্যস্ত স্টেশন চত্বর। সময়ের সাথে ভিড় বাড়ে-কমে, তবে ফাঁকা থাকে না। যে অঞ্চলের স্টেশন, তার নাম আছে, বদনামও কম নয়। ডাউনের ট্রেন আসতে দেরি আছে, তার আগে বিকেলের ভিড়টা জমে উঠছে। প্ল্যাটফর্মের শেষদিকে ওভার ব্রিজের নীচে একটা থামে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে একটি মেয়ে। গাঢ় খয়েরি রঙের শাড়ি, সেইরকম রঙেরই হাত কাটা ব্লাউজ্‌। গায়ের রঙটা যে চাপা, তা চড়া মেকআপে ঢাকার চেষ্টা। মেয়েটি কেন এই ভাবে এই সময় একা থামে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে, তা অভিজ্ঞ চোখের বুঝতে অসুবিধে হওয়ার কথা নয়। এরকম অনেককেই মাঝে মাঝে স্টেশনের এদিক ওদিক দেখা যায়… তারাও অপেক্ষা করে এই ভাবে। মেয়েটি কিছুক্ষণ আগে অবধি স্টেশনের লোকজনের মাঝে হাঁটাচলা করছিল, একরকম হতাশ হয়েই এখন ওভার ব্রিজের সিঁড়ির কাছে এসে দাঁড়িয়েছে। মুখে আলগা লাবন্য থাকলেও, শরীরটা রিপু গাঁথা টোপ নয় মোটেই। চোখের ভাবও কেমন অন্যমনস্ক। ব্রিজের কাছাকাছি সিটে বসা একটা লোক বেশ কিছুক্ষণ মেয়েটিকে আড়চোখে দেখছিল। কিছুক্ষণ পর তার দিকে সোজাসুজি তাকিয়ে রইল… মেয়েটিও লক্ষ্য করেছে এইবার। সেও মনে মনে এটাই চেয়েছিল। অর্থপূর্ণ হাসি আর চোখের ইশারা… লোকটা গুট্‌খার থুতু ফেলে সোজা মেয়েটির কাছে গিয়ে চাপা স্বরে বলল “কত?” মুখে এতক্ষণ সস্তা হাসি থাকলেও, সরাসরি এই প্রশ্নে কেমন ভ্যাবাচাকা খেয়ে গেলো মেয়েটি… থতমত খেয়ে ফস্‌ করে বলে বসল “আড়াই হাজার”। লোকটা চমকে উঠে রীতিমত ধমকের সুরে বলল “কি!… কত বললি?” মেয়েটি আচমকা থতমত খেয়ে বলল “হাজার… হাজার!”  লোকটা আবার গলা নামিয়ে বলল “লাইনে নতুন নাকি? এক একরকম রেট হাঁকছিস?” মেয়েটি চারিদিকের কৌতূহলী চোখগুলো একবার দেখে নিয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বলল “এর থেকে কমে…” তার কথা শেষ হওয়ার আগেই লোকটা কেমন জোরের সাথে বলল “পাঁচ’শ… তার এক টাকাও বেশি নয়!” তারপর মেয়েটির হাত ধরে টেনে তাকে নিয়ে ব্রিজের সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠে গেল। দক্ষতার অভাবে, ক্ষেত্রবিশেষে শিকারী নিজেই শিকার হয়ে যায়। বিকেল গড়িয়ে সন্ধে হয়ে আসছে, এখনই ট্রেন এসে পড়বে। লোকের ভিড় বাড়ছে স্টেশনে… সেই ভিড়ে দু’জনকে খুঁজে পাওয়া মুশকিল।
– “দেখলেন… কেস্‌টা দেখলেন!”
– “কি কেস্‌?”
– “ওই যে, কেমন ওপেন দরদাম করে নিয়ে চলে গেল!”
– “ওহ্‌… হ্যাঁ।”
– “হ্যাঁ মানে? এইরকম রাস্তাঘাটে, যেখানে সেখানে মাগিদের ধান্দা চলবে?”
– “কীইইই করবেএএএ ? দিন কাল যা পড়েছে, এদেরও তো করে খেতে হবে… কীইইই করবেএএএ?”

ফেসবুক অ্যাকাউন্ট দিয়ে মন্তব্য করুন


জয়দীপ চট্টোপাধ্যায়

বর্তমানে হায়দ্রাবাদ নিবাসী  হলেও, জয়দীপ চট্টোপাধ্যায়ের শৈশব থেকে যৌবন সবটাই কলকাতার শহরতলী জুড়ে। জন্ম ২০শে আগস্ট, ১৯৮৬। বায়োটেকনলজিতে বি টেক শেষ করেই কর্মসূত্রে ২০০৮ সালে কলকাতা ছেড়ে বেঙ্গালুরু চলে যান, এবং তারপর হায়দ্রাবাদ। প্রায় দশ বছর হয়ে গেল, কলকাতার বাইরেই জীবন। বাংলা সাহিত্যের প্রতি নিবিড় ভালবাসা থেকেই একসময় লেখার ইচ্ছে জন্মায়। প্রায় সাত-আট বছর উনি একাধিক আন্তর্জাল পত্রিকা এবং মুদ্রিত পত্রিকায় লিখে চলেছেন গল্প, প্রবন্ধ, গদ্য এবং কবিতা। ২০১৩ সালে 'আদরের নৌকা' প্রকাশনা থেকে প্রকাশ পায় ওনার প্রথম গল্প সংকলন 'প্রতিবিম্ব'। এর পর ২০১৫ সালে  'হাওয়াকল' প্রকশনা থেকে প্রকাশ পায় ওনার প্রথম উপন্যাস 'কৃষ্ণঘন যাম'। ২০১৭ সালে 'হাওয়াকল' প্রকশনা  থেকেই প্রকাশিত হয় প্রথম অণুগল্প সংকলন 'টিনিটাস'। ২০১৮ সালের কলকাতা বইমেলায় 'তবুও প্রয়াস' প্রকাশনা থেকে জয়দীপের প্রথম গদ্য সংকলন 'হৃদয়পুর কত দূর?' প্রকাশ পায়। এই লেখার মধ্যেই তিনি আনন্দ খুঁজে পান। আর প্রতিযোগিতামূলক এই জীবনে এই লেখাই তাঁর কাছে একটা রিফিউজ। লেখার প্রতি ভালবাসার টানেই উনি লিখতে চান... যতদিন পারেন।

0 Comments

মন্তব্য করুন

Avatar placeholder

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।