পারাবার

প্রথমে বারান্দা থেকে পা ঝুলিয়ে উঠোনে লাঠি ভর দিলেন, তারপর মাটিতে ডানপায়ের বুড়ো আঙুল ছুঁইয়ে, সামনে ঝুঁকে খুব আস্তে নামলেন। তবু কষ্ট হল। আজকাল অল্পতেই হাঁপিয়ে পড়েন। কোমর নুয়ে গেছে বয়সের ভারে। সোজা হয়ে দাঁড়াতে কিংবা চিৎ হয়ে শুতে পারেন না। লাঠি আর কিছু কবিরাজি ওষুধের দৌলতে জীবনটা কোনও রকমে টেনে হিঁচড়ে চলছে। তবুও তো চলছে। অনেকে এই পর্যন্তও পৌঁছতে পারে না। নিজেকে ভাগ্যবান মনে হয় চন্দ্রমাধবের। আকাশের দিকে মুখ তুলে বুক ভরে শ্বাস নেন। সেই অবকাশে আকাশটা চোখে পড়ে। পরিষ্কার ঝকঝকে আকাশ, উজ্জ্বল রোদ। দু’টো পাখি চক্কর দিচ্ছে। চিল না শকুন – ঠিক ঠাওর করতে পারেন না। অমঙ্গল! ঘোর অমঙ্গল! মনে মনে ভাবেন তিনি।
ঠাণ্ডার ঋতু। আজন্ম শ্লেষ্মার রোগী। ইদানিং হাঁপানিতে এসে দাঁড়িয়েছে। ঘাড় উঁচু করে আকাশের দিকে তাকাতেই কন্ঠনালীতে টান পড়ে। কাশি পায়। কাশতে কাশতে দম আটকে আসার জোগাড়। বড়ো বউমা আনন্দা রান্নাঘরে ছিল, দুপুরের রান্না করছিল। চন্দ্রমাধবের গলা পেয়ে তড়িঘড়ি বাইরে এলো। উঠোনের মাঝখানে দাঁড়িয়ে এইভাবে কাশতে দেখে জিজ্ঞাসা করল, বাথরুম যাবেন বাবা?
— সুমিতের বাবাকে একটু দেখতে যাব।
বড়ো একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে উত্তর দিলেন চন্দ্রমাধব। যেন বুকের গভীর থেকে উঠে এলো শব্দগুলো। খুব একচোট আঘাত পেয়েছেন মানুষটা। পাওয়ারই কথা, আজকের সম্পর্ক তো নয়। সুমিতের বাবা অর্থাৎ বৈদ্যনাথ তাঁর ছোটোবেলার বন্ধু। সেই পাঠশালায় পড়ার সময় থেকে।
আনন্দা প্রায় আঁতকে ওঠে, সে কী! না না, আপনি যাবেন না। দুর্বল শরীর, কোথায় মাথা ঘুরে পড়ে যাবেন…
চন্দ্রমাধব থামিয়ে দিয়ে বলেন, এইটুকুন তো পথ, মাঝে মাত্র দু’টো বাড়ি, বেশ যেতে পারব’খন।এ নিয়ে তুমি ভেবো না।
আনন্দার কথা অগ্রাহ্য করে, টুকটুক লাঠিতে ভর দিয়ে হাঁটতে থাকেন চন্দ্রমাধব। বন্ধুকে দেখার যত না আগ্রহ, তার চেয়েও বেশি আগ্রহ মানুষের অন্তিমকালীন দৃশ্য আরও একবার স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করা। একেবারে শেষপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছেন তিনি। রামেশ্বর ঘোষ, লক্ষ্মীকান্তদা, ভুবন ঠাকুর—সবাই চলে গেল একে একে। বাকি ছিলেন তিনি আর বৈদ্যনাথ। তা হলেই একটি জেনারেশন সম্পূর্ণ। তো, বেদ্যনাথও আজ পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করল। বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিল দীর্ঘদিন। শেষদিকে বিছানা ছেড়ে উঠতে পারত না। শরীর ফুলে ঢোল। কী কষ্টটাই না পেয়েছে। যদি তিনিও… ভাবতে ভাবতেই কেঁপে উঠলেন চন্দ্রমাধব।
বাড়িময় ব্যস্ততা। হাঁক-ডাক, অতিথি আপ্যায়ন, কুশল বিনিময়। যেন মচ্ছব লেগেছে। খবর পেয়ে ছেলেরা এসেছে যে যার কর্মক্ষেত্র থেকে। সকলে ধেঅপদুরস্ত বাঙালি সাহেব। উঠোনের এক কোনায়, তুলসি মণ্ডপের সামনে বৈদ্যনাথের মৃতদেহ। কোথায় দাহ করলে পরিবারের ঐতিহ্য অক্ষুণ্ণ থাকবে, কেমন কী খরচ হবে, কে কত দেবে – এসব বিষয়ে আলোচনা করছিল ছেলেরা। চোদ্দো-পনেরো বছর বয়সি দু’টো নাতি শ্মশানে যাবে বলে মা’র কাছে বায়না ধরেছে। প্রতিবেশী ছোকরার দল কোমরে গামছা বেঁধে বারবার করে খুব চক্কর মারছে। তাদের মধ্যে একজন অন্যজনেক দু’হাতের মুদ্রায় ইশারা করল, হবে তো? হ’লে থাকব।
— সব ব্যবস্থা হবে। উত্তরে ছেলেটির মুখ রহস্যময় হাসিতে উজ্জ্বল।
চন্দ্রমাধব সবকিছু লক্ষ্য করছিলেন। ভেতরে ভয় আর দুঃখের মিশ্র প্রতিক্রিয়া।একটা কষ্ট বুকের মধ্যে চিনচিন করে ওঠে। উপহাসের মতো মনে হচ্ছে সবকিছু। যত দেখছেন তত দুর্বল হয়ে পড়ছেন। ভারসাম্য রাখতে তত বেশি লাঠির উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন।
ছেলেদু’টির মধ্যে একজন এগিয়ে আসে চন্দ্রমাধবের কাছে। খুব বেশি হলে বিশ-বাইশ বছর বয়স। চন্দ্রমাধবের গলা জড়িয়ে চটুল রসিকতায় জিজ্ঞাসা করে, আর কতদিন জ্বালাবে গুরু? এবার তোমার পালা, মানে মানে কেটে পড়ো তো। আমরা একটু মস্তি করি।
কথাগুলো বলে ছেলেটা আর দাঁড়ায় না, নিজের ধান্দায় চলে যায়।
চন্দ্রমাধবের বুকের মধ্যে ধক্ করে ওঠে। ‘এবার তোমার পালা’ – এই নিষ্ঠুর সত্যটা এখন শুধু দুশ্চিন্তা নয়, আশঙ্কাও বটে। তার মনের কথা সবাই কী করে যেন জেনে গেছে। শুধু ওই ছেলেটা কেন, তামাম দুনিয়ার মানুষ তার দিকে কাঠগড়ার আসামির মতো হাত উঁচিয়ে যেন কৈফিয়ত চাইছে, আর কতদিন জ্বালাবে? এবার তোমার পালা। মানে মানে কেটে পড়ো…
তার ছেলে, ছেলের বউ, নাতি নাতনিরাও কি এমনটা ভাবে! হৃৎস্পন্দন অস্বাভাবিক হতে শুরু করেছে তার। যেন বুলডোজার চলছে বুকের মধ্যে। ফুসফুস, ধমনী, শিরা-উপশিরা, হাড়-পাঁজর সব ভেঙে গুঁড়িয়ে পিষে দেবে।বৈদ্যনাথের দিকে চোখ পড়ে। মাথা বাদ দিয়ে সমস্ত শরীর সাদা কাপড়ে ঢাকা। গলায় মোটা রজনীগন্ধার মালা, কপালে চন্দন। সবকিছু ছাপিয়ে বৈদ্যনাথের যন্ত্রণাবিকৃত মুখ। শান্তিপুরী তাঁতের মতো সেখানে দুঃখ-যন্ত্রণার নিখুঁত কারুকার্য। কে একজন, বোধহয় বৈদ্যনাথের বড়ো মেয়ে, চন্দ্রমাধব ঠিক চিনতে পারলেন না, মৃতদেহ ছুঁয়ে বসে আছে। চন্দ্রমাধব মুখ ঘুরিয়ে নিলেন।
ছ’মাস আগে ভুবন ঠাকুর যখন স্ট্রোকে মারা যায়, ভয়টা তখন থেকেইভ হঠাৎই আবিষ্কার করেন, শেষপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছেন তিনি।তখন থেকেই একটা ত্রাস তাড়া করে বেড়াচ্ছে তাকে। ঠিকমতো খান না, হাসেন না, এমনকি ভালো করে কারও সঙ্গে কথা পযর্যন্ত বলেন না। ঢং ঢং করে একটা সতর্কঘন্টা তার কনের কাছে অহরহ বেজে চলেছে – এবার তোমার পালা! এবার তোমার পালা!
দয়ারাম শাস্ত্রীর শরণাপন্ন হয়েছিলেন চন্দ্রমাধব। গোপনে পঞ্চাশ টাকা ভিজিট দিয়ে নিজের ভাগ্য জেনেছিলেন। প্রিয় কারো মত্যুতে প্রচণ্ড মানসিক আঘাত। তখন একটা মৃত্যুযোগ…
ফাঁড়া কাটাতে সঞ্চিত টাকা থেকে পাঁচশো টাকা খরচ করেন তাবিজ নিয়েছিলেন। তবু কেন যেন সবসময় ভরসা রাখতে পারেন না। একটা সন্দেহের কাঁটা খচখচ করে। এখন যেন প্রায় মরিয়া। নাগাড়ে খোঁচাচ্ছে। রক্তাক্ত করছে। প্রিয় বন্ধুর মৃত্যু। বন্ধু বলতে একমাত্র জীবিত ছিল বৈদ্যনাথ। তবে কি এবার … মৃত্যুচিন্তা অক্টোপাসের মতো গ্রাস করে। চোখের তারায় ধোঁয়াশা, কালো কালো মেঘ জমেছে। আঙুলের ডগায় শীত। দাঁতে দাঁত লাগছে ঠকঠক, হাঁটুতে হাঁটু। বুকের বাঁদিকে চিনচিনে একটা ব্যথা। চন্দ্রমাধব কাঁপছেন।দাঁড়াতে পারছেন না। টলছেন। কোনওরকমে লাঠি ভর দিয়ে রাস্তা পর্যন্ত এসে আর এগোতে পারলেন না। রাস্তার উপরেই বসে পড়লেন।
সকাল-সন্ধ্যা ‘হরি দিন তো গেলো’ বলে যতই সুর ভাজুন, মৃত্যুকে তিনি ভয় পান। ঈশ্বরের প্রতি এত ভক্তি, এত নিষ্ঠা সব সুস্থ এক দীর্ঘায়ু কামনায়। মাঝে মাঝে ভাবেন, কী করলেন জীবনে! কী পেলেন? আবার যদি প্রথম থেকে শুরু করতে পারতেন! পৃথিবীটা আজকাল খুব সন্দির মানে হয়। এত রং, এত রস, এত প্রেম ভালোবাস, সব ফেলে চলে যেতে হবে!
দূরে আসশেওড়ার ডালে দু’টো বন ফড়িং। সে দিকে তাকিয়ে ছোটোবেলার কথা মনে পড়ে। কত দিন ফড়িংযের ডানা ছিঁড়ে দিয়েছেন নিছক আনন্দ পাওয়ার জন্য। চোখের সামনে ছটফট করতে করতে মারা গেছে কত ফড়িং। সে সব কথা মনে পড়তে কষ্টটা আরও বাড়ে, বাড়ে বুকের ব্যথাটা। মনে হয় ফড়িংদু’টো তার দিকে তাকিয়ে হাসছে। তাকে অসহায় পেয়ে আজ প্রতিশোধ নেবে। জীবনে যত অন্যায়, যত পাপ করেছেন, সব আজ বুমেরাং হয়ে ফিরে আসছে তাকে বিদ্ধ করার জন্য। এবার নির্ঘাৎ মৃত্যু।
বুকের যন্ত্রণা ততক্ষণে ছড়িয়ে পড়েছে সমস্ত শরীরে। অসাড় হয়ে পড়েন তিনি।
দশ বছরের নাতি লালটু এসে ডাকে, ও দাদু, বাড়ি যাবা না?
চন্দ্রমাধব বহু কষ্টে চোখ খোলেন। নষ্ট ডিমের মতো খোলা চোখ।
চন্দ্রমাধবের অস্বাভাবিক চেহারা দেখে লালটু ভয় পায়। ছুটে পালায় মায়ের কাছে, ও মা! মা! দ্যাখো ন,. দাদু কিরম করচে!
দুই
ডাক্তার এল। দেখল। জবাব দিল।
খবর পেয়ে ছেলেরা ফিরে এল কর্মেক্ষেত্র থেকে। অন্যান্য আত্মীয় স্বজন এল। চন্দ্রমাধবের মুখের উপর ঝুঁকে ছিল সবাই। মৃত্যু আগে যদি কিছু বলে যান।
চন্দ্রমাধব অসাড়। চোখের মণি স্থির। সবকিছু বুঝতে পারলেও উত্তর দেওয়ার ক্ষমতা নেই। যন্ত্রণায় অস্পষ্ট কাতরে ওঠেন, মা‑
‘মা’ ডাকতেই মা-কে মনে পড়ে তার। চোখ বোজেন। মারন কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছেন। জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে। মার কোমর জড়িয়ে কোলের মধ্যে মুখ গুঁজে ছটফট করছে, আমি মরে যাব, আমি মরে যাব…
— ছিঃ, বলতে নেই। চন্দ্রমাধবের চুলে আঙুল ঢুকিয়ে বিলি কাটেন মা, আমি আছি না…
মা বলতেন, আমরা যখন যন্ত্রণায় খুব কষ্ট পাই, সে মানসিক হোক বা শারীরিক, তখন কোনও সুখচিন্তা অথবা সুখস্মৃতি রোমন্থন করে যন্ত্রণার মুখ্য কা্রণটা ভোলার চেষ্টা করতে হয়, তাতে কষ্ট অনেক কমে।
মার উপদেশ পালন করে দেখেছেন চন্দ্রমাধব, দৈবশক্তির মতো কাজ করে। তবে পালন করা খুব কঠিন।
চন্দ্রমাধব চোখ খোলেন।
— বাবা, কিছু বলবেন?
— কিছু খেতে ইচ্ছে করছে আপনার?
— কারও কাছে কিছু পাবেন, টাকাপয়সা?
মুখের উপর ঝুঁকে পড়েছে ছেলে মেয়ে বউমা’রা…
চন্দ্রমাধব চোখ বোজেন্ জীবনের আনন্দঘন মুহূর্তগুলো মনে করার চেষ্টা করেন। নাতির জন্মদিনে উত্তরসূরীর উজ্জ্বল ভবিষ্যত কামনা থেকে শুরু করে প্রথম সন্তানের জন্মসৃষ্টির আনন্দ, ফুলশয্যার রাতে গোপন রহস্য উন্মোচনের উন্মাদনা… কিছুতেই মনঃসংযোগ করতে পারেন না। বারবার তাল কেটে যায়। সবকিছু ছাপিয়ে ওঠে ভয়, যন্ত্রণা, মৃত্যুচিন্তা। জোর করে মনঃসংযোগ করার চেষ্টায় আরও পিছনে সরে যেতে কৈশোরের সঙ্গী বাঁড়ুজ্যেদের দস্যি মেয়ে ঝুমুরকে মনে পড়ে। রক্তে ঝিলিক খেলে যায় হঠাৎ। ঝুমুর ঝুমুর ঝুমুর… মুর্হূতের জাদুমন্ত্রে সমস্ত ভয়-যন্ত্রণা দুঃখ কোথায় উবে যায়। প্রথম প্রেমের রোমাঞ্চে মন যেন হঠাৎই চঞ্চল হয়ে ওঠে। বাব্বা, কী দুষ্টুই না ছিল!
বহুদিন ঝুমুরকে দেখেননি চন্দ্রমাধব। এখন কোথায় সে? কেমন আছে? বেঁচে আছে তো?…না, আবার মৃত্যুচিন্তা! কিছুতেই আর মৃত্যুচিন্তা করবেন না। মৃত্যুর কাছ বশ্যতা স্বীকার করবেন না কিছুতেই।
চন্দ্রমাধবের মনে পড়ে, একদিন নদীর ঘাটে দাঁড়িয়ে আছেন। ঝুমুরের প্রতীক্ষায়। প্রিতদিন ঝুমুরের সঙ্গে স্নান করেন। চন্দ্রমাধব সাঁতার জানেন না। অন্যদিকে ঝুমুর জলপরী। এতবড়ো নদী ফুসমন্তরে এ-পার ও-পার করে। চন্দ্রমাধব তাকিয়ে দেখেন আর ভাবেন, কী মজা! তিনি ঝুমুরের নাম রেখেছিলেন জলপরী।
জলপরী তখনও ঘাটে আসেনি। চন্দ্রমাধব অপেক্ষা করছেন। অনেকক্ষণ। অগত্যা কবুকজলে নামেন।
আচমকা কে যেন তার পা ধরে দিল টান। টাল সামাতে না পেরে গলাজলে। দূরে ভেসে ওঠে ঝুমুর। এমন অদ্ভূত ঘটনার জন্য মোটেই প্রস্তুত ছিলেন না চন্দ্রমাধব। হাবুডুবু খান তিনি। হাত-পা অসংলগ্ন। ডাঙায় ওটার আপ্রাণ চেষ্টা করেন। পারেন না। ঝুমুর তখন বড়ো বড়ো চোখ মেলে মজা দেখছে আর দু’হাতে মুখ ঢেকে খিলখিল সরে হাসছে। হাসলে ওকে সুন্দর দেখায়। গজদাঁতটা শিউলিফুলের মতো ঝকঝক করে। আজ আর সহ্য হচ্ছিল না। রাগ হচ্ছিল ভীষণ…
চন্দ্রমাধব হাত বাড়িয়ে করুণ আকুতি করেন, ঝুমুর আমাকে ধরো। খাবি খাচ্ছেন তিনি। সব কথা স্পষ্ট বোঝাও যাচ্ছে না।
চন্দ্রমাধবের মুখের উপর ঝুঁকে পড়ে ছেলে, আত্মীয়-স্বজন।‘ঝুমুর’ নামটা সম্পূর্ণ অপরিচিত তাদের কাছে। ওই নামে কাউকে মনে করতে পারে না। এ-ওর মুখ চাওয়া চাওয়ি করে। বড়ো ছেলে জিজ্ঞাসা করে, কী বলছ বাবা? অমন করে কাকে ডাকছ?
বর্হিজগতের কোনও শব্দই এখন আর কর্ণগোচর হচ্ছে না তার।
চন্দ্রমাধবের একমাত্র মেয়ের নাম ঝরনা। খুব আদরের মেয়ে। ছেলেরা ভাবে, ভরনার বিকৃত উচ্চারণই বোধহয় এই ঝুমুর।
— ঝরনাকে দেখবে বাবা?
চোখমুখ অস্বাভাবিক বদলে গেছে। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। থেকে থেকে খাবি খাচ্ছেন।
— ঝুমুর আমাকে বাঁচাও…
ঝুমুর হাসে, হি হি…
— ঝু-মু-র…
— হি হি…
— ঝু-মু…
চন্দ্রমাধবকে যথেষ্ট নাস্তানাবুদ হতে দেখে কোমরে হাতে রেখে হেলতে দুলতে রাজেন্দ্রাণীর মতো এগিয়ে আসে ঝুমুর। ডান হাতটা বাড়িয়ে দেয় সটান চন্দ্রমাধবের দিকে।
ঝুমুরের হাত ধরে ডাঙায় উঠে আসেন চন্দ্রমাধব।
ঝুমুর হাসতে হাসতে কলকলিয়ে ওঠে। সাঁতারে কী মজা, দেখেছ?
চন্দ্রমাধবের চোখের তারায় তখন তারাবাজি। লাল নীল সবুজ হলুদ কালো…
চন্দ্রমাধব উত্তর দেন না। অভিমানে মুখ ঘুরিয়ে নেন।
কখন বালিশের একপাশে এলিয়ে পড়ে মাথা।
2 Comments
পীযূষ কান্তি দাস · মে 29, 2018 at 12:32 অপরাহ্ন
কৃষ্ণেন্দুবাবু , আপনার পারাবার গল্পটি এইমাত্র পড়লাম । কি বলবো বুঝতেই পারছি না । জীবনের শেষ দিন গুলোর যে চিত্র আঁকলেন তাতে আপনাকে কুর্নিশ ণনা করে পারছি না । ভালো থাকুন আর এরকম অনবদ্য লেখা উপহার দিয়ে যান ।
Krishnendu Palit · মে 29, 2018 at 2:26 অপরাহ্ন
আপনার মূল্যবান মতামত আমার আগামী দিনের পাথেয় ৷ খুব ভালো থাকুন পীযূষবাবু |