বৈশাখী রায় চৌধুরী-র গুচ্ছকবিতা
১.
প্রতিচ্ছবি
আয়নার সামনে দাঁড়ালেই নিজেকে দেখা যায় না
আয়নার ভিতরে থাকে কঠিন দেওয়াল ভাঙতে পারলে তবেই দেখা যায় নিজের মুখ
সবাই পারেনা
আয়না ভেতরে থাকা মুখগুলো দ্যাখে অবিকল তার মতো দেখতে কত নিস্তব্ধ ঘাতক
তাকে দেখেই হাসছে,চুল আঁচড়াচ্ছে তারপর সেজেগুজে হেঁটে যাচ্ছে প্রিয়
মানুষদের ভিড়ে।
২.
প্রেম
ঘরে আগুন লাগলে দেখেছি দরজা পুড়ে যায়
পুড়ে যায় জানালা
ওরা তো শুকনো মরাকাঠ পুড়বেই
কিন্তু একটা ঘর তো কোনদিন মরাকাঠ ছিল না
মানুষ তো নয়ই
তবুও তো দেখেছি ঘর পুড়ে যায় বিচ্ছেদে
আর মানুষ পোড়ে চিরকাল অনন্ত প্রেমে।
৩.
মাথুর
জমানো নদী হারিয়ে ফেলি নিজের ভুলে
এখন শুধু অনন্ত অপেক্ষা বর্ষার
বর্ষার অপেক্ষা অনন্ত চোখের জলের
নিজের আফসোসকে অনুবাদের শব্দ খুঁজে পাই নি প্রিয়
আজন্মকাল ধরে শুধু শিখেছি এই প্রার্থনাধ্বনি
হে আমার উপেক্ষার ঈশ্বর পরজন্মে যেন তোমায় সিঁথি জুড়ে খুঁজে পাই।
৪.
অসুখ
পায়ে পায়ে ছুঁয়ে যাচ্ছি ছাপটুকু
পথ তো একটাই যা শুধু দূরত্ব শেখায় আমাদের
ছুঁতে ছুঁতেই পেরিয়ে যাচ্ছি ঈশানকোণে শ্মশানমাঠ
যা পেরোলেই আর পা ছাপ পড়বে না আমার
এটাই নিয়ম
এরপরের সব রাস্তা জলীয়।
৫.
জলের আলপনা
মুছে যাব জেনেও
প্রতিটা শ্লেট ব্যতিব্যস্ত হাতে মিলিয়ে চলেছে ভাগশেষ
মুছে যাব জেনেও
শীতকাল রোদটুকু রেখে যাচ্ছে বারান্দায়
মুছে যাব জেনেও
তোমার ঘৃণার মন্দিরে এঁকে এসেছি জলের আলপনা
মুছে যাব জেনেও
জীবন সুনিপুণ ছন্দে বুনে চলেছে আমাদের ধার-বাকির দিনগুলো।
৬.
ছবি
নদী আঁকতে তে গিয়ে বারবার মনে পড়ছে তোমাকে
ঘৃণা আঁকতে গিয়ে এঁকেছি শুধু তোমার প্রত্যাখ্যান
নিজেকে আঁকতে গিয়ে কেবল আঁকতে পেরেছি তোমার ভালোবাসা
কি নিপুণ! নিপাট হয় মেয়েদের সেলাইয়ের ফোঁড়।
৭.
ফুটবল
প্রতিবারই জুতোর থেকে বড় হয়েছে পা
মৃত্যুর থেকে ক্রমশ ছোট হয়েছে জীবন
কিন্তু জুতো আর মৃত্যুর মধ্যে তো সখ্যতা ছিল না কোনোদিন,
ছিল না কোনো ফিসফাস
অথচ দ্যাখো দুজনেরই কাজ আমাকে এক দরজা থেকে আরেক দরজায় গড়িয়ে দেওয়া।
0 Comments