মান
বৃন্দাবন মাতানো বাঁশিটি পড়ে আছে ধুলোয়।মাথায় চূড়াবাঁধা নেই, ময়ূরপুচ্ছ পড়ে আছে একপাশে আর তিনি লুটিয়ে আছেন যমুনার তীরে।একটু আগে রাধাকুন্ডে মরতে গিয়েছিলেন।কুন্ড কড়া করে জানিয়ে দিয়েছে,রাধার সংগে যে ঝগড়া করেছে তার স্থান এই রাধাকুন্ডে নেই।ফিরে যান শ্রীকৃষ্ণ।
মেঘের মত কালো এলোচুল, সূক্ষ্ম লাল কাপড় তার উপরে নীল শাড়ি,রক্ত পদ্মের উপরে যেন ভ্রম্র বসেছে।কানে মুক্তার দুল,হাতে ঝলমলে চুড়ি।শুধু মানুষটাই বিষন্ন। এক ঝলক দেখলেই মনে হবে রাধা নয় রক্তসন্ধ্যার কোল থেকে নেমে এসেছে একটুকরো সিঁদূরে মেঘ।চোখ থেকে জলের ধারা নামছে অবিরত।যত্ন করে তা মুছে দিচ্ছে বিশাখা।রাধার কাছে ভেসে আসছে কিছু শব্দ।তাদের উত্তরে বিড়বিড় করতে হচ্ছে তাকে।
এদিকেগুরুগুরু মেঘডাকছে।রিমঝিম বৃষ্টি শুরু হল।যেন বৃষ্টি নয় তার পায়ের শিঞ্জিনী।বনমালতীর গন্ধ আসছে।তার সমস্ত ইন্দ্রিয় খুঁজছে তাকে।
অনেক কষ্টে মনে মনে নিজের কথাটা পৌঁছে দিলেন,কেন আসছ না রাধা।ভুলে যাও সমস্ত বিবাদ।
বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে হাওয়াই মিশে রাধার জবাব এল,আমি শ্যামলী-ধবলী নই যে তোমার পায়ে পায়ে হাঁটব।কোনো কুঞ্জে আমি আর যাব না।আমি আহারনিদ্রা ,সাজসজ্জা সব ছেড়েছি। আর কিছু চাই না আমার।নিজেকে ধ্বংস করাই এখন আমার একমাত্র কাজ।
এইটুকু কথা বলতে তাকে বেশ কয়েকবার চোখের জল মুছতে হল।
শ্রীকৃষ্ণঃতুমি বলেছিলে, ব্রজের অবসাদ দূর করার মত সুর তুলতে পারি আমি।সেই সুরে গত রাতে কত ডেকেছি.. আর বুঝি তোমায় সেসব টানে না?তুমি আর আমায় চাও না?
রাধাঃনা, চাই না। তুমি বড় নিষ্ঠুর,কিছু চাইলেই তোমার হাতের মুঠো শক্ত হয়ে যায়।যে চায়, তাকে তুমি কিছু দাও না।দিনরাত কত লোক তোমার নাম করে কাঁদছে,তাদের কি তুমি কিছু দাও?
শ্রীকৃষ্ণ চুপ করে থাকেন।বৃষ্টির রিমঝিমের ভেতর থেকে কথা ভেসে আসে রাধার কথা, কালো মেঘে ভরা আকাশে তোমাকে পাই, অন্ধকারে তোমাকে পাই।পাখির ডাকে তোমার সুর পাই।তোমায় পাওয়া আমার হয়ে গেছে।
শ্রীকৃষ্ণ অবাক হলেন, আমাকে বাদ দিয়ে আমায় পেয়েছ?আমি যে চাঁপাফুল ছুঁয়ে তোমায় খুঁজে পাইনা!
রাধা হাসে,মাঝেমধ্যে ভাবি কেন আমি কৃষ্ণ হলাম না।তুমি রাধা হলে না।
চোখবন্ধ করে তিনি এসব দেখছিলেন।প্রতিটি পদ রচনার আগে তিনি চোখ বন্ধ করে দেখতে থাকেন, দেখতে পান যমুনার তীর, কুঞ্জবন, বৃন্দাবন,আর তাদের… দেখা আর লেখা চলে পাশাপাশি।
তিনি চোখ মেললেন,সামনে ভূর্জপত্র, খাগের কলম তুলে নিয়ে লিখতে লাগলেন,
নারী জনমে হাম না করিলু ভাগি
এখন মরণ শরণ ভেল মানকি লাগি।
0 Comments