আখর

আমি জানি রোগটা বড়ো অদ্ভুত। আদৌ এটা রোগ কিনা তাও জানিনা যদিও। বাড়াবাড়িটা তো শুরু হলো ইদানীং। লোকের ঘেন্না হয় ক্লেদাক্ত গন্ধে, ঘেন্না হয়,কীট পতঙ্গের উপস্থিতিতে, ঘেন্না হয় বিশ্বাস ঘাতকতায় কিংবা অপরিচ্ছন্নতায়, আর আমার ঘেন্না বানান ভুলে।হ্যাঁ মশাই, ঠিকই শুনেছেন.. ভুল বানান দেখলেই আমার মাথায় কেমন রিনরিনে একটা শব্দ শুরু হয়।বিরক্তি থেকে শুরু হয়ে সেই রিনরিনে আওয়াজ টা পুরো শরীরে রাগ হয়ে ছড়াতে থাকে.. ব্যাপারটা অনেকটা, ধরুন, আপনি সমস্ত নির্ভুল অয়োজনে পুজোয় বসেছেন, এমন সময় যদি আপনার নৈবেদ্য তে একটা কুচকুচে কালো পোকা উড়ে এসে বসে; কি মনে হয় আপনার?? সব আয়োজনে ফাঁকি পড়ে, তাই তো?আমারও তাই। বানান ভুলের মানে হলো, গোটা ভাবনাটাকে ইচ্ছে করে অশুদ্ধ করে দেওয়া, সস্তা করে দেওয়া। রেনি কে যখন বিয়ে করি, তখন একদিন গল্পের ছলে বলেছিলাম ওকে, আমার এই রিনরিনে রাগের কথা। ও আমার বুকে আঙ্গুল বোলাতে বোলাতে বলেছিল, “ভাগ্যিস আমি লিখিনা “… আমিও নিশ্চিন্ত হয়েছিলাম। কারণ প্রুফরিডিং পেশায় থাকা ‘আমি’, রাগটা যে ধীরে ধীরে ঠোক্কর খাওয়া আক্রোশ হচ্ছে তা বেশ বুঝতে পারছিলাম।
গত পাঁচ বছর ধরে তো সহ্য করছি আমিও। একমাত্র মেয়ের ডিস্লেক্সিয়া। মাথা খুঁড়ে মরছি, বানানগুলো শুধরে দেবার জন্য। এতো ছোট্ট বানান গুলোয় ভুল করে, খাতায় লাল দাগ দিতে দিতে আমার শিরা গুলো দপদপ করতে থাকে। মনে হয় এক ধাক্কায় থেঁতলে দিই নিরেট, গবেট,ছোট মাথাটা। সামলে নিই। কিন্তু আর নয়। আজ রেনি বাড়ি নেই। আমিও পড়াতে বসে অপেক্ষা করছি, একটা ভুলের। তারপর ওই মাথাটা থেঁতলে দিয়ে, আমিও পালাবো। সব গোছানো। হলোও তাই। একটা ব্যাটের বাড়ি, আর দু তিনটে আক্রোশের ঘা। শেষ করে, বেরিয়ে এসেছি পেছনের দরজা দিয়ে.. খুব শান্তি, এতো দিনে একটা অশুদ্ধি ঘুচিয়ে এসেছি এক্কেবারে, রেনি ও ফিরে এসেছে এতক্ষনে, খুব কাঁদছে বোধহয়।যাকগে। হঠাৎ বজ্রপাতের মতো মনে হলো, তাড়াহুড়োয় টেবিলে রাখা হোমওয়ার্ক এর খাতায় বানানটা যে, শুধরে দেওয়া হয়নি, তাই…….. ফিরছি, রেনি ফিরে এসে বারবার আমাকে ফোন করছে। শার্টের কলারে রক্ত, তবু পালাবার পথ নেই। লাল কালির পেনটা পকেটে ছুঁয়ে নিয়ে, ফিরতেই হচ্ছে…
আচ্ছা, রেনির ও কি কোনো বানান ভুল হবেনা এখখুনি????
0 Comments