ফাঁস

ব্রতী মুখোপাধ্যায় on

Fansh

বাপের বাড়ি আসার সুযোগ পেলে কমলার মন চায় না লক্ষণদের বসতবাটির ছায়া আবার মাড়ায়।
মা তখন বোঝায়— পেরথম পেরথম এক-আধটুক ঠুকাঠুকি কুথায় না হয়?
বাপ তাকে বোঝায়— লক্ষ্মণটা গোবদা পাগল। তুমাকেও মানায়ে চলা লাগে।
বাপ-মা দুজনেই বলতে চায় গায়ে যখন হাত দেয়নি দুশ্চিন্তার কারণ তেমন নেই।

দিদির ওপর অমলার খুব রাগ। তারই মুখের খাবার দিদি সেদিন কায়দা করে কেড়ে নিয়েছে। দেখতে তো পেত্নী। লক্ষ্মণদা মাথামোটা হয়ত, তবে গোঁফদাড়ি চেঁচে দিলে একবারে শাহরুখ খান।

লক্ষ্মণের সঙ্গে কমলার বিয়ে হবার ছিল না। চোলাইঠেকে দেখা হলেই কমলার বাপ লক্ষ্মণকে বলত— কী যেন তুমার নাম, চার অক্ষর?

সেই লক্ষ্মণই একদিন তার পেছন পেছন ঝালমুড়িগলির কোণের ঘরে এসে অমলাকে দেখে, আর একবার চুমু খাওয়ার সুযোগ পেয়েই গলে যায়।

কমলার বাপ মাতাল, কিন্তু সে ঝানু মুহুরির এসিস্ট্যান্ট। পাঁজি থেকে বিয়ের দিন দেখে চার অক্ষরের লক্ষ্মণকে কৌশলে কমলার পাশের পিড়িতে বসিয়ে দিয়েই দাঁত কেলিয়ে বউকে বলে— ফাঁসিয়ে দিলাম।

প্রথম প্রথম চিন্তা ছিল কমলার। হাজার হলেও চিটিং। লক্ষ্মণও অল্প সময়ে সবকিছু বুঝে উঠতে পারে, তবে এসব নিয়ে একটা কথাও বলে না। কমলা যখন জিদ নিয়ে পড়ে আছে, তার মা পাশে এসে বসে, তার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে— কাঁদবি নি গাধীর পারা। পেটে একটা আসবে যেখন, সবকিছু ঠিক হইয়ে যাবে।

মায়ের অবুঝ মুখের দিকে কমলা চেয়ে থাকে অসহায়ের মতো। দিদিকে এভাবে দেখে অমলারও মন গলে যায়— আমার নতুন শাড়িটা নিয়ে যা, সুন্দর লাগবি তুই।

এদিকে অনেক দেরি হচ্ছে, বারোটা বাজলে ট্রেন ছেড়ে দেবে, কমলার বাবা ‘আর দেরি লয়’ বলবে বলবে করছে, কমলা ফেটে পড়ে সেই সময়— গাঁয়ে একটা বেলগাছ ছিল নি? কার সঙ্গে বিয়া দিছ, বাপ?


ফেসবুক অ্যাকাউন্ট দিয়ে মন্তব্য করুন


ব্রতী মুখোপাধ্যায়

জন্মঃ ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৫০ । শিক্ষা ও বেড়ে ওঠা খড়্গপুরে। খড়্গপুরেই এক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। লেখালেখি করতে ভালবাসেন। লেখা ছাড়া ঘোরাফেরা ও গল্প করতে ভালবাসেন। কবিতা, অণুগল্প ও ছোট গল্প লিখতে বেশি পছন্দ করেন। প্রকাশিত বইঃ- কবিতাবইঃ অন্তরীন উচ্চারণ, ক্লান্তিরেখার নীচে, নীল সিন্দুক, রাত্রিপাঠ, খিদে পায়, শিবঠাকুর কাঁদে, দেয়ালদিনের কবিতা, মাটির নিচে জলের বেহালা বাজছে। অণুগল্পবইঃ ভদ্রাসন, অন্ধকারের উপকথা, একদিন বাঘ।

0 Comments

মন্তব্য করুন

Avatar placeholder

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।