বার্থডে গিফ্ট

উন্মেষ ঘরাই on

দিশা আউটডোর টা চট করে সেরে ফেলার জন্য ছটপট করছে।  উৎসব ওয়েট করছে মানি স্কোয়ারে দিশার বার্থডে সেলিব্রেট করবে দুজনে।  কী যে সারপ্রাইজ বলছেই না কিছুতেই, শয়তান!
উৎসব কার ড্রাইভ করেই চলেছে দেখা হওয়া থেকেই কোথায় গন্তব্য দিশার জানা নেই, জিজ্ঞেস করারও আর ইচ্ছে নেই,যে চুলোয় নিয়ে যাবে যাক! দিশার মন ভালো নেই না উৎসব না ও তো দিশার লাইফলাইন বলা চলে! আসলে ছোটোবেলা থেকেই এমন একটাও জন্মদিন যায়নি যে দিশার দাদাই(অনুপ) ওকে কোনো গিফ্ট দেয়নি! ওকে কোলে করে গোলগোল ঘোরায়নি! ওর চুল ঘেঁটে দেয়নি! কিন্তু বিগত ২টো বছর দাদাই বার্থডে উইশটা পর্যন্ত করেনি! অবশ্য ওর নিজের দোষটাও কিছু কম ছিল না এখন রিয়েলাইজ করে!
ও যখন ক্যালকাটা মেডিক্যালে চাকরিটা পেল তখন দাদাই ওর মাস্টারি ছেড়ে দিল সাউথ পয়েন্টে, বলল ও নাকি গ্রামে ফিরে যাবে, দাদাইটা এরকমই বদ্ধপাগল। দিশা কত করে বোঝাল, গ্রামে গিয়ে কি ছাগল চরাবি,গোবর কুড়োবি! কিন্তু অনুপকে দিশা আটকাতে পারল না, অনুপ গ্রামের বাচ্চাগুলোকে শিক্ষিত করতে চায় প্রকৃত অর্থে ও ছোটোবেলায় যে কষ্টগুলো পেরিয়ে এসেছে সেগুলো দূর করতে চায়। দিশার গ্রাম ভীষণ অপছন্দ ও হওয়ার পরই বাবারা শহরে চলে আসে,বাবা-মা কেউই বেঁচে নেই। দাদাই ছিল শুধু সেও চলে যেতে চাইছে! যাওয়ার আগে বলে গেল,”উৎসবের হাতে তোকে রেখে গেলাম”। দিশাকেও বলেছিল ও যেন মাঝে মাঝে গিয়ে গ্রামের মানুষগুলোর সেবা করে। দিশা রেগেমেগে বলেছিল,”ধুর্ ওই গেঁয়ো ভূতগুলোকে আমার সহ্য হয় না! তার চেয়ে এখানে প্র্যাক্টিস্ করলে কিছু ইনকাম হবে!”। “থাক তুই তোর টাকা নিয়ে, জানবি তোর দাদাইও একটা গেঁয়ো ভূত!”বলে অনুপ বেরিয়ে গেছিল।
ভাবতে ভাবে দিশার চোখে জল উপচে পড়ল, উৎসব গাড়ি থামাল। চোখ খুলতে দিশা দেখল ওর গ্রামের রেললাইনের এপাশে গাড়ি দাঁড়িয়েছে! উৎসব ওর হাতটা টেনে নিয়ে ওকে একটা ছোট্টো ঘরের সামনে নিয়ে গেল,”অনুপম চিকিৎসালয় (প্রতি শনিবার নিখরচায়)” বোর্ডে লেখা। ওর হাতে স্টেথোটা তুলে দিল একটা যুবক হাসিমুখে। ও উৎসবের দিকে তাকাতে ও বলল,”তোর বার্থডে গিফ্ট ফিরিয়ে দিস না প্লিজ!” ঘরের সামনে লম্বা লাইন বুড়ো-বুড়ি, ঘোমটা টানা বউ কোলে বাচ্চা নিয়ে, সারা বিকেল ও রুগি দেখল, একটা চিনচিনে ব্যাথা থেকে থেকে জেগে উঠছিল এদের দেখে কে জানে কিসের। সব শেষ হলে ও দেখল পেশেন্টের বসার টুলের নীচে একটা ছোট্টো প্যাকেট রাখা,লেখা “তোর জন্য” খুলে দেখল দিশাা….. সবুজ চুড়ি!! কিছু বুঝে ওঠার আগেই কে একটা পেছন থেকে সব চুল ঘেঁটে দিল!!

ফেসবুক অ্যাকাউন্ট দিয়ে মন্তব্য করুন


উন্মেষ ঘরাই

পৈতৃক ভিটে মেদিনীপুর, বাবা মা চাকুরিসূত্রে থাকেন কোলকাতায়, আর তিনি পড়াশুনোর জন্য থাকেন বোম্বাই তে। বালুরঘাটে বাবার চাকুরিসূত্রে ছিলেন পাঁচ বছর, মাধ্যমিক উচ্চ-মাধ্যমিক ওখানেই। ফিজিক্স এ অনার্স করেন প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি থেকে। বর্তমানে ইন্টিগ্রেটেড পি এইচ ডি করছেন বোম্বে তে, টি এই এফ আর ইনস্টিটিউট এ। লেখার শখ ছোটবেলা থেকেই , কবিতাই প্রথম প্রেম কিন্তু ছোটগল্পও লিখতে ভীষণ ভালোবাসেন। মূলত মানব জীবনের বিভিন্ন অনুভূতি যা সচরাচর আমরা অত খেয়াল করিনা সেগুলোই ভাষায় ফুটিয়ে অনন্য ভাবে পাঠকের সামনে তুলে ধরাই তার লেখালেখির উদ্দেশ্য।

0 Comments

মন্তব্য করুন

Avatar placeholder

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।