কোর্টরুম
কোর্ট এর বাইরে বসে বসে বিরক্ত হয়ে যাচ্ছিল নিধু। পুরো নাম নিধুরাম দাশ। সাক্ষী হিসাবে সুনাম আছে। যে কোনো মামলাতে সাক্ষী হিসাবে কাজ করতে পারে, নিপুণ ভাবে মিথ্যাটা বলে যায়, যে ভাবে শেখানো হয়। উপরি পাওনা বেশ কিছু আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলতে পারে। আজ বেশি কিছু মামলার শুনানি নেই, কিছু জমি সংক্রান্ত চলছে। এই গুলো তে ভালো পয়সা আসে না। মানুষ গুলোর ই শেষ পর্যন্ত উকিল কে দেবার মত পয়সা থাকে না।
– শ্লা, দুই ছটাক জমির জন্য লোক গুলো কি না করে!
অঞ্জন মিত্র। ডাকসাইটে পারিবারিক সমস্যার উকিল। নিধুকে ডাকল ইশারায়।
কোর্টের বাইরের চায়ের দোকানে চা নিলো নিধু।
– কেস কি?
– বড় লোকের ছেলে। ওই ফস্টি নস্টি করতে গিয়ে ফেঁসে গেছে। এখন বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে মেয়ে। গরিব ঘরের মেয়ে গুলো খুব ইমোশনাল হয়। কি হয়েছে, না হয় শুয়েছে কিছু বার।
– বুঝেছি। বিয়ের লোভ দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক। প্রতারণা কেস।
– কাল কোর্টে উঠবে। ভালো মাল্লু পাবি । বিকালে চেম্বারে আসিস সব বুঝিয়ে দেবো।
সাক্ষী দেবার সময়েও নিধুর বার বার চোখ চলে যাচ্ছিল মেয়েটির দিকে। শ্যামলা, মায়া ভরা চোখ। এক টানা চোখ মুছে যাচ্ছে। বয়স তারই মেয়ের বয়সী। নিধু কেঁপে ওঠে ভিতর।
সাক্ষী বয়ান শুনে, মামলার রায় ঘোষণার তারিখ দিয়ে দেন জজ। অঞ্জন মিত্র চোখের ইশারায় দেখা করতে বলে নিধুকে।
কোর্ট রুম ফাঁকা হতে সময় লাগে না। মেয়েটি তখন ও কেঁদে যাচ্ছে। পাশে বাবা মা।
নিধু এগিয়ে যায়। বলে, মা কিছু মনে করিস না। তোর মত আমারও একটা মেয়ে আছে। বাড়ি যা। ভালো করে চান কর।এরা গায়ের ময়লা বৈ তো নয়। যা ময়লার মতো ধুয়ে ফেল।
বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠে। বুক পকেটে থেকে ফোন বের করে মেয়ের নাম্বারে তাড়াতাড়ি ডায়াল করেন।
0 Comments