প্রেম

শুভঙ্কর চ্যাটার্জী on

এই, ওটা আমার নাগর। আমার পেমিক। আমার পিছে পিছে আসবে। তোমরা কিছু কোয়ো না বাপু।
মুখ বাঁকিয়ে বলল রাসকলি। তার পান খাওয়া ছোপ ধরা দাঁতের হাসি ছড়িয়ে পড়ল বিনোদিনীর মুখে। দাঁত কেলিয়ে সেও বলল -উঁ, রসের নাগর বল। নয়নীকা হাত তুলে কুকুর তাড়ানোর মত করে ছুটে গেল।
-হ্যাই শালা, ভাগ এখন থেকে।
যাকে উদ্দেশ্য করে ছুটে যাওয়া সে দৌড়ে পালাল না। সামান্য একটু সরে গেল। নয়নীকা খিস্তি কেটে বলল – শালা ফের পিছনে আসলে ছেচে রেখে দেব। দলের বাকিরা হেসে উঠলো। নয়নীকার চেহারা ভারী। পাগলটাকে তাড়াতে থপ থপিয়ে গলির মুখ অব্দি ছুটে গেছিল। এবার দলের দিকে মুখ ফিরিয়ে বলল -ক্যালাস না সব, চল এই বাড়ি। ষোলো চাইবো আটের নীচে নামব না কিন্তু। নে বাজা।
গ্রীলের গেটটা খুলে দুই হাতে জোড়ে জোড়ে তালি দিতে দিতে বাড়িতে ঢুকল হিজরার দলটা।
-এ মাই ছেলে হয়েছে। দোয়া নিয়ে যা। ষোল হাজার টাকা, একটা শাড়ি আর এক থালা চাল নিয়ে আয়।
বাড়ির লোকজনের মুখ থমথমে। কাউল ক্যাচাল শুরু হল। এসবে ওদের অভ্যাস আছে। চাল থালায় নিয়ে বাচ্চার চারিদিকে ঘুরে ঘুরে নাচল বিশখা। এক চিমটে চাল বাচ্চার মাথার ওপর দিয়ে ছিটিয়ে দিল। নয়নীকার সাথে দরাদরি হল। নয়নীকা দলের লিডার। ওর ওপরে কেউ কথা বলে না। যেমন বাজখাই গলা তেমন পাশ করা মুখ। সাড়ে চার হাজারে রফা হল।
রাস্তায় যখন নামল রোদ চড়া। আকাশ আগুন ঝড়াচ্ছে। মাথা ব্যথা শুরু করেছে নয়নীকার।
থু করে একদলা থুতু পাকা রাস্তায় উগরে ফেলল – শালা, ভিখারী বাড়ি। আমাদের দেখলেই নাকে কান্না শুরু। শালা যত্ত বড় বাড়ি তত্ত ছোট মন। ছেলে চাকরি করে, বউ মাস্টার। অসুখই নাকি ফুরায় না। শালা পেটোকে ঠিকানাটা দিয়ে দেব, ওষুধ গাঁড়ে গুঁজে দিয়ে যাবে।
গলির মাথায় গন্ডগোলের শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সময় বিশখা থমকে দাঁড়ালো।
-ওরে রাসু তোর পেমিক যে প্যাদানি খায়।
ঘটনা সত্যি। পাগলাটাকে রাস্তায় ফেলে লাথি মারছে বেশ কয়েকজন। যন্ত্রনায় ছটফট করছে সে। রাসকলি এক পা সেদিকে এগুতেই তার হাত খপ করে ধরে ফেলল নয়নীকা।
শাড়ীর আঁচল দিয়ে মুখ ঢেকে বলল- মরনও হয় না এগুলার। চ, আজ পিছনে কুসাৎ লেগেছে। আজ আর হবে না।
অনেক রাতে ঘরের দরজা খুলে নিঃশব্দে চেনা পথ দিয়ে খানিক এগিয়ে ভাংগা বাড়ির ভেতরে ঢুকল এক হিজরা। হাতের থালায় ভাত, ডাল, সব্জী।
ভাংগা দালানের এক পাশে গুটিশুটি মেরে শুয়ে ছিল ভোলা পাগলা। পায়ের শব্দে উঠে বসল। তার গায়ে মাথায় হাত বুলাতে লাগল হিজরা – কথা শোন না ক্যান, চলে যাও না ক্যান। তোমাকে কতবার কইছি না এখন এটাই আমার বাড়ি। খুব লাগছে? সোনা আমার, পাগলা আমার। খাও সোনা।
পাগলা ভোলা গোগ্রাসে ভাত খাচ্ছে আর তার গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করছে তার প্রেমিকা।
সকালের দিকে রাত এগিয়ে চলল নিজের গতিতে।

ফেসবুক অ্যাকাউন্ট দিয়ে মন্তব্য করুন

Categories: গল্প

শুভঙ্কর চ্যাটার্জী

জন্মঃ ১৯৮২ সালের ২৭শে জুলাই। পড়াশোনাঃ বালুরঘাট হাই স্কুল। লেখালেখির সঙ্গে যুক্ত স্নাতক স্তর থেকে। বর্তমান পেশাঃ প্রাথমিক শিক্ষক। সঙ্গে লেখালেখি। এছাড়া ছবি আঁকার সঙ্গে যুক্ত।ছবি আঁকার প্রথাগত কোন শিক্ষা নেই। অনেকটাই দেখে শেখা। সে অর্থে স্বশিক্ষিত। ছবি আঁকার সঙ্গে যুক্ত ছেলেবেলা থেকেই। অয়েল এবং অ্যাক্রেলিকে স্বাচ্ছন্দবোধ করেন। মুলত ছোটগল্প ও অণুগল্প লিখতে ভালোবাসেন। এছাড়া কিছু বড় গল্প এবং উপন্যাস ও লিখেছেন। মানুষের কথা, সমাজের কথা, সাংসারিক টানাপড়েন এইসবই লেখার উপজিব্য বিষয় । আনন্দমেলা, পত্রপাঠ প্রভৃতি পত্রিকায় লেখা ছাপা হয়েছে। স্থানীয় পত্রিকা আত্রেয়ীর পাড়াতে লেখা ছাপা হয়। কিছু উল্লেখযোগ্য গল্প - ফ্রেন্ডশিপ, ফেরী, বিষ ইত্যাদি।

0 Comments

মন্তব্য করুন

Avatar placeholder

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।