কৃষ্ণেন্দু রায়-এর কবিতা
১. সমুদ্রকালীন সময়
এই যে আমরা শুয়ে আছি, তার মাঝে পড়ে আছে গোটা রাত
আর কিছু তারারা স্থির এদিক, ওদিক
মেঠো ইঁদুরেরা পার হয়ে যায় আলপথ।
কোনো গ্রীষ্মের দিনে ঘাসফুলে ভিড় করে আসে জলফড়িঙের দল,
ফেরিওয়ালা ডাক রেখে চলে যায় অনির্দিষ্ট দূর,
শুধু আমাদের মধ্যে গল্পের জন্ম হয়না কোনো।
উঠোনময় নিমপাতাদের চলাচল;
মেঘের কিনারে জমে থাকে নাটকের কুশিলব,
কাউকে না জানিয়ে বৃষ্টি আসে খানিক দূরত্ব জুড়ে;
রেললাইন, পীরের বাড়ি অস্পষ্ট হয়ে আসে সব।
একদিন এইসব মুহুর্ত শেষ হয়ে গেলে,
কোনো সমুদ্রের ধারে হাটতে যাবো আমরা
ঢেউ ধরে চলতে চলতে;
খানিক শীত এসে লাগবে আচঁলের গায়ে।
পায়ের তলায় জমবে ঝুরো বালি,
রাতে জেলেদের নৌকায় লন্ঠনের আলো উঠবে জ্বলে,
আর জলের ছায়ায় ভিড় করে আসবে হ্যালোবেটস এর দল;
কত সহস্র’ বছর বেঁচে থাকে ওরা –
আর আমাদের মাঝে জেগে থাকে গোটা রাত।
২. সরীসৃপ
বহুদিন ট্রেন না আসা রেললাইনকে বলে দিও
বৃষ্টি আসবে ঠিক সন্ধ্যা ৬ টায়,
বেলফুলের গন্ধে সাজবে পুরনো পাড়া।
পড়া ফেলে কার্নিশে তাকানো ছেলেটিকে
বলে যাবো স্টারওয়ার্শের ক্লাইম্যাক্স,
সেও একদিন শিখে নেবে বিড়ালের ভাষা।
আমাকে কোনো প্রাচীন গুহায় শিকারের গল্প
শুনিয়েছিল কেউ – বলেছিল সূর্যকে ডুবতে না দেখে
কেউ ফিরে যায়না এ পাহাড়চূড়ো থেকে।
তারপর আমি তো ভেসেই গিয়েছিলাম –
এই শহরের সব পুরোনো বাতিল বাতিঘরে;
চাঁদের আলোয় মৃদু সরীসৃপ এসে দাঁড়ায় দীঘিতে
আমি তার দিকে আকন্ঠ তৃষ্ণা নিয়ে ছুটে চলি।।
৩. সাতকাহন
শুকনো পাতায় পা ফেলার শব্দ হয়,
আজকাল চেনা মানুষের ডাককে বড় ভয় লাগে;
গতরাতের স্বপ্নেরা আবার ফিরে এলো বুঝি।
অথচ এইখানে একটা মিনার হতে পারতো,
ভালোবাসার মানুষেরা খানিক হাতের উপর হাত রেখে,
নরম ঘাসে, শুরুর গল্প টুকু নিতো মিলিয়ে,
ইতিউতি ছড়িয়ে থাকতো চিনাবাদামের খোলা,
কাঠি আইসক্রিম, পুরোনো খবর কাগজের পাতারা।
এরম কত সমস্ত সময় ব্যস্ত রাজপথে- ট্রামে বসে গেছে তারা,
বিকেলের রোদ ঘুঘু পাখীর মতো চুপটি বসে আছে
সাধনা ঔষধালয়ের হোর্ডিং, পুরোনো ঘড়ির দোকান,
আতরওয়ালার রঙিন দাড়ি -সব একই থাকে প্রায় –
কিছু কিছু এমনি ভুলে যেতে হয়।
শুধু আজকাল চেনা মানুষের ডাককে বড় ভয় লাগে;
গতরাতের স্বপ্নেরা আবার ফিরে এলো বুঝি। ।
0 Comments