চন্দ্রদোষ

রাজেশ গঙ্গোপাধ্যায় on

chandradosh

১.
সানুতলে ছায়া লেখা বিকেলের শেষ পৃষ্ঠা খুলে গেলে
লেপচা বস্তির বৃদ্ধের বলিরেখায় ঝিকিয়ে উঠেছে পরবাসের স্মৃতি
কুয়াশাজারিত চুলের-কাঁটা রাস্তার বাঁকে থমকে থাকা সকাল সমীপে
যাপনের মুহূর্তরা স্ফটিকের মত ঝরে পরে…অলঙ্কারে সেজে ওঠে তরুণ বয়স
নাবালক ভুলগুলো মাধুর্যে প্রতীত হয়ে ওঠে!

২.
আলতামিরার গুহাগাত্র মুছে গেছে…‘তমসো মা জ্যোতির্গময়ঃ’ ভেসেছে কবেই
কবন্ধ মূর্তির মত শোভিত হওয়ার বিলবোর্ড রাস্তার মোড়ে মোড়ে নামিয়েছে
পরিযায়ী পাখিদের হ্রদ…নিজের কাছেই অচেনা হয়ে ওঠার মহরায়
বিকিয়ে যাওয়ার মদিরা হু হু ছুটে যাচ্ছে শিরায়…কে যেন ডেকেছে…
ঘাড় ঘুরিয়ে তাকানোর মত কারণ না থাকলে এ জীবন ব্যর্থ বাজি রাখা

৩.
কিছু না থাকার ভেতরে যতটুকু থেকে যায়
তারই জন্য নিরাসক্তি…রোদ্দুরের হরফে লিখিত অলীক আখর
উড়ে যায় পরিত্যক্ত আইসক্রীম কাঠির কাছে স্কুলছুট স্মৃতি…পার্কের ঘাস
অস্তরাগের অনতিদূরে থাকা অসমাপ্ত আলেখ্যরেখায়
মাইলস্টোনের মত পুনরাবৃত্ত হতে থাকে পয়ারের ঝোঁক

৪.
স্খলনের কাছে আলো রেখে যান স্মিত তথাগত
এই দগ্ধ অকিঞ্চিৎকরের কাছে শ্রমণবৃত্তি খুলে রাখা
মাধুকরী শেষে প্রাপ্ত সম্পর্কের মুছে যাওয়া ছাপে
কিন্নর গ্রামে এক পাগল ফুলের গাছে রূপকথা জন্ম নিয়েছে
সারাৎসারে স্পষ্ট হয়ে ওঠে মৃত্যুই আলো

৫.
এইমাত্র? আর কিছু নয়? তাহলে যে ছায়াপথে মার্গসফর…কথা ছিল!
মার্জনার খুব কাছে শরীর বিছিয়ে রেখেছে অচিন মার্জার
তার সাথে বোঝাপড়া অসমাপ্ত থেকে যায় শেষের আগেই
শ্যাওলারা সংসার পেতেছে তূণীরে…গল্পকথা শুনতে এসে
চিত্ররূপ নিয়ে বড় বেশী আগ্রহী হয়ে উঠেছো তুমি!

৬.
অর্জিত করুণার চেয়ে বিসদৃশ দৃকপাতই ভালো।
প্রতিপাদ্যের ছায়ায় বেলা ফুরিয়ে এলে তারাদের ভুলেছো জ্বালাতে –
সম্পর্কের ফাঁকফোকর মেরামত করা হয়ে ওঠেনি আদৌ,
বিপজ্জনক কিনার থেকে অজুহাত বারবার ফিরিয়েছে জীবনের দিকে –
পূর্বাশ্রমের স্মৃতি ভুলে গিয়ে এক জন্ম পার হয়ে আসে…

৭.
দেশলাই ভিজে গেছে। তাহলে কি আগুন হবেনা?
চল চকমকি ঘষি, চল আদিম হই, তরুছালে ঢাকা হোক গোপনীয়তাকে
অনামী চুমুর পাশে লেখা থাক অন্ধ হৃদয় –
আমাদের উপেক্ষা সাঁকোর ওপর দিয়ে ওরা হেঁটে যাবে একদিন
মেপে নেবে কতটা অন্ধকারে আলো সম্ভব হয়ে উঠেছিল!

৮.
স্পর্ধার এক বিঘৎ পেরোনো গেলনা –
উন্নাসিকতার ডিঙ্গি বেয়ে পার হতে চেয়েছি দামাল স্রোত,
পার্থিব কাঠামোয় অমর্ত্যের ছাপ রেখে গিয়েছে সমীহ।
হন্তারক মুহূর্তরা অবগত নিক্ষেপ ত্রুটিহীন ছিল, তবু
কাউকে বলিনি হেরে গিয়েও কিভাবে জিতে যাওয়া যায়…

৯.
প্রবজ্যায় অন্তর্লীন হয়ে আছে প্রতিশ্রুতি।
শেষ ট্রেন চলে গেলে গুছিয়ে ওঠে রাতের বন্দোবস্ত…
মাতালের পায়ে পায়ে যে পথ ফুরোয় না,
তার জন্য নিকোটিন গন্ধের তোড়ে ভেসে যায় মোহ –
অবিরাম বৃষ্টিতে ধুয়ে যায় অর্গাজমে রাতের মেকআপ!

১০.
রেখেছ তমসা…চৌহদ্দি পার হয়ে চলে যায় নৈঃশব্দ কুহক
চলে যায় পারাপারের বিষাদগাঁথা, কাঠচাঁপা গাছটা আজও মিথ্যে নয়
সব স্মৃতি বন্দরে ছেড়ে মেলানকলির দিকে ভেসে গেছে একাকী নাবিক
তবুও ভোরের গন্ধ মাখে লেবুপাতা, মুথাঘাসে নিরক্ত শিশির
পুনর্জন্ম হতে হতে ব্যথার জন্মদাগ মুছে আসে


ফেসবুক অ্যাকাউন্ট দিয়ে মন্তব্য করুন

Categories: কবিতা

রাজেশ গঙ্গোপাধ্যায়

স্নাতক। বাটানগরের বাসিন্দা। সরকারী চাকুরীতে কর্মরত। লেখালিখি প্রকাশিত হয়েছে - দেশ, কৃত্তিবাস, ভাষাবন্ধন, পরবাস, যুগ, রবিবাসরীয় আনন্দবাজার(২৮ জুন,২০২০) প্রমুখ পত্রপত্রিকায়। শখ পড়াশোনা, গান শোনা।

0 Comments

মন্তব্য করুন

Avatar placeholder

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।