শহরের ভেতরের শহর
“মেয়ের খালি একটাই প্রশ্ন বাবা এককথায় তুমার কোলকেতাকে কেমন লাইগে। আরে আমি কি তুর মতো লিখাপড়া জানা মানুষ যি তুর মতো ওমনধারা কথা বলতে পারব। এই যি ‘প্রশ্ন’ তারপর হলো গিয়ে ‘এককথায়’ ইসব কথায় তো আমার মুখ থেকা ভালো করে বের হয়লাকো। সি শুনে মেয়ের পরথম পরথম ইমুন ধারা হাসতো… তা বইললে হবে না হাসলে যেন মুখ থেইক্কা মুক্ত ঝরে পড়ে। মেয়েটা হওয়ার পর চম্পা বইললে– ‘শোনো আর ছেলেপুলে লোবো না… ইকেই মাইনুষের মতো মাইনুষ কইরবো।’ আমি বইললাম বেশ তাইই হবেক।”
বিড়িটা ধরিয়ে আপনমনে কথা বলতে বলতে প্রভু খেয়াল করেনি কখন পৌরসভার আর্বজনার গাড়িটা এসে গেছে।গাড়িটা ফাঁকা করে চলে গেলে, ও সেখান থেকে প্লাস্টিকের প্যাকেট, জলের বোতল, মদের বোতল তাছাড়াও টুকটাক নানান জিনিস আলাদা করে বস্তায় ভরবে। গাড়িটা আস্তে আস্তে ডালার পেছন দিকটা উঁচু করছে, আগে বেলচায় করে লোকেই ফেলতে, এখন আপনা-আপনি পড়ে; আগে অবাক হয়ে ওদিকে তাকিয়ে থাকত, এখন অভ্যেস হয়ে গেছে। ও এখন হাঁ করে তাকিয়ে আছে ওর সারাদিনের রোজগারের রসদ ঠিকঠাক পড়ছে কিনা।
গাড়ির ডালাটা নামতে নামতে মেন রাস্তার উপর উঠছে, ও একপ্রকার ঝাঁপিয়ে পড়লো। অন্যদিন ওর আসতে দেরি হয়ে যায়, আজ সক্কাল সক্কাল চলে এসেছে; অন্যেরা আসার আগেই ও কাজ হাসিল করে চলে যাবে।
প্রথমে গিয়েই একটা বড়ো ক্যারিপ্যাকেটে হাত দিল। এরকম প্যাকেট থাকলে ওর বেশ আনন্দ হয়। কারণ ওতে অনেক জলের বোতল একসাথে থাকে। আবার কোন মদের আসরের হলে, বড়ো অঙ্কের টাকাও পাওয়া যায়, “ একি প্যাকেটটা হাত দিতেই এরকম নড়ে উঠল কেন?” অতিসন্তর্পণে প্যাকেটের বাঁধা মুখটা খুলে ফেলল, “ একটা আস্ত বাচ্ছা মেয়ে, মইনে হচ্ছে অখনই হইছে। কি গায়ের অং। একুনো বড়ো ঘইরের মেয়ে না হয়ে যাই না।” প্রভুর হাত পা কিরকম হিম হয়ে আসতে লাগলো। “ এটা কি কারও পাপের ফইসল নাকি মেয়ে হইছে বুলেই”– ও খুব ভয় পেয়ে মেয়েটাকে বুকে জড়িয়ে গুমরে উঠল। মেয়েকে উদ্দেশ্যে করে বলতে থাকলো– “ওরে তুর প্রশ্নের এককথায় উত্তর আজ আমি দিতি পারব। সি তুই যতই লিখা পড়া করিস। আজ মুখ্যু প্রভুর কথাকে কাটতে তুই তো ছাড় গোটা কোইলকেত্তা পারবেক লাই।”
0 Comments