দিনাজপুরের একটি হারিয়ে যাওয়া নদী ও পালযুগ

কৌশিক বিশ্বাস on

dinajpurer-hariye-jaoa-nodi-paul-youg

যদি আমরা আমাদের জেলার আত্রেয়ী বাদে একটি নদীও পুনরুজ্জীবিত করতে পারি, তাহলে বলার অপেক্ষা রাখে না যে; সেটা হবে বিপ্লব। পরিবেশ বা ইতিহাসজ্ঞ নই শুধুমাত্র ভালোবেসে পুরাতত্ত্বের খোঁজে জেলায় ঘুরে বেড়িয়েছি। এইরকম একদিন আমার বাড়ির ৫০০ মিটারের মধ্যে পালযুগের কিছু পোড়ামাটি, স্থাপত্য, ভাঙ্গাচোরা মূর্তির সন্ধান করতে করতে ক্ষেত্র সন্নিহিত নদী সম্পর্কে খোঁজ শুরু করি । তারপর যা বেরিয়ে আসে তা উত্তরবঙ্গ সংবাদে প্রথম আমার লেখায় উঠে আসে। প্রমাণ সহ লিখেছিলাম সেদিন হারিয়ে যাওয়া নদী ঘুসকির কথা। আজও ঠিক একইরকম একটি নদীর কথা বলবো। নদীটি হিলি বালুরঘাট জাতীয় সড়কের উপর দিয়ে তিওড় কালিবাড়ীর পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। হ্যাঁ ঘাগরা নদীর কথা বলছি যা এখন খাঁড়ির আকারে প্রবাহিত। ঘাগরা বাংলাদেশ থেকে প্রবাহিত হয়ে ডাবরার পাশ দিয়ে তিওড়, জামালপুর, বাঙ্গালীপুর, শিয়ালা, কিসমত রামকৃষ্ণপুরের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশে ঢুকে যমুনা নদীর সাথে মিশেছে। বাংলাদেশে ঢুকে এর গতিপথ প্রশস্ত ও জলধারার গতিবেগ বেড়েছে। বিস্তৃত বালুরাশি এর গতিপথকে সংকীর্ণ করেছে। নদীর খুব কাছাকাছি ক্রমান্বয়ে বসতি স্থাপনও এর স্থির জলধারার কারণ। কিছুকাল আগে অবধিও যে এই নদীপথে পণ্য পরিবহণ হত তা বলাই বাহুল্য। গুগল ম্যাপ ব্যবহার করে খুব সহজেই পাঠক এর গতিপথ ভারত ও বাংলাদেশে চিহ্নিত করতে পারেন।

যে দুটো ইতিহাসগত কারণে এই নদীর গুরুত্ব অপরিসীম তা –

এক, এই নদীপথের সোজা উত্তরে হিলি থানার একটি প্রাচীন গ্রাম অবস্থিত যার নাম ব্রহ্মখন্ড। প্রাচীন কালে এই গ্রামে যে ব্রাহ্মণদের আধিপত্য ছিল তা নাম থেকে সহজেই অনুমেয়। তাছাড়াও পালযুগের ছড়িয়ে,ছিটিয়ে থাকা অনেক পাথরের নিদর্শন এর গতিপথ লাগোয়া ওই গ্রামে দেখা গেছে।

দুই, এর গতিপথ ধরে সোজা দক্ষিণে বাংলাদেশে “পাতাল” বলে একটি গ্রাম আছে। ওইখানে যে স্তম্ভ গোটা পৃথিবীর কাছে উন্মোচিত হয়েছে গরুড়স্তম্ভ হিসেবে ; স্থানীয়দের কাছে তাইই পাতালস্তম্ভ নামে পরিচিত। এই পাতালস্তম্ভ পালরাজা নারায়নপালের সেনাপতির বংশানুক্রমিক প্রশস্তি খোদিত আছে।

ghagra1

সুতরাং ইতিহাসগত এই উপাদান থেকে আমরা সহজেই অনুমান করতে পারি যে প্রাচীন কালে কিভাবে এখানে নদীকেন্দ্রিক জনবসতি স্থাপন ও বিস্তার লাভ করেছিল। আগামীতে নিবিড় ক্ষেত্র অনুসন্ধানে হয়তো অনেককিছু উঠে আসবে যা চেনাপরিচিত ইতিহাস বা ভূগোলের গণ্ডী পেরিয়ে সমগ্র জেলাবাসীর কাছে বাস্তুতন্ত্র ও তাঁর সংরক্ষণে জলফলক হয়ে থাকবে!


ফেসবুক অ্যাকাউন্ট দিয়ে মন্তব্য করুন


কৌশিক বিশ্বাস

তরিকুল্লাহ সরকার উচ্চ বিদ্যালয়ের ইংরেজির শিক্ষক। আঞ্চলিক ইতিহাস ও লোকসংস্কৃতি বিষয়ক প্রবন্ধ লেখক। বৌদ্ধ ইতিহাস, ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে গবেষণামূলক প্রবন্ধ লেখক।

1 Comment

Jayanta Ghosh · জুন 9, 2020 at 8:13 পূর্বাহ্ন

সমৃদ্ধ করবার মতো লেখা।এই বিষয়ে আরো বিস্তারিত তথ্যানুসন্ধান প্রয়োজন। এটা জেনে ভালো লাগছে যে মাটির সন্তানরাই এগিয়ে আসছেন স্থানীয় ইতিহাসের আবরণ উন্মোচনের জন্য।

মন্তব্য করুন

Avatar placeholder

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।