বালুরঘাটে বৌদ্ধ-তন্ত্রের দেবী তারার উপাসনা ও এক মহান অঘোর-বৌদ্ধ সাধক (পঞ্চম কিস্তি)
কমল বিকসিল কহিহ ণ জমরা
কমলমধু পিবিবি ধোকে ন ভমরা।।
এইটাই ঠিক সমস্যা। অঘোরীদের সাধনমার্গ চর্যাপদের ঠিক এই পদের মতো। পদ্মফুল ফুটলে শামুক মুখে সে নিয়ে কিচ্ছুটি বলে না।কিন্তু তা বলে ভ্রমরের আবার পদ্মমধু খেতে কোন ভুল হয় না। কালের পর কাল অঘোর গুহ্যসমাজের মার্গ সম্পর্কে অঘোর সন্ন্যাসী এবং সাধারণ গৃহী ভক্তদের কিছু বলা নিষেধ। ফলে সেই মহান সাধকের সাথে বালুরঘাটের সম্পর্ক এবং তার সম্পূর্ণ ক্রিয়াকলাপ লিপিবদ্ধ করা খুবই কঠিন। আগের কিস্তিতেই বলেছি, আমার মতো অর্বাচীন শুধু তাকে ছুঁয়ে দেখতে পারে মাত্র আর সেই চেষ্টাই করে যাব।” কাঁহা গেলে তোমা পাই “। সত্যি তাই মানে হীন জীবনের কোন মানে নেই। তাই কি আর করা? খুঁজতে তো তাকে হবেই। এই খোঁজ করতে গিয়ে আবার প্রথম প্রশ্নটিরই মনে উদয় হয়। সেই – “কাঁহা গেলে তোমা পাই “।
একটা দুপুরবেলা সটান হাজির উত্তর দিনাজপুর জেলার ইটাহার থানায়। উদ্দেশ্য বর্তমান থানার ও,সি অভিজিৎ দত্তের সাথে দেখা করা। ও,সি র নির্দিষ্ট অফিস চেম্বারের আগেই অভিজিৎবাবুর সাথে দেখা। অনেক কথার পর আসলো সেই মুহুর্ত যখন তিনি তার প্রয়াত ঠাকুমার কাছে থাকা তার ছবি দেখালেন। কপালে ত্রিপুণ্ড্র। কানের উপাস্থি ভেদ করে কুন্ডল যাকে দর্শন বলা হয়। আমরা সাধারণরা সেজন্য “কানফাটা” সম্প্রদায় বলে জানি। এই দর্শন তখনই দেওয়া হয় যখন নির্দিষ্ট সন্ন্যাসী সাধনমার্গে সিদ্ধি লাভ করে পরমাত্মার দর্শন করেন। গলায় মরুতীর্থ হিংলাজের ঠমরা বা আশাপুরীর মালা। হাতে কেদারনাথ -বদ্রীনাথ থেকে পাওয়া লোহার বলয় বা বালা। গায়ে আড়াআড়ি ভাবে সেলী নামের এক বিশেষ ওড়না। শিব পার্বতীর প্রতীক স্বরূপ শিংনাদ ধারণ ও ডানহাতের বাহুতে ‘যোনীলিঙ্গের চিনহ’ ও রুদ্রাক্ষ মালা। সারা গায়ে ধুনিভস্ম লেপা। একজন মহাসিদ্ধ ‘কানফাটা’ মহাপুরুষ এর দর্শন হয়ে গেল সেদিন। এক অপার আনন্দ অনুভব করলাম সারা শরীরে। খুব অল্প বয়সের ছবি ছিল সেটি। তিনি যে আছেন আবারো যেন তারই সংকেত পেলাম আবারো। তিনি সর্বভূতে বিরাজমান। সবকথা শেষ করে দেখি ঘড়ির কাটা পাঁচটা ছুঁই ছুঁই করছে। অভিজিৎ বাবুকে বিদায় জানিয়ে আবার চলতে শুরু করলো বাইকের চাকা গন্তব্যে পৌঁছাব বলে। কিন্তু বাড়ি নামক গন্তব্যে পৌঁছালেও সেই গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য চাকা মানে কিস্তি চলতেই থাকবে।
আবার দেখা হবে পরের সপ্তাহে…………………….
পড়ুনঃ চতুর্থ কিস্তি < > ষষ্ঠ কিস্তি
0 Comments