বালুরঘাটে বৌদ্ধ-তন্ত্রের দেবী তারার উপাসনা ও এক মহান অঘোর-বৌদ্ধ সাধক (চতুর্থ কিস্তি)

কৌশিক বিশ্বাস on

লৌকিক নাকি অলৌকিক? এর দ্বন্দ্ব চিরকালীন। শুধুমাত্র জগৎ মিথ্যা আর ব্রহ্ম সত্য, এ হতে পারে না। ভগবান থাকলে শয়তানও থাকবে। সাধনমার্গে এ এক যাত্রাপথ। পারাপারের এক অসীম খেলা! জাগতিক ঘোর মুক্ত হলে তবেই হয় এর উত্তরণ। শবসাধনায় শ্মশানে আসা মৃতদেহকে পোড়ানোর সময় তার মাথার ঘেলু বের করে সেটা ভাত দিয়ে খাওয়া হয় এ পন্থায়। অঘোর সন্ন্যাসী হতে চাইলে তাঁকে দীক্ষা দেবার পূর্বে কোন নদীর ধারে নিয়ে গিয়ে ভেসে আসা কোন প্রাণীর মৃতদেহের যে কোন অংশ খাদ্য হিসেবে গ্রহন করতে হতো। বোধিচিত্ত উৎপাদন ছিল এর মূল প্রতিপাদ্য বিষয়। সর্বত্যাগী হয়ে জগতের কল্যাণের জন্য অঘোরী হতে হয়। আধ্যাত্মিক পথে শুধুমাত্র নিজের উন্নতিসাধনের জন্য নয়। এমন উদাহরণ এখানে বিরল নয় যেখানে দেখা যায় যে, পোকা আক্রান্ত কোন কুকুরকে দেখে তিনি সেই পোকা কুকুরের গা থেকে ছাড়িয়ে দিতে পারছেন না পাছে পোকার আহার নষ্ট হয় বলে। উপায় না দেখে বাধ্য হয়েই নিজের গা কেটে রক্ত বের করে তাতে পোকাকে আহারের জন্য বসিয়েছেন। নেপালের রাজা বীরেন্দ্রকে নিজের হাতের তালুতে যুগল মূর্তি দেখিয়েছিলেন। তাঁর কথা ছিল ব্রহ্মবাক্য। যা বলতেন তাই ঘটতো। বালুরঘাটে ২১ দিনের আয়ু দান থেকে সূক্ষ্ম দেহে একই সময় একাধিক জায়গায় থেকে জানান দিয়েছেন তার অবাধ বিচরণ জগত মাঝে। সাধনমার্গে নদীর গুরুত্ব অপরিসীম। প্রত্যেকটি সাধকের এর সন্ধান করতে হয়। আমাদের চেতনাও এই নদীরূপ। নদী যেমন নির্দিষ্ট বহমানতা ধরে বয়ে চলে নির্দিষ্ট গন্তব্যর লক্ষ্যে ঠিক তেমন চৈতন্যরূপী সাধক শতবাধা অতিক্রম করে এগিয়ে চলে পরমকে পাবার জন্য। তাই তপভূমি যে শুধুমাত্র নর্মদাকেন্দ্রীক তাই ই নয়; ভারততীর্থে বয়ে চলা প্রতিটি নদীই সাধনক্ষেত্রের আশ্রয়স্থল। তিনিও বেছে নিয়েছিলেন বালুরঘাটের বুকে চলা এই আত্রেয়ীকে। নিজের পয়সায় বর্তমান জমিটি কিনে বলে গিয়েছিলেন তিনি এই আত্রেয়ীর বুকেই মৃত্যুর পর সমাধিস্থ হবেন। তাই করা হয়েছিল। তাঁর ‘physical body’ নষ্ট হলেও তিনি আছেন। তাঁর ‘ astral presence ‘ আজও অনুভূত হয়। অনুভবে আজও তিনি আছেন আমাদের মধ্যে; এ বিশ্বচরাচরে। এই মহাজীবনকে ধরার সাহস আমার মতো নিতান্ত সাধারণ একজন মানুষের কখনওই সম্ভব না; আমি শুধু তাঁকে ছুঁয়ে দেখতে পারি মাত্র। সেই চেষ্টা আবার করবো আগামী কিস্তিতে।


পড়ুনঃ তৃতীয় কিস্তি < > পঞ্চম কিস্তি

ফেসবুক অ্যাকাউন্ট দিয়ে মন্তব্য করুন


কৌশিক বিশ্বাস

তরিকুল্লাহ সরকার উচ্চ বিদ্যালয়ের ইংরেজির শিক্ষক। আঞ্চলিক ইতিহাস ও লোকসংস্কৃতি বিষয়ক প্রবন্ধ লেখক। বৌদ্ধ ইতিহাস, ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে গবেষণামূলক প্রবন্ধ লেখক।

0 Comments

মন্তব্য করুন

Avatar placeholder

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।