বালুরঘাটে বৌদ্ধ-তন্ত্রের দেবী তারার উপাসনা ও এক মহান অঘোর-বৌদ্ধ সাধক (২য় কিস্তি)

কৌশিক বিশ্বাস on

দরজাটা খুলে বেরিয়ে এলেন তিনি। দুপুর দুটো, নিশ্চয় কোন ভদ্রলোক আসার সময় নয় ওটি। জানতে চাইলেন, কি ব্যাপার? কে আপনি? সব বললাম। তবুও কেমন যেন সন্দেহ হয় উনার। অভিজ্ঞতা তাকে অনেককিছু শিখিয়েছে। রাজীবপুর তাম্রপত্রটা এভাবেই শেষ হয়ে গেছে। যাইহোক, বললাম আমার অসৎ কোন উদ্দেশ্য নেই। আপনার সংগ্রহশালার কথা অনেকের থেকে শুনেছি তাই আজ আর সাতপাঁচ না ভেবে সোজা আপনাকে বিরক্ত করতে চলে এসেছি। বললেন- বিরক্তের কি আছে? আসলে বয়স হচ্ছে? আর একটা অতৃপ্তি পেয়ে বসেছে। আমি ব্যবসায়ী মানুষ। ভেবেছিলাম, সরকার এগিয়ে এলে অন্তত স্থানীয় পর্যটনে এই স্থান, সামগ্রী একটি জায়গা করে নেবে। আর হলো না। কতজনকে বললাম। সবকিছু বিনাশর্তে দিতে চেয়েছিলাম। যাকগে, বলুন কি বলবেন? বললাম, আপনার যদি আপত্তি না থাকে তাহলে একটু সংগ্রহশালাটি খুলে দেখাবেন? উনি ভিতরে গিয়ে চাবি হাতে নিয়ে বেরিয়ে এসে বললেন, চলুন আমার সাথে। ভরদুপুর। ধুলো জমেছে সবখানে। জংধরা গেট খুলে যা দেখালেন! বুক ভারী হয়ে এলো। এত ভার তিনি সহ্য করছেন কি করে? একটি মূর্তির দিকে তাকিয়ে দেখছি আর ভাবছি। হঠাত তার কথা যেন এক ঝাপটায় বাস্তবে এনে ফেললো। ও, ওইটা দেখছেন তো? আসলে ধুলো গুলো আর পরিস্কার করতে পারি না তো। বললেন, কই সব দেখবেন না নাকি? বললাম আজ শুধু এটাই দেখি, অন্য কোনদিন এসে বাকিগুলো দেখে যাব। আচ্ছা, বলে তিনি ভিতরের চেয়ারে গিয়ে বসলেন। দেখি দেবী ললিতাসনে বিশ্বপদ্মের উপর উপবিষ্ট হয়ে আছেন। বামহস্তে প্রস্ফুটিত পদ্ম আর ডানহস্ত অভয়মুদ্রায়। সারাদেহ পবিত্র পৈতা দ্বারা আবিষ্ট। দেহাবরণ হিসেবে বাজুবন্ধ, নূপুর, ও হার লক্ষ্য করার মতো। মাথার উপর শঙ্কু আকৃতির ঘরে পঞ্চবুদ্ধের অবস্থান। মধ্যে অমোঘসিদ্ধি ও তার বামদিকে একজটা আছে ডানহস্তে ছুড়ি নিয়ে। তার বামদিকে দেবীর ডানহস্তে অশোক ফুল নিশ্চিত করে যে এটি ‘অশোকান্ত মারিচী’। মূল মূর্তির দুইধার দিয়ে খোদিত চার জোড়া দেবীমূর্তি যা মূলদেবী মূর্তির প্রতিচ্ছবি। প্রত্যেকে পা আড়াআড়ি ভাবে ডানহস্ত উত্থিত অবস্থায় উপবিষ্ট। এই মূর্তিটি উড়িষ্যার রত্নগিরি বৌদ্ধবিহারের কথা মনে করিয়ে দেয়। এটি ” অষ্টমহাভয় তারা”। হ্যাঁ, আগেরবার যা বলেছিলাম সেই তারার একটি প্রকার। আর, সেই মহান সাধক? বলবো, বলবো। সবে তো সন্ধ্যে; রাত হতে দিন!

…………. পরবর্তী কিস্তিতে।

পড়ুনঃ প্রথম কিস্তি < > তৃতীয় কিস্তি

ফেসবুক অ্যাকাউন্ট দিয়ে মন্তব্য করুন


কৌশিক বিশ্বাস

তরিকুল্লাহ সরকার উচ্চ বিদ্যালয়ের ইংরেজির শিক্ষক। আঞ্চলিক ইতিহাস ও লোকসংস্কৃতি বিষয়ক প্রবন্ধ লেখক। বৌদ্ধ ইতিহাস, ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে গবেষণামূলক প্রবন্ধ লেখক।

0 Comments

মন্তব্য করুন

Avatar placeholder

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।