মধুমিতা রায়-এর একগুচ্ছ কবিতা

মধুমিতা রায় on

Madhumita_roy

কিছু রাগে

কিছু তো সংকেত দিয়েছ বহুআগে
গামছা নিংড়ানো জমানো অভ‍্যাস
নামানো জলপথ ভাঙানো কিছু রাগে

রাগের ধার দিতে সুযোগ কাজে লাগে
গোধূলি রং মেখে বানানো কৃতদাস
কিছু তো সংকেত দিয়েছ বহুআগে

ফুলের ঝরা দেখে গন্ধ রাত জাগে
ঠাণ্ডা অনুভবে এবার মাঘমাস
নামানো জলপথ ভাঙানো কিছু রাগে

খাতায় লিখি ভুল জটিল গুণ-ভাগে
সমাধা নেই বলে ফুটেছে সব কাশ
দোলাই ঘাড় থেকে পড়ায় মন লাগে

পড়তে বসে দেখি গভীর মনোযোগে
না-বোঝা ফাঁকগুলি দিয়েছে সব পাস
নামানো জলপথ ভাঙানো কিছু রাগে

তরল কালি বলে ভরেছি দামি খাগে
অতীতে মৃত সুখ ঝাঁকানো আশপাশ
কিছু তো সংকেত দিয়েছ বহুআগে
নামানো জলপথ ভাঙানো কিছু রাগে

           ........

ভাসমান

কেউ তো সাময়িক রেখেছে ভাসমান
জলীয় আবরণ যেন সে শূন্যতা
ইঞ্চি প্রতি মাপে রেখেছে চলমান

দেয়াল ছুঁয়ে পিঠ উঠেছে নববান
রাত্রি আলোকিত ঋষির মগ্নতা
কেউ তো সাময়িক রেখেছে ভাসমান

মাদুর পেতে বসি আবহমান কাল
যুদ্ধে পরাজিত? সময় বাধ‍্যতা
ইঞ্চি প্রতি মাপে রেখেছে চলমান

হাত-পা টানে বুঝি আমিই বেমানান
চোখের আবডাল বাক‍্য কটুকথা
কেউ তো সাময়িক রেখেছে ভাসমান

এমনি বিশ্বাস প্রচার সমজান
রপ্তে মাথাকুটি যতই ব‍্যর্থতা
কেউ তো সাময়িক রেখেছে ভাসমান

ডোঙায় ভেসে আছি শরীরে চাপকান
কতোটা শোনা ঠিক, কতোটা সমঝোতা!
কেউ তো সাময়িক রেখেছে ভাসমান
ইঞ্চি প্রতি মাপে রেখেছে চলমান
…….

উপাচার

স্নেহে অন্তর আঁধার উপাচার
রিপুর সঞ্চয় তাগাদা ঋণঝোপ
শ্রাবণ জল গিলে সাজানো ফলাহার

কুচানো ফালগুলো ফলিত সমাচার
ফটিক কুচিকুচি বসত তালাটোপ
স্নেহে অন্তর আঁধার উপাচার

ব‍্যাঘাতে বিবরণ মৌন ব্রতধার
শহর ফুলঝুরি বমনে ঝরা তোপ
শ্রাবণ জল গিলে সাজায় ফলাহার

কাতর অতিরেক সহায় তুমি আর
সে থেকে কিছু মন সজাগে গেলে ঢোক
স্নেহে অন্তর আঁধার উপাচার

এখন দ্বিপ্রহর দখল সূতিকার
তিলকে মাধুকরী সারায় বিষরোগ
স্নেহে অন্তর আঁধার উপাচার

বিধাতা প্রাণপণ করবে প্রতিকার
ছুটির নৈরাশ‍্য যাপিত মৃতদোষ
স্নেহে অন্তর আঁধার উপাচার
শ্রাবণ জল গিলে সাজায় ফলাহার
…….

নেই ক্ষতি

অবয়ব ততক্ষণে সব ছাঁচ প্রতি
নারকেল পাকে চিনি অশান্তকরণ
নতুনত্ব যাই হোক জানি নেই ক্ষতি

রোদ আসে শেষ রাতে বুঝে মতিগতি
রাত বাড়ে ঘাড় গুঁজে নিদ্রার স্মরণ
অবয়ব ততক্ষণে সব ছাঁচ প্রতি

জেগে আছি, বসে তাই রাক্ষুসের জ‍্যোতি
নাক কেটে ক্ষত যত যুবতী চরণ
নতুনত্ব যাই হোক জানি নেই ক্ষতি

মহাশূন‍্যে তারা কেন নিশ্চিহ্ন প্রগতি?
উজ্জ্বলতা ধার করে অর্ধেক মরণ
অবয়ব ততক্ষণে সব ছাঁচ প্রতি

পরাঙ্মুখ কান্তিপ্রেম ভাবখানি রতি
বাকি সব ম্রিয়মান ছাপানো ত্বরণ
নতুনত্ব যাই হোক জানি নেই ক্ষতি

গোটাগোটা কালিমায় আমি ভাগ‍্যবতী
কলঙ্ক বৈচিত্র্য থাকে মেঘের বরণ
অবয়ব ততক্ষণে সব ছাঁচ প্রতি
নতুনত্ব যাই হোক জানি নেই ক্ষতি
……..

পথিক

চমকানির মাঝে তবু স্থিরতা পথিক
বাখারি তলায় চাই শক্ত বালি মাটি
পলে পলে খুলে গেলে মুহুর্ত ক্ষণিক

হারিয়ে ফেলেছি যত বাঁধি সমধিক
গতানু বিশেষ হয় চুরি করে ঘাটি
চমকানির মাঝে তবু স্থিরতা পথিক

ইমন-কল‍্যাণ রাগ সুরের প্রতীক
সন্ধ্যা নামে নিজস্বতা আনছে দেখি রাতি
পলে পলে খুলে গেলে মুহুর্ত ক্ষণিক

ভাবখানা গাঁটবাধা থাক বামুন রসিক
জোরে জোরে গায় এসে নিভু মোমবাতি
চমকানির মাঝে তবু স্থিরতা পথিক

ক্রমশ ভূভাগ ফাটে প্রত‍্যয় বাতিক
ভেঙে চাই ভাগশেষ ভাজ‍্য ভাঙা ছাতি
পলে পলে খুলে গেলে মুহুর্ত পথিক

হাঁটুমুড়ে শেষ নয় গল্পের শরিক
কিছু লিখি কিছু ভুলি চেনা জনজাতি
চমকানির মাঝে তবু স্থিরতা পথিক
পলে পলে খুলে গেলে মুহুর্ত ক্ষণিক
…….


ফেসবুক অ্যাকাউন্ট দিয়ে মন্তব্য করুন


মধুমিতা রায়

জন্ম উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট মহাকুমার অন্তর্গত বাদুড়িয়া গ্রামে। লেখালেখি ২০২০ সালের শুরুতে।

0 Comments

মন্তব্য করুন

Avatar placeholder

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।