হিল্লোল ভট্টাচার্য-এর কবিতা

হিল্লোল ভট্টাচার্য on

hillol_bhattercharya_kobita

রঙ্গন

রৌদ্র মুছে গেলে পর
এখনো রঙ্গন গাছের পাতা বেয়ে
আবডালী বিকেল নেমে আসে—।
বারান্দার গ্রিলে মাথা ঠেকিয়ে কেমন নীলাভ নিশ্চুপ
চিতি সাপের মত প্রতীক্ষিত কৈশোর
এঁকেবেঁকে মিশে যায়।

শরীরে নিষাদ জাগে
নোনা জলে হরিণীর ছবি রাত্রি দ্বিপ্রহরে
নার্গিসের মত। শরনিক্ষেপের আগে ধনুকের মসৃণ ছিলা
চন্দ্রাহত, অকারণ…গল্পে ভোর হয় পর্ণকুটিরে।

ভুল, শুধু ভুল
বালির গর্ত খুঁড়ে যে তৃষাগ্নি রূপকথা পুঁতে দিয়ে আসি
তার কথা জেনেছে কি কেউ? কান পেতে শোনে নি কখনো?
বেনিয়া গোলাপ আর হিসেবী অ্যাসর্টেড বোকে খবর রাখেনা তার।

শুধু রঙ্গন একা জানে তার খোঁজ।

অনেক বছর বাদে
হঠাৎ রোদেলা বিকেলে বৃষ্টির পর রামধনু দেখে
রঙ্গন হেসে ওঠে, ঠোঁট টিপে।
সেইসব অলীক গোধূলি, গ্রীলে মাথা রাখা কিশোর-কিশোরী, প্রতীক্ষার সেতু শেষে ঝরে পড়া জন্মদিন…
সব, সব মনে পড়ে তার।
প্রচ্ছদের ছবি আর কাগজের মলাটের নাম মেলেনা কখনো—
এ’কথাও রঙ্গনই জানে।

কথা ও নীরবতা

“যো ভি ম্যায় কেহনা চাহু
বরবাদ কৱে আলফাজ মেরে”
—- ইরশাদ কামিল

ফোন রেখে দেওয়ার আগে
দীর্ঘশ্বাস আর কিছুটা নীরবতা—
অধিকার বলতে ওইটুকুই শুধু
আসা যাওয়ার মাঝে

হাজার বার লিখে, মুছে, ছিঁড়ে ফেলি গ্রিটিংস কার্ড
হৃদয়ের কথাগুলো
অলিগলি হয়ে গুমঘর
ক্ষতমুখে উপশম চেপে ধরে আছি

আমি নিরপেক্ষ বসে দেখি—
আমার নীরবতা আর আমার ভাষা
আঙুল তোলে পরস্পরে
দু’দন্ডের জীবনপ্রবাহ
জায়মান প্রেম
আমার ছবিগুলো আমার শব্দেরা নষ্ট করে।
নৈঃশব্দরাও ছিঁড়ে কুটিকুটি, কালি লেপে একশা—!

ভেজাপাতা

আমি যে কতটা উদাসীন,
তোমার বিষয়ে আদতে নিরাসক্ত স্থিতপ্রজ্ঞ ধীবরের মতো
প্রমাণ করেই ফেলেছিলাম প্রায়—
প্রতিপাদ্যের শেষধাপ
কালি মুছে দিয়ে গেল অকালবর্ষায়
বুকের ভেতর জল আছড়ে পড়েছে বিপদসীমায়
আমি পুরষ্কার ফেলে আসি স্টেজে
আর অভিনয় পারি না !
ভেসে যাচ্ছে শহর, পুড়ে যাচ্ছে প্রতিটি ফোঁটায়
ধুয়ে যাচ্ছে তোমার গাঢ় জ্যোৎস্নার টিপ
আগল উপড়ে উপড়ে আমি হেঁটে আসি
প্রায় বলে ফেলি কানেকানে—
“মেঘ রাগে বেঁধেছি তোমায় আর
ডাকনাম রেখেছি অন্ত্যমিলে !”
যা বলার জন্য ভাষা সৃষ্টি হয়েছিল
শুধু তা না বলতে দেওয়ার জন্য কেন যে একটা গোটা সভ্যতা গড়ে উঠল—!

মিলোঁ হ্যায় খামোশী, বর্ষোঁ হ্যায় তনহাই

(১)

ক্রমশ দূরত্ব কমে আসছে আজকাল— এ’কথা আমিও বুঝি শুচিস্মিতা
অপরাহ্নের আলোর সওগাত
মোড়ক খুলে পড়ছ তুমি
ছুঁয়ে নিচ্ছ বুকে—

(২)

তবু
আমাদের বাকি পথ জুড়ে থাকে
“তবু, হাইফেন, তিনটে…” আর অপেক্ষা

(৩)

প্রচন্ড বৃষ্টিতে ভিজছে শহর
ডাকবাক্সের ডালা সশব্দে বন্ধ করে আমি দৌড়ে আসি ত্রিপলের নিচে;
মরুদ্যানের মতো একটা গুমটিঘর
শেষ সলতে জ্বলে বিমর্ষ ল্যাম্পের বুকে
আমি সিগারেট ধরাই ভেজা হাতে
একবুক নিকোটিনে সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে হাসি
বৃদ্ধ চা-ওলা গণৎকারের মতো ঘাড় নাড়ে—

“বাবুজী, ওয়াক্ত সে পেহলে অউর কিসমত সে জ্যাদা…”


ফেসবুক অ্যাকাউন্ট দিয়ে মন্তব্য করুন


হিল্লোল ভট্টাচার্য

জম্ম ২৪শে ডিসেম্ব, ১৯৮০ মুর্শিদাবাদের বহরমপুরে। কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং এর স্নাতক, বর্তমানে ডেনভার, আমেরিকায় প্রজেক্ট ম্যানেজারের পদে কর্মরত। সব ধরণের লেখা লিখলেও রহস্য-রোমাঞ্চ বা থ্রিলারধর্মী লিখতে বেশি পছন্দ করেন। অপদার্থের আদ্যক্ষর, অনুরণন, কল্পবিশ্ব, তিলোত্তমা, গল্পের সময়, আবেক্ষণ পত্রিকায় লেখা প্রকাশিত হয়েছে। এবছর বইমেলায় প্রকাশিত প্রথম রহস্যোপন্যাস "অফ্রিয়াজার অভিশাপ"।

0 Comments

মন্তব্য করুন

Avatar placeholder

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।