অঙ্গন মল্লিক-এর কবিতা
(১)
ঠান্ডা মাংস
ক্রমশ জটিল হয়ে ওঠে নিঃসাড় দেহটা
দুটো মিছিল মুখোমুখি দাঁড়ায় –
তিনটে কাক হেঁটে এসে জড়ো হয় মস্তিষ্কে
শব্দ ভেঙে নোংরা ছড়িয়ে যায় তারা।
তথাকথিত গান খেই হারিয়ে ফেলে,
মৃতের ঘুম শহরে রাত নামায়।
কুঁয়াশা ঢেকে দেয় রেললাইনের মুখ
মিছিল গুলো তবুও দাঁড়িয়ে থাকে।
উদ্ধত আগুন আশায় বসে থাকে
কারা যেন খুব নীচুগলায় বলে –
এবার আমরা দেখিয়ে দেব লড়াই !
ছোটো ঘর, দেওয়াল চিৎকার ফিরিয়ে দেয়…
ক্রমশ রাত সরে যায় টালির নীচে
শহর জেগে ওঠে, ধন্দ কেটে যায় ;
মিছিলেরা ফের একে অপরের মুখ দেখতে পায়
দেহগুলো হাসি মুখে এগিয়ে যায়, সৎকারে
সবশেষে, কিছু প্রাচীন কাকের দল
জড়ো হয় আমার আধখাওয়া কবিতার পাশে।
(২)
সন্ধেগামী
সন্ধেবেলার শরীরগুলো সুখের মতোই নায়াব্ ;
শহরজুড়ে ছাই। আদতে আমার তোমার ছায়া।
যেমন কিছু শরীর থাকে, আদড় মাখা মুঠো
ব্যালকনিতে রেলিং ঘেঁষে কাঁমড়ে ধরি দু়’ঠোঁট –
ব্যথার চোটে সব উবে যায়, এমনই বেহায়া।
ঘুমপাড়ানি কান্না যা সব চোখের সিলিং বোনে
দু’এক ফোটায় জ্বর এসে যায়, বিষণ্ণ রিংটোনে,
মনখারাপের প্রহর বোঝে নির্বাক চারপায়া।।
ক্লান্ত আকাশ, মেঘ ছেঁয়ে যায় সমস্ত অসুখে
অল্প কিছু পরিযায়ীর ঘর ফিরতি রুখে।
অসুস্থ দিন সমাধি যায়, গড়ায় মৃত বিকেল
নীরবতাই বেজে ওঠে মফস্বলের দিকে ;
আকাশ চিরে রোদ-মাংস ছিটকে লাগে মুখে –
বহু আগে জাহাজ ডেক-এ তোমার শরীর উড়তো
শেষ চড়ুইয়ের ডানায়, ঘুমের ছায়াটে মুহুর্ত।
সন্ধেগুলো ছাই হয়ে যায় শহরতলীর বুকে…
(৩)
পরিযায়ী
সংকটকাল ; মৃত্যুধ্বনি শুনি নরকের
ইট,কাঠ,পাথরের গায়ে –
থাকি শিরোনামে, ‘পরিযায়ী রাজসড়কে’
যত বিদ্রুপ মেশা দাবদাহে।
আমার বুক জুড়ে একাধিক প্রকান্ড হাঁ-
চোখে আর্তনাদের ছবি।
গুড়ো স্বপ্নের গায়ে বাস্তবের কড়া ঘা,
আছে মূল্যবোধেরও ক্ষত গভীর।
দ্রুত সভ্যতা চাকা – ব্যস্ত বিবর্তনে
আমার অস্তিতের সাড়া,
রাখি স্থায়ী অন্নের দাবি চির অনশনে
স্থায়ী থাকে দূর্ভাগ্যের তাড়া।
সংকটকাল ; মৃত্যু রুখি মুখোশ আড়ালে
দুঃখ আটকাবে কীসে ?
কালো অভিশাপে বেঁধে সেই প্রশ্ন ওড়ালে –
রাতের দুরপাল্লা যায় পিষে।
0 Comments