১৪ ই সেপ্টেম্বর, ১৯৪২ – জাতীয় পতাকা উত্তোলন – বালুরঘাট এর একটি ঐতিহাসিক দিন

স্বরুপ সান্যাল on

একদিনের জন‍্য হলেও বালুরঘাটে ব্রিটিশ পতাকা নামিয়ে ভারতীয় তেরঙ্গা উত্তলন হয়েছিল।

১৯৪২ সালের ১৪ ই সেপ্টেম্বর ঠিক আজকের দিনে একদিনের জন‍্য হলেও আমাদের বালুরঘাট স্বাধীন হয়েছিল।

১৯৪২ সাল ভারতছাড়ো আন্দোলন এই প্রস্তাব গৃহিত হলো। ৯ আগষ্ট “ইংরেজ তুমি ভারতছাড়ো”এই বানী দেশের আকাশে বাতাসে ধ্বনিত হতে লাগল। মহাত্মা গান্ধীর আবেদনে সারাদেশ উত্তাল হয়ে ওঠে। এই আন্দোলন বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে। শুরু হয় গনবিক্ষোভ শহীদ হয় বহু বিপ্লবী নেতা নেত্রীও যাঁরা এই দেশমাতৃকার সন্তান।

আন্দোলনের ঢেউ আছড়ে পড়ে আমাদের প্রিয় সংস্কৃতির শহর বালুরঘাটে। সর্বজন শ্রদ্ধেয় বিপ্লবী সরোজ রঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে বিশ্বরঞ্জন সেন, শৈলেন দাস, পুলিন দাসগুপ্ত জব্বার মিঞা প্রমুখ নেতৃবৃন্দ শহর দখল করার পরিকল্পনা করেন।

১৪ সেপ্টেম্বর ১৯৪২ বালুরঘাটের পাশ্ববর্তী অঞ্চল ডাঙ্গি থেকে প্রায় ১০,০০০ মানুষ এবং বালুরঘাট থেকে প্রায় ৫,০০০ মানুষ বন্দেমাতরম ধ্বনি দিতে দিতে বালুঘাটের আদালত চত্বরে ঢুকে পড়ে এবং সহিংস হয়ে সরকারী অফিস – আদালত অগ্নিসংযোগ করে, পোষ্ট অফিসের কাগজপত্র তছনছ করে, ট্রেজারী লুঠ, টেলিগ্রাফের তার কাটা, সরকারি গুদামের চাল,গম, রবিশস‍্য জনসাধারণের মধ‍্যে বিলিয়ে দিয়ে ব্রিটিশ পতাকা নামিয়ে ভারতীয় ত্রিবর্ণ রঞ্জিত জাতীয় পতাকা উত্তলন করে। সেই সময় মহুকুমা শাসক পানাউল্লা তাঁর পুলিশ বাহিনী নিয়ে পালিয়ে যান বালুরঘাট ছেড়ে। পরের দিন ১৫ সেপ্টেম্বর অবিভক্ত দিনাজপুর থেকে বিরাট পুলিশ বাহিনী নিয়ে উপস্থিত হন বালুরঘাটে। বালুরবাসীর উপর চরম আঘাত আনেন । অত‍্যাচার চরমে ওঠে এবং ৭৫ হাজার টাকা পাইকারি জরিমানা ধার্য‍্য করেন । প্রথম সারির বিপ্লবী নেতাদের ধরে দিতে পারলে মাথাপিছু ৫ হাজার টাকা থেকে ১০ হাজার এবং অন‍্যান‍্য উপহার দেওয়া হবে এই আর্জি জানান।

বিপ্লবীরা রাতের অন্ধকারে শহর থেকে দূরে পালিয়ে অজানা জায়গায় গা ঢাকা দেয়। ১৫ সেপ্টেম্বর দিনের আলোয় বালুরঘাটের চারণকবি সংগ্রামী জননেতা শ‍্যামাপদ খাঁ ও তাঁর সহকর্মী বন্ধু প্রবোধ চন্দ্র তলাপাত্র, প্রফুল্ল কুমার দেব প্রমুখ বিপ্লবী ব‍্যক্তিত্বরা ধরা দেয়।

বালুরঘাটে বিয়াল্লিশ এর এই আন্দোলন ভারতের মধ্যে পঞ্চম এবং বাংলার মধ্যে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে আছে ।


তথ্যসুত্রঃ

  • দিনাজপুরের গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় – সত্যরঞ্জন দাস
  • উত্তরবঙ্গের ইতিহাস ও পুরাকীর্তি, প্রথম খন্ড – সমিত ঘোষ
  • শারদীয় প্রত্যুষ – ১৪২২ বঙ্গাব্দ ।

ফেসবুক অ্যাকাউন্ট দিয়ে মন্তব্য করুন


স্বরুপ সান্যাল

জন্ম দক্ষিন দিনাজপুর জেলার রাঘবপুর গ্রামে । বাবা ফটিক সান্যাল, মা জবা সন্যাল । বর্তমানে দক্ষিন দিনাজপুর জেলার বালুরঘাটের চকভৃগুর স্থায়ী বাসিন্দা । গভীর অনুরাগ থেকে কবিতার জন্ম । মনের কথা ভাষা শিল্পে ছবি আঁকে কলম । প্রকাশিত কবিতার বইঃ "সদর দরজা খুললেই" , "বিপন্ন সুখ" , "স্বপ্ন উড়ান" ।

0 Comments

মন্তব্য করুন

Avatar placeholder

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।