বাংলাদেশের সাথে নজরুলের সম্পর্ক
এপার বাংলা এবং ওপার বাংলার মানুষের সংস্কৃতি সাহিত্যতে মিশে আছেন কাজী নজরুল ইসলাম ।
দু’বাংলার মানুষই কাজী নজরুল ইসলামকে সমানভাবে ভালবাসে। প্রতিবছর তার জন্মবার্ষিকী কিংবা মৃত্যুবার্ষিকীতে দুই বাংলার মানুষই শ্রদ্ধা ,ভালোবাসা এবং ভক্তির সাথে এই দিবসগুলো পালন করে থাকে।
তবে একজন বাংলাদেশী হিসেবে মাঝে মাঝে মনে প্রশ্ন আসে পৃথকভাবে কাজী নজরুল ইসলামের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক কেমন ছিল ।
এই প্রসঙ্গ ধরে নজরুলের জন্মবার্ষিকীতে আজকে আলোচনা করবো বাংলাদেশের সাথে নজরুলের সম্পর্ক।
কাজী নজরুল ইসলাম বর্তমান ভারতের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করলেও তিনি বাংলাদেশের অনেক স্থানে ঘুরে বেরিয়েছেন ,অবস্থান করেছেন ,সাহিত্যচর্চা, গান গেয়েছেন, বক্তব্য দিয়েছেন । ।এমনকি ১৯২৬ সালে এখানকার ফরিদপুর-ঢাকা কেন্দ্র থেকে নির্বাচনেও অংশ নিয়েছেন।
বর্তমান বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার সাথে কবির আত্মিক ও হৃদয়ের সম্পর্ক ছিল ।
কবি কাজী নজরুল ইসলাম প্রথম ঢাকায় আসেন ১৯২৬ সালের জুন মাসে, রাজনৈতিক কারণে তার প্রথম ঢাকায় আসা। ১৯২৮ সালে তিনি দ্বিতীয়বার ঢাকায় আসলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রী ফজিলাতুন্নেসার সাথে তার পরিচয় হয় তিনি ফজিলাতুন্নেসার প্রেমে পড়েন কিন্তু তিনি তার প্রেমে সাড়া দেননি।
আবেগ এবং হৃদয়ের প্রবণতায় কবি ফজিলাতুন্নেসাকে নিয়ে অনেক কবিতা এবং গান রচনা করেছেন।
তিনি এই বিদুষী নারীকে নিয়ে লিখেন “এ মোর অহংকার”।
কবিতাটির দু লাইন-
নাই বা পেলাম আমার গলায় তোমার হার,
(তথ্যসূত্র :-আমার বন্ধু নজরুল: তার গান-স্মৃতিকথা–কাজী মোতাহার হোসেন)
তোমায় আমি করবো সৃজন এ মোর অহংকার।
বাংলাদেশ নামটিও নজরুলের দেওয়া ।
তিনি তার কবিতায় লিখেছেন –
নম নম নমো বাংলাদেশ মম
চির-মনোরম চির মধুর।
বায়ান্ন থেকে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত সকল আন্দোলনে কবি নজরুল তার বিভিন্ন গান এবং কবিতার মাধ্যমে বাঙালি সংগ্রামী জাতিকে উজ্জীবিত করেন এবং উৎসাহ দান করেন। তিনি রচনা করেন কারার ঐ লৌহ কপাট ,ওরে ধ্বংসের পথের যাত্রী দল ,একি অপরূপ রূপে মা তোমায় , চল চল চল ,খাঁটি সোনার চেয়ে খাঁটি ,দুর্গম গিরি কান্তার মরু ইত্যাদি।
তাছাড়া ঢাকায় আসার পাশাপাশি তিনি এক বা একাধিকবার খুলনা এসেছেন ,খুলনা কবি কাজী নজরুল সাহিত্য,গান কবিতা ইত্যাদি কর্মকাণ্ডের সাক্ষী ।
কবি নজরুল ৯ অক্টোবর ১৯২৬ সালে এক চি়ঠি লিখেন কবি খান মোহাম্মদ মঈনুদ্দীনকে। সেখানে কবি নজরুল লেখেন:
স্নেহভাজনেষু মঈন,
(তথ্যসূত্র : দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকার ২০১৯সালে “খুলনায় কবি নজরুল : কিছু প্রস্তাবনা “শিরোনামে প্রকাশিত আর্টিকল )
আজ সকালে আমাদের একটি খোকা এসেছে। তোর ভাবী ভাল আছে। খোকা, বেশ মোটা তাজা হয়েছে। নাসিরুদ্দীন সাহেবকে খবরটা দিস, চট্টগ্রাম থেকে কোন কবিতা পেয়েছিল কি। আমার ‘সর্বসহা’ দিবিতো সওগাতে? নতুন লেখা শিগগিরই দেবো। আমি যশোর খুলনা বাগেরহাট ঘুরে আজ ফিরছি…।
ইতি কাজী ভাই।
তাছাড়া কবি নজরুল এভাবে রাজনৈতিক এবং সাহিত্যের কাজে বর্তমান বাংলাদেশের নোয়াখালী, সন্দীপ, সিলেট, কুষ্টিয়া, রংপুর, কুড়িগ্রাম, মাদারীপুর, ফরিদপুর, দিনাজপুর, বগুড়া, রাজশাহী, সিরাজগন্ঞ্জ সফর করেন। কবি যেখানেই যেতেন সেখানেই মানুষের ঢল নামতো। কবি ও তাদের সান্নিধ্যে, আড্ডায় জমিয়ে রাখতেন পুরো সময়।
১৯৭১ সালে লক্ষ প্রাণের রক্তের বিনিময়ে আমরা পাই স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পরপরই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগে কবি নজরুলকে সপরিবারে বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়।
রাজধানী ঢাকার ধানমন্ডিতে কবিকে বসবাসের জন্য একটা বাড়ি প্রদান করেন ।
মধ্য বয়সে কবি কাজী নজরুল বার্ধক্যে ভোগেন এবং দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর ১৯৭৬সালের ২৯আগস্ট ঢাকায় মৃত্যূবরণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গনে কবিকে কবর দেয়া হয়।
পরিশেষে কিছু কথা বলি ,ধর্ম ও রাজনৈতিক কারণে হয়ত বাংলা বিভক্তি ঘটে ।কিন্তু কাটা তাঁর কি পেরেছে দুই বাংলার সংস্কৃতিতে ,ভালোবাসা এবং ঐতিহ্যে কাটাতাঁর তুলতে ?
পারে নি, তার একটা উৎকৃষ্ট উদাহরণ ছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম ।নজরুল তার কলমে ,মস্তিষ্কে ,সাহিত্য এবং ভালোবাসায় দুবাংলার মানুষের মধ্যে কোনো কাটাতাঁর আনেন নি। ভালোবেসেছিলেন দুই বাংলাকেই।তাই তো ভারতীয় বাঙালি এবং বাংলাদেশের মানুষ তাকে সমানভাবেই ভালোবাসে ।
এই ভালোবাসা কাটাতাঁরের ভাগ মানে না।
নজরুল মিশে থাকুক আমাদের সংস্কৃতি সাহিত্যের উচ্চাসনে ।
এক নজরে কাজী নজরুল ইসলামের জীবনী:
জন্ম -- ২৫ মে ১৮৯৯ চুরুলিয়া, বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি,
ব্রিটিশ ভারত (বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ )।
মৃত্যু-- ২৯ আগস্ট ১৯৭৬ (বয়স ৭৭)ঢাকা, বাংলাদেশ।
মৃত্যুর কারণ -- পিক্স ডিজিজস ।
সমাধিস্থল-- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ প্রাঙ্গন।
জাতীয়তা-- ব্রিটিশ ভারতীয় (১৮৯৯-১৯৪৭)
ভারতীয় (১৯৪৭-১৯৭৬)বাংলাদেশী (১৯৭৬)।
অন্যান্য নাম-- দুখু মিয়া ।
পেশা--- কবি ঔপন্যাসিক, গীতিকার সুরকার,
নাট্যকার, সম্পাদক।
উল্লেখযোগ্য কর্ম-- চল্ চল্ চল্, বিদ্রোহী ,নজরুলগীতি,
অগ্নিবীণা (কাব্যগ্রন্থ),বাঁধন হারা,ধূমকেতু,
বিষের বাঁশি,গজল।
আন্দোলন-- বাংলার নবজাগরণ।
দাম্পত্য সঙ্গী-- প্রমিলা দেবী ,নার্গিস আসার খানম।
পুরস্কার-- স্বাধীনতা পুরস্কার (১৯৭৭), একুশে
পদক(১৯৭৬)পদ্মভূষণ।
তথ্যসূত্র :গুগল, বাংলা উইকিপিডিয়া ।
1 Comment
ইফতি · মে 26, 2020 at 10:55 পূর্বাহ্ন
ধন্যবাদ লেখিকাকে🙂