স্বপ্ন বৃত্তান্ত

১
রাস্তায় আমাকে সবাই ঢিল মারছিল। লাল ঢিলগুলো সব কোকাবুরু বলের মতো। একটা করে উইকেট পড়ছিল আমার। পাওয়ার প্লে শেষ হয়ে গেলে মধ্য গগন থেকে মধ্য গতির বোলার ছোট রান আপে ছুটে আসায় – কিছুটা সময় ছিলো, ক্রমহ্রাসমান গতি যতটুকু সময় দেয়। সময় বিরতিতে ব্যাট দিয়ে পিচ ঠুকে দেখছিলাম। ব্যাট পিচে ঠুকতেই আওয়াজ ঊঠছিলো কখনও ঝন ঝন, কখনও ঠক ঠক, ক্রিং ক্রিং – মোরগের ডাকের মতো কিছুটা ভোরের আওয়াজ। ভাঙা উইকেট সহ আমি হাঁটা শুরু করলাম বিশাল একটা শাল গাছের দিকে। শাল গাছ করুন ভাবে তাকিয়ে একটা বড়ো হলুদ পাতা দিল। সেই পাতায় চেপে হলুদ মেঘের দিকে গেলাম। হলুদ মেঘ কেঁদে উঠল, বৃষ্টি হলো দু-এক ফোটা — অশ্রুবারি হলো। ভিজলে পাতা ভারি হয়ে যায়। নীচে পড়ে যেতেই আমি ছুটতে লাগলাম জনশূন্য একটা মাঠের দিকে। মাঠ ফাঁকা। ওপর থেকে আমাকে বৃত্তের কেন্দ্রবিন্দু মনে হলো কিছু শকুনের। শকুনেরা ঘুরতে লাগলো মাথার ওপর। মধ্যগগন থেকে দীর্ঘাঙ্গী দৃষ্টিসিঁড়ি দিয়ে নেমে আসতে লাগলো কৃষ্ণকলরব।
দূরে দূরবীনে আমারি মতন কেউ দেখেছিলো সব। দেখেছিলো চাপে-তাপে চৌচির মাটির ভূ-ভাগ জুড়ে একদল কৃষকের ঋণ মকুবের কান্না, ফাঁসির দড়ির মতো শুকনো নদীগর্ভ বালি।
২

ধান ক্ষেতে শুয়ে আছি। ধানের শুকনো নাড়াগুলো ঘুমোচ্ছে। উৎসব শেষ, পরিশ্রমেরা বেকার। আড়তদারের ধান ভর্তি ট্রাকের চাকাটা একটা খালে পড়ে শুধুই ঘুরছে। সুপ্রিমকোর্ট দেখতে পাচ্ছি, গোটা সুপ্রিমকোর্ট জুড়ে গান গাইছেন এক ভিখারিনী, লতার গান- পুরানো হিন্দি সিনেমার।
আমি ঘুমচ্ছি, ধানের নাড়াগুলো নাক ডাকছে ততোধিক। মোরগ লড়াই হচ্ছে। পাউড় গুলোকে সব টাঙিয়ে দেওয়া হচ্ছে তীর চিহ্ন দেওয়া আড়াআড়ি একটা লৌহদন্ডে। আর জিতকার মোরগগুলি লম্বালম্বি আরেকটা লৌহদন্ডে।
ধানক্ষেতের পাশে একটা অশ্বত্থ গাছ, ঝুরি আছে। গাছের নীচে মানত করা সিঁদুর মাখা কিছু পুতুল, একটি মাটির হাঁড়ি আর শাল পাতার থালা রাখা আছে।
সুপ্রিমকোর্ট থেকে একটা মিছিল জনশূন্য ধানক্ষেতের দিকে এগিয়ে আসছিল। মিছিল থেকে একটা গেরুয়া পোশাকের লোক আমাকে তিলক লাগিয়ে চলে গেল। গান গাইলেন ভিখারিনী —– ঘুম ভেঙে গেল।
৩

দৈনিক কাগজের উপর আমার পচা দেহ পড়ে আছে, জিভ বের করা, জিভে মাছি বসছে – পিঁপড়ের সারি পা থেকে ঘিলু অবধি। এখানেও লাল-কালোর একটা ভীড়। ভীড় ঠেলে একটা রাস্তা শুকনো নদী পর্যন্ত যায়, নদীর নীচে ফসলের ক্ষেত। বাকি অংশ চারের পাতায়…
চারের পাতায় সম্পাদকীয়। বাজার স্টাডির পর সেখানে আমার দেহাংশ সহ বিগত পাঁচ বছরের স্ট্যাটিসটিক পড়ছেন একজন ধোপদুরস্থ মধ্যবিত্ত বৃদ্ধ। অবশিষ্ট কয়েকটা মাথার খুলি পড়ে আছে সুপ্রিম কোটের পাচিলের ধারে, ঘাস হয়েছে ওখানটাই, কাচা ধানের মতো ঘাসেদের রঙ। আমি দাঁড়য়ে আছি – এ আমি ভবিষ্যতের অতীত। সুতরাং জীবন্ত।
দেখছি, কিছুটা দূরে “ নো এন আর সি” লেখা বোর্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে একটা ভীড়। ছাওনি নেই, খ্যাট খ্যাটে রোদ। গেরুয়া পোশাকের লোকটি চন্দনের বাটি নিয়ে ছুটে যাচ্ছে নাগরিক কপালের দিকে। আমার দিকেও ছুটে আসছিল সে, অমনি আমার কপাল ঘেমে গেল, আর কাগজের স্তূপ হো হো করে হাসতে লাগলো আমার মুখের ওপর।
… … … ঘুম ভেঙে গেল ।
1 Comment
সোহেল · আগস্ট 8, 2020 at 4:11 অপরাহ্ন
একদমই অন্যরকম… খুব সুন্দর হয়েছে রে