সূরজ দাশ-এর একগুচ্ছ কবিতা

ঘুমের ফলন কমে গেছে এইদেশে
শোনা যায় ঘুমের ফলন কমে গেছে এইদেশে
শীতে যারা ফেরী করতো খেঁজুররস
তারা আজ ঝাপসা অতীত
ছায়ার পেছনে টলতে টলতে ছুটে যায়
তুষার ঝড়ের গুঁড়ো গুঁড়ো নীল অন্ধকার
অর্ধেক আগল খুলে তুমি তো সেই
পুরাকাল থেকে আছো এই
পরবাস মেঘ বারান্দায়
বৃষ্টি নামাও তুমি এরপর
সারাদিন বসে থাকি
বসে থাকি আর শুয়ে থাকি
শুয়ে থাকি আর গুনি আকাশের তারা, দিনভর
দিন যায়, রাত যায়
বয়ে যায় চোখের সামনে দিয়ে
দৃশ্য অদৃশ্য ও মানুষের অন্তহীন রাত
ছায়ারা ক্রমশ লম্বা হলে
এখানে হালকা হয় ভোরের আকাশ
বাতাসের গায়ে মাখামাখি হয় ভালোবাসা
গড়িয়ে পরে জল আগুন ভবিষ্যৎ
পা টিপে পা টিপে সতর্ক
বয়ে চলা এই মুক্তির জীবন
কত কি জরিবুটির খোঁজে ডিঙায় পাহাড়
শূন্যতা ভরাতে বেজে ওঠে মেঘমল্লার
ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামাও তুমি এরপর
কিছুই করি না আমি তবু
সারাদিন বসে থাকি, শুয়ে থাকি
বসে থাকি আর হাওয়া বাতাসের সাথে
এপাশ-ওপাশ করি, জন্ম-জন্মান্তরের অনন্ত যাপন
পৌরাণিক তরোয়াল
তারপর বলো, আমার এই বিস্তীর্ণ যাদু অঞ্চলে
কাকে চেয়েছো তুমি
যেটুকু না বুঝে বিঁধেছিলে আমাকে
গড়েছিলে ছায়ার আখ্যান
যেটুকু না হলে তুমি নিপীড়নে নীল হয়ে যেতে
যেভাবে না জেনে এসেছিলে ঘোর বিপ্রতীপে সেদিন
সেভাবেই বৃষ্টি ভিজে সাংসারিক উচ্ছ্বাসে থেকো
যেন মূর্খ আমি দরদী স্বজন
এসো এসো প্ররোচিত মুগ্ধছায়া
এই অবেলায় এভাবেই দ্রবীভূত হই অসম দ্রবনে
এসো এসো, বনবিবির সমুদ্র বাতাস
দ্রুতগামী পদক্ষেপে নিয়ে চলো আজ
বানভাসি বিকেলের দিকে
সেখানে যত্ন মেখে পড়ন্ত বেলার রোদ্দুর হবো
আমাদের বন্ধ্যা অভিজ্ঞান যাই বলুক না কেন
এতটুকু দুঃখ নেই, এরপরও তবু
চমকের পাশে শ্রাবণ হবো তোর
আগুন বৈশাখে হবো পৌরাণিক তরোয়াল
আগুনকে বলো চুপ থাকতে
দূরে দূরে সেরে ওঠে অসুখের রত্নগর্ভা বীজ
বুকের চোদ্দহাত নিচে খেলা করে
আগুন নামক প্রেমিকারা
ফুটো হাড়ির তল দিয়ে টুপটাপ
গড়িয়ে যায় সকাল-দুপুর-সন্ধ্যে, এভাবেই
বাতাসের অন্ধকারেরা পাখিবাগানের দিকে
রোজ রাতে ঘুরতে যায়
যেমন আসতে তুমি
আমার অন্ধকার দুয়ারে
এখন কেবলই তন্ময় আবেগ আর শিহরণ ঘিরে তঞ্চকতা
কে কাকে টপকে কে কোথায় !
রোদ্দুর না আসতেই তুমি পুড়ে যাবার কথা বলো
আগুনকে বলো চুপ থাকতে
ইতিহাসে ঘষে দাও কথার চাবুক
এসব আর ভালো লাগে না কিছুই ফুল্লরা
আজ থেকে কেবলই তুমি গাছেদের কথা বলো
শ্রাবণের কথা বলো
জ্বলজ্যান্ত ভেসে থাকার কথা বলো
যেভাবে অনন্তকাল ভেসে ছিল আমার পুর্বপুরুষেরা
খুলে নাও এই পিঞ্জিরা আমার
ছিল না ফেরার কথা
তবু ফিরে এলাম এই সবুজ অন্ধকারে
ঠোঁট থেকে গড়িয়ে পড়ছে রোদের চুন সুড়কি
আর জীবনের ভণ্ডবিলাস
কাঠামো জুড়ে কি সুরক্ষা বলয় খুব প্রয়োজন ?
আবারও কি যেতে হবে যুদ্ধে ?
খাঁ খাঁ বিছানা বালিশ মশারির ঘেরাটোপে
এসো শান্তি, এসো শ্লোক
এসো সাদাফুল, ব্রহ্মকলিতা
খুলে নাও এই পিঞ্জিরা আমার
বৃষ্টি ছেটানো ঈশ্বরীয় ইশারায়
ফেরার কথা কি ছিল আমার
এই রাস্তায়, ওই রাস্তায় ?
সঘন গহন আনচান ব্যথা বেদনায়
বজ্রপাত আর স্ফুলিঙ্গ চেতনায়
তুমি তো রোজ আসো ঘুরেফিরে
আমার ফুল-বারান্দায়
ট্রেনের জানলার বাইরে চোখ রেখে
আদিগন্ত সবুজ বলছে আমাকে
তোমারও কি ফেরার কথা ছিল এই রাস্তায়?
তাই কি ? হয়তো বা !
ফিরিবার নানা অছিলায় হাতে তুলে নিই
তেজহীন শরীরের শুকনো জলোচ্ছ্বাস
এসো শান্তি, এসো শ্লোক
এসো সাদাফুল, ব্রহ্মকলিতা
খুলে নাও এই পিঞ্জিরা আমার
0 Comments