স্নেহাংশু বিকাশ দাস-এর ৬টি কবিতা

আউধ ১৫৯০ ও মধ্যরাতের ওড়না
তোমার বইমেলা ধরে হেঁটে যাওয়া কতকাল
গেরস্থালি সরিয়ে রেখে নরম লিপিটিকে স্পর্শে রেখেছে
এক চিলতে ঠোঁটে সূর্য নিভে গেলে খাঁ খাঁ করে ওঠে
উৎসব, মনকেমনের অন্ধগলিতে সন্দেহ রেখে দেবে উবের পথ
আমার অনিদ্রা থেকে জ্যোৎস্না ঝরে, আর ঘুম ভাঙে কোলাহলের ভেতর
তখন আউধ আর মিথ্যে লাগে না, ওড়নার অপেক্ষা গড়িয়ে
মনে হবে বাঁশি বেজে ওঠে অজানা রাত্রির দিকে, কিছুটা গুণ্ডিপান
প্রশ্নহীন নেমে এল গঙ্গার ঘাটে – এঁকেছ মধ্যরাত নাকি
বান্ধবীর বসন্তবাতাস, বুঝতে না পেরে জলকেলি দেখে
রাত্রি সফরগুলি, দেখে ফুলকিশোরীর নৌকা গতিপথ
বারবিকিউনেশন থেকে সংযম রেখেছে মুগ্ধপুরুষ
বহুদিন পর রাত্রি ফিরেছে হলুদ চোখের পথ ধরে
এই অবেলায় অতীত ফিকে লাগে, ঘুম চলে যায় কোল পেরিয়ে
কোনও বিশেষ একটা দিন তুমি ছুঁতে পারলে না অথচ
বাঘেদের স্মৃতি তুমুল হয়ে ফিরে এল রাতের টেবিলে
শস্যক্ষেত পুড়ছে, তার কোনও মায়াবী স্মৃতি নেই পুরনো পালকে
কোথাও অসুখহীনতার দিকে ইশারা জাগে, কত অপচয়
ভ্রান্ত নদীটিকে শহরের দিকে মুখ ফেরাতে বলে ঢেউ
ওই তো অভিশাপ, বিবর্ণ অক্ষরখেলা – দিনগুলো ভরে থাকে
বছরভর, সেই অন্যমনস্ক চাহনি – ফড়িঙের ছায়া – বিরতিচিহ্ন
আহত রাতের স্পর্শ নিয়ে ঘুমের কপালে বৃষ্টি ঘনিয়ে এল
সন্ধেগুলো নিয়ে বয়ে গেছে বাগজোলা খাল
দিনগুলো ভেঙে যাচ্ছে দ্রুত, তার কামজ রূপকথা
প্রবল হাওয়াতেও স্থির হয়ে আছে সজনে পাতায়
তুমি নাচের মুদ্রায় মেলাতে দেবে না দাবানল
মনে হয় মন্দির পেরোলে মসজিদ অল্প ছুঁয়ে থাকে
রক্ত ক্লান্ত হলে চিত্রনাট্যহীন চিলেকোঠা নেমে আসে
আর এমন কটাক্ষ – বিকেলের পার্কস্ট্রিট কেঁপে ওঠে
সমস্ত হারিয়ে যাওয়ায় কেন যে নরম মাটি লেগে আছে
তোমার উৎসব শেষে অসুখ লুকোতে হয় ঘরের ভেতরে
তখনও তুমুল ভ্রূ-ভঙ্গি ঘুরেফিরে বেড়াচ্ছে আউট্রাম ঘাটে
ফুচকাওলার বুকের ভূমধ্যসাগর পেরিয়ে এক প্রসন্ন আকাশ
অজস্র স্বপ্নের ঘোরেও তোমাকে পথ দেখায় ভাঙন পেরিয়ে
এসব শান্ত দিন এই শহরের লুকনো ব্যথায় মজে উঠছে
সত্যিই যেভাবে সন্ধেগুলো নিয়ে, পথের নিঃশ্বাস নিয়ে বয়ে গেছে
বাগজোলা খাল, সেভাবেই বালকবেলা সোনালি ভাঙন সাজালে
এই শহরের দিনগুলো পুতুলের মত ঘুরে বেড়ায় ঘোলাটে বলয়ে
ধূপের গন্ধে উড়ালপুল দিল নষ্টশরীর
কবেকার পুরনো ভুলগুলো ধূপের গন্ধে মিশে গেছে
এখন ঘুমের ভেতরে রঙতুলি টান, একা সঙ্গমে জাগে
নষ্ট নাটকের ঘোর প্রচ্ছন্ন রেখেছে ফুলকিশোরীর ঘ্রাণ
তার গরম ভাতের থালায় রূপসী ঝাউবন, হু হু রোদ
এ বছর বসন্ত আসেনি পঞ্চসায়রের দিকে
শরীর জুড়ে এখন অগুন্তি উড়ালপুল, ঈর্ষার উৎসব
তবুও স্মৃতি সাক্সেনার চুম্বনে উড়ন্ত চিলের ডানার শব্দ শোনা যায়
আর কোনও অবসাদ নেই, অনুতাপ নেই, মৃত্যুকাল উড়ে যাবে
এক নদীবাঁধ থেকে অজস্র রঙ ও শমীবৃক্ষের ছায়া সেতুটির বুকে
এসে ক্রমাগত পালটে দেবে বন্দরহীন নাবিকের সাতকাহন
জানালা
নিপুন এক হত্যাদৃশ্য পেরিয়ে বিকল্প জানালা
প্রতিধ্বনি থেকে একটা অর্ধমৃত ঝর্ণা শুরু হয়, সেখানে
জোনাকিদের বেহালা শোনাবে বলেও তুমি তীক্ষ্ণ রোদের দিকে সরে গেলে
আমি বুঝে যাই আকাশমণি গাছ স্মৃতিহীন হল
তুমি ফিরে যাবে জটপড়া কুয়াশার দিকে
জটগুলো খুলে যাচ্ছে অজান্তেই
অথচ তখনই আমার আত্মহত্যার প্রবনতা ক্রমশ বেড়ে যায়
একটা ভাঙাচোরা বাস আমাকে তুলে নিয়ে গেছে
অনেক রাতে মনে পড়ল
আমি নিঃসঙ্গ হয়েছি অহরহ
সে কথা লুকিয়ে রাখতে পারিনি
সে কথা তো কেবল অপচয়, কাউকে বোঝাতে পারিনি
রঙ
রঙের তুলিতে যতটা রঙ ততটাই বসন্ত
খানিকটা আকাশ এই সংক্রামক কবিতার রাতে
কুয়াশা দিয়ে এঁকে ফেলে পূর্ণিমাতিথি
শরীরে আলোকবর্ষ দূরের বিষাদতরী
নিয়ে যাচ্ছে ধ্বংসের দিকে
নোনাজল ভেঙে দিল আকাশকবচ, মায়া
রঙিন ঈশ্বর এল তোমার জীবনে
0 Comments