অভি সমাদ্দার-এর গুচ্ছকবিতা

জলকথাগুলি
১.
দুঃখ ও জল
এই দু’টি শব্দের মাঝে মনে পড়ল
চোখের কথা
সেই ঝরে পড়া জলটুকু
তোমার আত্ম
আত্ম ছড়িয়ে পড়ে যতোদূর
ততোদূর কবিতা !
২.
থাকার মধ্যে আছে, থাকে এক আশংকামধু
কেন যে এই জোড় !
রীত ও বিপরীতে কেন যে এই টান
টেনে রাখে তোমার খাঁজে খাঁজে
আর আমি শিস শব্দের অন্তরে
ডোন্ট-কেয়ার পান্থটি
আলোবিন্দু আর অন্ধবিন্দুর কাঁধে
হাত রেখে পেরিয়ে যাই সাঁকো…
৩.
তখন বেলা পড়ে এল
জলে একটা লালচে আলো
ঠিকরে এসে মন-কে
মিহি করে কাটল দু’পাশে
শব্দ হল না
শুধু কেঁপে উঠলো জলের প্রদীপ!
৪.
উড়ন্ত তোমার পাখির ক্রিয়া।
ঘুরে ঘুরে উড়ে যায়
চোখ ছোঁয়া চোখের আকাশে
পাথরে কি প্রতিধ্বনি ওঠে !
পাথরে প্রতিধ্বনি ওঠে।
৫.
জলের স্বভাবে ঘুরে ঘুরে
কথা বলত একজন
পাথরে,আঘাতে জল
কথা বলে স্রোতে,কুহু-তে !
৬.
তুমি ছিলে তোমার নিখিলে-
শালবনে সন্ধ্যা আসে
নিশ্চুপে, চাঁদ ঝুঁকে থাকে
দুটি ছায়ার উপর
ছায়ারা গর্ভসম্ভূতা!
৭.
শব্দ কীভাবে পড়ো তুমি
নীরব মিশিয়ে শব্দ
শবানুগমনে যায়
নীরব কীভাবে পড়ো তুমি
জলের কাছে কেউ
নির্জনে দাঁড়ায়
হন্তারকের ফুলবাগান
১.
জলের গঠনে যেটুকু শ্বাসের পরিধি
একটু একটু ক’রে চুষে নিচ্ছি
পাহাড়, বরফ মাস্তুল
পুকুর ও পুকুরিয়া আঁতের শালুকসন্ধ্যা
ছিঁড়ে নিচ্ছি নদীর বহতা, তার ভাঙা হাড়ের বিদ্যুৎ
সবই এক নিগূঢ় বেদনার ফলনে
খামারে খামারে ধ্বনি সংগ্রহ করি
তার হা ও ঘুর্ণন। তার সবুজ ও আশ্রিত
ঘাসের শরীরে শুয়ে ভাবি, আগামীসন্ধ্যায়
পাখিহত্যার পদ্ধতিও আমরা শিখে নেবো পরস্পর
কখন রাত্রি ঘনায় কখন নৈঃশব্দ্য ঝরে পড়ে
আমরা জেনে নেবো আহা
কালচে আদলে
স্মৃতি ও স্মরণীয়
পংক্তি বিভাজন
২.
এ বাগানে লালন বাউলের বিষাদ বেজে ওঠে
মাঝে মাঝে সেই সুর আদি ও অন্তিমে
তোমাকে তল সূত্রের গাঁথনা দেবে। যা সহজ পুস্তকে তুমি হামেশাই দেখে এসেছো, এতোকাল। অবাকফুলটির
দিকে গড়িয়ে দেবে স্থা-এর বর্ণ।
তবু মন ও মখমল
বয়ন ও সুতোর অদ্ভুত দূরত্বে লিঙ্গ নড়ে ওঠে । লিঙ্গ মানে কলিম-কথিত সকল উৎসের দিকে
সকল সমানুপাতিকে তুমি জানবে
মূর্ত ও মতবাদ
যদিচ ফেলনা নয়,তদুপরি নেহায়েত ঘাতক !
৩.
কার কান্না আর কার হাসি জোড়া লাগবে
তা শেষ পর্যন্ত জানা যায় না।তুমি শুধু নীরববাথানে,মেঘের উড়াল ও দিকের ছলনা নিয়ে বসে থাকো।তবু জলের প্রার্থণায় সবাই হাত গুটিয়ে প্রণত হবে। এও তো কোন সমাধান নয়। মাটি সিক্ত করা। মাটির ভিজে ওঠা, তা যে কি অপারউৎসব। তা যে কি অপর ছিন্ন কুসুম কুসুম।।রক্তচ্ছটা। সে ঘটন তুমি প্রত্যক্ষ জানো। কিন্তু সত্য কী। এই
তর্ক আজো চমৎকার হল না। শুধু চিৎকার ছড়িয়ে পড়ে। আকাশের ওপারে আকাশে, বাতাসের বার্তাবহনে।
৪.
মাটি ও মানুষ। ছাই ও আগুন। এ সিদ্ধান্তে তুমি প্লুত হও।যদিও অশ্রুরেখার বর্ণন কোন ইতিহাসই
লিপিবদ্ধ করে না।সে ধর্মও তার নয়। তবে ধর্ম কী হে রাজন্। বায়ু ও শ্রুতির বিভেদই কি ধর্ম।তুমি প্রশ্ন কর। ধারক ও ধারণার বিকৃতি কি ধর্ম। তুমি জানতে চাও। বুদ্ধ হাসেন, স্মিত। তার হাসির আবাহনে রাশি রাশি বুদ্ধিমণিকনা ধেয়ে আসে। ধেয়ে আসে অন্যমতের মজাটি আগুন।
যা বাগানচত্বরে তোমাকে আড় নয়নের ইশারা দেয়।যখন তুমি, প্রতীক ও প্রতিমার মাঝ বরাবর ভারতবর্ষীয় পলকটির
মুচকি কুড়িয়ে নিচ্ছ।অচঞ্চল
৫.
জলের বেদনাগুলি,বীজের উৎসেচক।
যা সহস্র আদরে তাকে লালন করে। ঘিরে রাখে।
সেইরূপে নিমেষনিয়তি ও তার পদধ্বনি মিশিয়া থাকে।নিশ্চুপ।
যেহেতু তুমি দূরের অশনি ও তার সংকেত মুছিয়া, সুচারু করো, বাঁচা।অপত্য আগলে রাখো।আগলে রাখো মানবজমিন।আর সে সময়সুযোগে নব আধারে তোমাকে দেখায় সোনালীবলয়। যেখানে দিনগুলি শান্ত ও সমাহিত।
আর অলক্ষ্যের ডোরা কাটা ঝিলিকে
সময় বহিয়া যায়… সময় ফিরিয়া আসে…
0 Comments