বিভু খুব জোরে হাতপাখাটা নাড়ছিল। বন্ধ করল একমুঠো বাতাসের সাথে অজস্র মিষ্টি গন্ধ নাকে এসে লাগায়। আস্ত নার্সারির মালিক হয়েও চারাগাছগুলোর অস্তিত্ব এতক্ষন বিভু টেরই পায়নি।
বরাবরই সে এরকমই আনমনা। যদিও প্রকৃতির এত সান্নিধ্য তবুও বিভু বড় বেশি রকমের নীরস।
পা ঘষটানোর শব্দে ঘোর কাটল তার। “উফ্ আবার সেই বুড়িটা!”। গত একমাস ধরে প্রতি সপ্তাহেই আসে বুড়িটা,লতানো হলুদ ফুলের বীজ চেয়ে নিয়ে যায়। একটা পা নেই, অন্য পা টা ঘষটে ঘষটে চলে। সেই পায়ে টুকটুকে লাল আলতাটা বড্ড বেশি চোখে লাগে।
প্রথম প্রথম দিয়ে দিত বিভু কিন্তু অাজকাল খিটখিট করে দেওয়ার আগে,এইরকম মন্দার বাজারে কাউকে বিনেপয়সায় কিছু দিতে কারই বা আর ভাল লাগে,তাও আবার বারবার! শুধু বুড়ির অন্ধকারে ডুবে যাওয়া মুখটা দেখতে পারে না সে।
আজও অনেক চিৎকার চেচামেচির পর বুড়ি যখন বীজ নিয়ে চলে যাচ্ছিল,বিভু বলে উঠল,”যতই লালন পালন কর,ওরা তোমার চিতায় আগুন দেবে না!”। বুড়ি একগাল হেসে চলে গেল।
মানুষের মনও কী অদ্ভূত,গত একমাস বুড়ি আর বিভুর দোকানে না অাসায়,সে বুড়ির বাড়িতে এসে পৌঁছেছে। কে জানে কীসের আগ্রহে।
বাড়ি তো নয় একচিলতে কুঁড়েঘর। একটা অপূর্ব সুন্দর গন্ধ পেয়ে ঘরের পেছনপাশে গিয়ে দেখল একটা সবুজ রঙের বেদি,তার উপর থেকে হলুদ রং এর তীব্র আলো ছিটকে পড়ছে চতু্র্দিকে। একটু এগিয়ে যেতেই বিভু বুঝতে পারল সেটা সেই লতানো হলুদ ফুলের জঙ্গল। সূর্যের আলোয় তার এই রূপ,রস দেখে অবাক হয়ে গেল বিভু। কই তার বাড়িতেও তো এই ফুল আছে তার তো এমন অাভা নেই! হঠাৎ হলদে অাগুনের ফাঁকে লাল রং এর কিছু ফুল দেখতে পেল বিভু,আরো ভালো করে দেখার জন্য লতাপাতাগুলো সরাতেই বুকটা ছ্যাঁৎ করে উঠল!
লাল আলতায় মোড়ানো পা টা দেখে কোনো নববধূর পা বলে সন্দেহ হয়। তবে ,এতক্ষন যেটাকে বেদি বলে ভাবছিল বিভু, সেটা আসলে…………..। নিজের থেকেই তার চোখটা চলে গেল হলুদ ফুলগুলোর দিকে,কানে বারবার বাজতে লাগল সেই কথাটা,”ওরা তোমার চিতায় আগুন দেবে না!!”।
0 Comments