গোড়ার কথা

পাড়াতে বাগানওয়ালা বাড়ি আর নেই বললেই চলে। সব মাল্টিস্টোরিড বনে গেছে। নিচে গ্যারাজ। মুদির দোকান উঠে হয় বিউটি পার্লার নয় বুটিক হয়েছে। সব মাল্টিস্টোরিডে একজন ওয়াচম্যান থাকে। বিশ্বস্ত হওয়া চাই শর্তে। বড় পেপসি বোতলে জল। টিফিন ক্যারিয়ারে ভাত,সবজি ,ডাল। সারাদিন ঝিমানো। সকালে একটু কাগজটা চোখ বুলানো। ক্লাস সিক্সের বিদ্যেতে যেটুকু হয়। আর খাতাতে নাম লিখতে বলা। টাইম লিখতে বলা। যাতে বাইরের ঝামেলা ঘরে না ঢোকে। ফোনে গান শুনতে শিখেছে ইদানীং। নাম ভাল করে চেক করতে হয়। কে এলো।কে গেলো। শেখর পালের বাড়িতে তন্ময় ভাদুড়ি এযান্ড ফ্যামিলি। বিশ্বদেব সাহার বাড়িতে হরেন ঘোষাল। রত্না সেনের বাড়িতে আকাশ চৌধুরি। ইন্টারকম আছে। কেউ এলে ফোন করে দাদা বা বউদিদি কে খবর দিতে হয়। তারপর অতিথিরা শোঁ করে লিফ্টে উঠে ওপরে যায়। গ্রামে থাকতে কখনো এসব দেখবে ভেবেছিল? সবার হাতে বড় বড় ফোন। দেওয়াল জোড়া টিভি। হালে পাড়াতে ভাল জলের লাইন লাগছে। আর্সেনিক মুক্ত । একে উন্নতি বলে। হালদারকাকু সংশোধন করে বললেন “উন্নয়ন “। এসব ও এখানে এসে শিখেছে। কত উন্নয়ন! কেউ কাউকে চেনে না।সবাই ব্যস্ত। সবসময়ই ফোনে কথা বলে। উঠতে। নামতে। নয় ফোনে লেখে। কথা বলার সময় নেই। সামনে বড় রাবার গাছ কেটে দিল। উন্নয়ন হলে এসব হয়। রাতের ওয়াচম্যান বলেছে। আরো বলেছে। অনেককিছু। ফ্ল্যাটের মেয়ে বউয়ের দিকে তাকাবি না। চোখ নামিয়ে কথা বলবি। ছেঁড়া জিনস প্যান্ট পরা দিদি বা হাঁটুর ওপর স্কার্ট পরা বউদিদি র পায়ের দিকে চাইবিনা। হ্যাঁ ।আরো বলেছে অনেককিছু। এসব নামকরা পাড়াতে থাকতে গেলে সব শিখতে হয়। বলেছে,ফ্ল্যাটের খোঁজ করতে এলে বলবি ,মুসলমানকে ফ্ল্যাট দেওয়া হয় না। না ভাড়া। না বিককিরি। সব গুলো ভালো করে মুখস্থ করেছে ও। তারপর তোতাপাখি র মতো বলে গেছে যারা ফ্ল্যাটের খোঁজ করতে এসেছে তাদের। এইপর্যন্ত। তারপর একপেট জল ,দুটো রুটি আর আলুভাজা খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে । বয়েস ষোলো। গ্রাম মতিনপুর। নাম সিরাজুল।
0 Comments