অন্তর্বাস রহস্য

তীর্থংকর নন্দী on

ontorbash_rohosyo

অন্তর্বাসের সঙ্গে রহস্যের কোনও যোগ আছে বলে মানুষ মনে করে না। মানুষভাবে অন্তর্বাস মানে বিশাল গোপনতা। অন্ধকারাচ্ছন্নতা।

# #

আজ অন্ধকারাচ্ছন্ন রাত্রি। অমাবস্যা। বৃষ্টি থেমে গেছে। কচি ব্যাঙরা সবে ডেকে উঠবে। কোথাও কোনও মানুষ নেই। কিন্তু অরিয়ম লিয়া আছে। আছে গোপনে। ইউক্যালিপটাসের লম্বা গাছের আড়ালে। লালায়িত চুমুতে দু’জন দু’জনকে তৃপ্ত করে চুমুর শব্দ পৃথিবী জানতে পারে না। এই চুম এতই গোপন। ইউক্যালিপের ছায়া মানুষ দু’জনকে রহস্য দেয়। ছায়ার ভিতর এক সময় মানুষ দু’টি এক হয়ে যায়। ছায়াঘন রাতে কখন যেন মানুষ দুটি গাছের আড়াল থেকে উঠে পড়ে। শহর শহরতলিতে হারিয়ে যায়।

এখন রাত দুটো। শহর শহরতলি ঘন রাত সম্পূর্ণ কালো। চারিদিক চুপচাপ। মনে হয় আলপিন পড়লেও শব্দ শোনা যাবে। অরিয়মের চোখ থেকে ঘুম সরে যায়। না ঘুম চোখে শহর শহরতলির রাত দেখে। দূরে বহুদূরে অন্ধকারাচ্ছন্ন রাতে কোথাও থাকে লিয়া। চোখে কালো চশমা। ঠোঁটে ত্বক রঙা লিপস্টিক। শিখা ইউক্যালিপের শেষ বিকালের রোদে ঘন চুম্বনে ঠোঁটের ত্বক রঙ কেমন রঙদ্বারা। ফ্যাকাশে। একসময় লিয়া হারিয়ে যায়। অন্ধকার ঘন রাতে অরিয়ম তবুও লিয়াকে খোঁজে। এই খোঁজা কি কোনও রহস্যজনক! জানিনা।

প্রতি ভোররাতে পাখিরা ডাকে। পাখিরা ভোরাত ভালই জানে। লিয়া পাখি না হলেও জেগে যায়। ইউক্যালিপটাসের লম্বা সরু পাতা লিয়ার বিছানায় হালকা শব্দ কর। পাতার খসখস শব্দে লিয়া অরিয়মের স্পর্শ পায়। অরিয়মের চুমু তক মায়া। স্বপ্ন। স্বপ্নদিনে স্বপ্নরাতে কোনও এক পুরুষ ভাসে। এই ভাসা পুরুষ কি কাম্য! তবুও পুরুষটি ভাসে। ইউক্যালি অন্য পুরুষকে চেনেনা। চেনে অরিয়মকে। তা হলে ইউক্যালির আড়ালে লিয়া কি নাটক করে। শহরের মানুষেরা জানে লিয়া আধুনিকা। মল মহিলা। প্রতি ছুটির দিনে মলের স্বপ্ন সিঁড়ি দিয়ে মল মহিলারা বিভিন্ন স্বপ্নের দোকানে যায়। সেই স্বপ্নের দোকানে কোথাও থাকে জয়। প্রতি ছুটিতে আমরা দেখি জয়কে। কালো চশমা পড়া ত্বক রঙা লিপস্টিকের মল মহিলাকে জয় কাছে পেতে চায়। মনের বিচ্ছুরিত বহু রঙ আলোয় লিয়া হয়ে যায় কানা স্বপ্ন। জয় স্বপ্নের মাথা মুণ্ডু কিছুই টের পায় না। শুধু কানা স্বপ্নেই সময় কাটায়। কানা স্বপ্নে ভেসে থাকে লুক্কায়িত লিয়া। লিয়ার গোপন গন্ধ। লিয়ার অন্তর্বাসের কথা।

# #

গোপন তক পাহাড়ী ঝর্না। রহস্যজনক। পাথরতলে ঝর্না জল সকলের আড়ালে কুলকুল করে এক জায়গা থেকে অন্যত্র চলে যায়। আজ জ্যোৎস্না রাত। ঝর্না জল জ্যোৎস্না রাতে চিকচিক করে। জয় জ্যোৎস্নারাতে লিয়ার মুখকে স্বপ্নে দেখে। কোনও এক গরমের পূর্ণিমার রাতে লিয়াকে নিয়ে মল থেকে বেরিয়ে ঠান্ডা আইসক্রিমে ঠোঁট রেখে ঠান্ডা থেকে আরও ঠান্ডা অনুভব করে। মানুষ এইসব কথা জানতে পারে না। জানলেও এখনকার মানুষ কেমন চুপ করে থাকে। মলের মানুষগুলি সকলেই খুব ব্যস্ত। মাস মাইনের কানা কড়ি গুনতে গুনতে তারা ফুড কোর্টে চলে যায়। অত্যন্ত কম দামে ফুড কোর্ট থেকে রাতের খাবার খেয়ে যে বার বাড়িতে ফিরে যায়। জয় লিয়াকে এইসব মানুষ চিনতে পারে না। চেনার কথাও নয়। 

ঝকঝকে মলের নরম তলে বুদ্ধিজীবীদের আজ কি প্রিমিয়ার আছে। প্রিমিয়ারের নাম বুদ্ধিজীবী তুমি কার! চলমান সিঁড়ি দিয়ে বুদ্ধিজীবীরা একে একে উঠে অন্ধকারচ্ছন্ন সিনেমা হলে ঢুকে পড়ে। গত সপ্তাহ থেকে এক চলচ্চিত্রের টিকিট পাওয়াই যায় না। বুদ্ধিজীবীরা ছলে বলে কৌশলে কিভাবে যেন টিকিট শেষ করে ফেলে। অন্ধকারাচ্ছন্ন রহস্যঘন আলোর নিচে সবাই বসে থাকে। প্রতিটি বুদ্ধিজীবীর বেশবাস পরিচ্ছন্ন। কোথাও কোনও অমলীনের ছাপ মানুষ বুঝতে পারে না। কিন্তু এত টিকিট কিভাবে শেষ হয়! বুদ্ধিজীবীদের কি এতই বুদ্ধি! হবে নিশ্চয়ই। আমি আপনারা বুদ্ধিজীবীদের ভয় পাই। প্রতিরাতে দূরদর্শনের কাঁচ পর্দায় বুদ্ধিজীবীদের চোখ মুখ দেখলে সাধারণ মানুষ আজ আতঙ্কত হয়! এই আতঙ্কের কারণ সাধারণ মানুষ বুঝতে পারে না। তবুও সরল চোখ বুদ্ধিজীবীদের কথা হাসি বক্তব্য খুব মন দিয়ে শোনে। সকলেই ভাবে বুদ্ধিজীবীরা হয়ত দেশটাকে সম্পূর্ণ পালটে দেবে। ভাগ্যের পরিণাম এমনই দেশ দেশের মতনই থেকে যায়। কোথাও কিছু পালটায় না।

সময় গড়ালে চলচিত্রের পর্দায় ভেসে ওঠে এক নাচ সুন্দরীর কানে ঝোলা দুল। চিকন ঠোঁটে চড়া রঙ। পায়ে নরম চটি। এই চটি সাধারণত পাহাড়ী এলাকায় পাওয়া যায়। নাচ সুন্দরীর অঙ্গ ভঙ্গিতে বুদ্ধিজীবীরা ভাগে ভাগ আলাদা হয়ে পড়ে। কেউ হয় পোশাকে। কেউ নাচ তরঙ্গে। কেউবা বক্ষযুগলে। বক্ষযুগলের বুদ্ধিজীবীরা নিজেরা কথা বলে হলের নরম আলোর নিচে। গোপনে।

# #

এখন শ্রাবণ। অথবা ভাদ্র। লোকে বলে মাসে কি যায় আসে! সময় নিজের মতন চলে। খুব গোপন এক গ্রামে গোপন এক পুকুর থাকে। ছায়াচ্ছন্ন বাঁশগাছ ঘেরা পুকুর। পুকুরের জল টলটলে। স্নিগ্ধ। বাঁশগাছের ছায়াচিত্র বাদে এই জল নির্মল। মাছেরা নিচু বাঁশডালের জলে খেলা করে। রমন করে। ডিম পাড়ে। সময় হলে চারা গাছ মা গাছের মুখ গহ্বর থেকে বেরিয়ে পৃথিবীর আলো দেখে। স্নিগ্ধ জল দেখে।

প্রতি সন্ধ্যায় এই বাঁশের জঙ্গলে আসে দুটি মানুষ। দিয়া সাগর। দিয়ার বয়স কুড়ি। সাগর চব্বিশ। সন্ধ্যার পুকুরে মাছেদের নিরিবিলি খেলা দেখতে দেখতে দু’জনে আত্মহারা হয়ে যায়। আত্মহারার নাকি অনেক নাম আছে। এই মানুষ দুটির আত্মহারার নাম কোন মহাপুরুষ দিতে পারে! জানি না। আমরা জানি মহাপুরুষরা অনেক গোপন রহস্যজনক কথা বলতে পারে। মহাপুরুষদের আমরা সেই দৌলতে নমস্কার প্রণাম জানাই।

সন্ধ্যা এখন ঘন সন্ধ্যা। প্রায় কচিরাত। কচিরাতে পাখিরা ঘর। পাখিদেরও কি কোনও গোপন কথা থাকে! তারাও আড়ালে নিভৃতে রমনকলায় লিপ্ত হয়। বলতে পারব না। পাখি বিশেষজ্ঞ এই বিষয়ে কিছু বলতে পারে। তাদের গোপন কথা অন্তর্বাসের কাহিনি আমরা হত একদিন সেইসব বিশেষজ্ঞের কাছ থেকেই জানতে পারব।

সাগর খুব গোপনে দিরার বুকে চাপ দেয়। কচি আঙুল দিয়ার কচি স্তনযুগলকে এমনভাবে নাড়া দেয় যে দিয়া কথা বলতে পারে না। দিয়া শান্ত স্নিগ্ধ মহিলা মাছেদের মতন চুপ করে থাকে। চোখে শীর্ষ কৌতূহল। এই শীর্ষ কৌতূহলের ভাষা দিয়া জানে না। জানে এই ভাষা খুব গোপন। লুক্কায়িত। রাত ঘন হলে দিয়ার চোখে সন্ধ্যাতারা নামে। সন্ধ্যাতারার ভিতর দিয়া সাগরের হাত সরিয়ে দেয়। সাগর কেঁপে ওঠে। দিয়ার কাছ থেকে সরে বসে। আকাশের তারারা এখন অনেক পরিষ্কার। জ্বলন্ত। দূরে মহাকাশের কাছে মনে হয় কিছু তারা খসে পড়ে। অত্যন্ত গোপনে তারার স্নিগ্ধ আলো গ্রামেগঞ্জে ছড়িয়ে যায়। গ্রামবাসীরা তারার আলো দেখে পুলকিত হয়। কচি কাচারা খসে পড়া তারার নরম আলো খোঁজে। নরম আলোর ভিতর শিশুরা জোনাকির মিল পায়। মনে করে মাঠে ঘাটে জোনাকি লুকিয়ে পড়ে।

# #

বেলার দিকে রঞ্জনা হকার বাজারে আসে। হকার বাজার মন বাজারের মতন ঝকঝকে নয়। জিনিসের দামও নাগালের মধ্যে। এখন বারোটা। সংসারের কাজ সেরে রঞ্জনার হাতে প্রচুর সময়। দোকানে দোকানে ঘুরে পছন্দ মতন কিছুতেই পছন্দ মতন অন্তর্বাস পায় না। হকার বাজারের প্রথম দোকানের লাল অন্তর্বাসটি কেমন ঢিলেঢালা। দ্বিতীয় দোকানের নীল অন্তর্বাসটি মাপে ছোট। রঞ্জনার তখন বুকের মাপ ছত্রিশ। ছত্রিশ বুকে নীল অন্তর্বাসটি চাপ চাপ লাগে। অবশেষে সপ্তম দোকানের মেরুন অন্তর্বাসটি পছন্দ হয়। রঞ্জনা বাইরে থেকে মাপ নিয়ে ঠিক করে এই অন্তর্বাসই ঠিকঠাক।

রাত তখন গভীর। নিলয় অফিস ফেরত নিজের জগত থেকে নেশা করে ক্লান্ত। রাতের হালকা খাবার খেয়ে বিছানায় টলে যায়। রাতের নেশা নিলয়ের এক অসুখ। রঞ্জনা এই নিত্য ঘটনায় আর কোনও পাত্তা দেয় না। এখন সে যাবে নিজের মতন। তার নিজেরও এক জগত আছে। বন্ধুবান্ধব আছে। নিলয় তখন ঘুম সমুদ্রে। রঞ্জনা গভীর রাতে বেডরুমের পাশের ঘরে চলে যায়। এই রঞ্জনার একদম নিজস্ব। দশ বাই দশ। ঘরের তিন দেওয়ালে পরিযায়ী পাখিদের রঙিন তেল ছবি। অন্য দেওয়ালে দীর্ঘ কাঁচ আয়না। রঞ্জনা এই আয়নায় মন ভাল থাকলে নিজেকে খুলে ধরে। যেমন আজ। সোমবার কিটি পার্টি। মহিলাদের ভিতর কখন সখন অন্য পুরুষও ঢুকে পড়ে কাঁচ আয়নায় রঞ্জনা মেরুন অন্তর্বাসে স্তনযুগল দেখে। দুই হাত দিয়ে মেপে নেয় যুগলস্তনের উচ্চতা গভীরতা। কিটি পার্টিতে কি রঞ্জনা অন্য পুরুষকে আকর্ষণ করতে চায়। জানি না। তিন দেওয়ালের পরিযায়ী পাখিরাও মনে হয় মেরুন অন্তর্বাসে খুশি। রঞ্জনা এক সময় নতুন অন্তর্বাস খুলে নিলয়ের পাশে ছদ্মঘুমে লুটিয়ে পড়ে। নিলয়ের শরীরের ভাষা ঘুম উপলব্ধি করতে চায়।

রাতে হালকা বৃষ্টি নামে। মনে হয় রাত তখন দু’টো। বৃষ্টির সঙ্গে হালকা বায়ুপ্রবাহ আসে। রঞ্জনার শরীরে অল্প শীতভাব। এই শীতভাবে রঞ্জনার চাদর প্রয়োজন হয় না। প্রয়োজন হয় কিছুটা উত্তাপ। নিলয়কে। কিন্তু নিলয়ের দৈনন্দিন আচার ব্যবহারে রঞ্জনা বিরক্ত। নিলয়ের থেকে মনে হয় আর কোনও গোপন তাপ আশা করে না। লুক্কায়িত গোপন তাপ মনে হয় পেতে পারে কিটি পার্টি থেকেই।

# #

ডিসেম্বরের শেষ। পাহাড়ী পথে ভালই বরফ নামে। বরফ পথে ঘাটে বাজারে বাড়ির ছাদে মানুষের চোখে মুখে যুবক যুবতীর দীর্ঘ পোশাকে অত্যন্ত সন্তর্পণে নামে। যে পাহাড়ী কাঠ বাড়ির ভিতরেও বরফকুঁচি প্রবেশ করে। বরফ কুঁচি বাড়ির মানুষদেরও রেহাই দেয় না। 

বড়দিনের শেষে রিজ হিয়া এই পাহাড়ে সকলের অন্তর্রালে ঘুরতে  আসে। তখন পথ ঘাট সোনালী রোদে অসম্ভব পরিষ্কার। কিন্তু আজকের রাত একদম আলাদা। গরম পোশাক গরম চাদরের নিচেও বরফকুঁচি ঢুকে পড়ে। সুন্দর স্ফটিক রঙ বরফের নিচে রিজ হিয়া মনে হয় ঘুমিয়ে। শীতল বরফের নিচে হিয়া রিজকে গোপন স্পর্শ করে উত্তাপ নেয়। এই স্পর্শ একান্তই দু’জনের নিজস্ব ব্যাপার। এখানে অন্তর্বাসের কথা না ও আসবে পারে। অন্তর্বাসের রহস্য লেখকরা জোর করে পাঠকদের চাপিয়ে দিতে পারে না।

বরফ কুঁচি চাদর সরিয়ে রিজ হিয়াকে জোড়া চুম্বন দেয়। জোড়া চুম্বনে এই শীতল রাতে হিয়া বেগুনি রঙে রঙিন হয়। বেগুনি হিয়া হিম শীতল রাতে রিজকে আরও কাছে নিকটে পেতে ভালবাসে। আজকের রাত বেশ জটিল। কনকনে। দূরে গলফ মাঠের পাশে কিছু ছায়া বাড়ি। বাড়িগুলি মনে হয় বিখ্যাত চিত্রশিল্পীর আঁকা। প্রতিটি বাড়ির মাপ খুবই নিখুঁত। রাতের অন্ধকারে হিম শীতল গলফ মাঠ একা। সবুজ ঘাসে ঘন বরফ চাদর। অন্ধকার রাতে কোনও গর্তে সাদা বল পড়ে না। মাঠের পশ্চিমে নীল জলের ধারেও কোনও সাদা বল গড়িয়ে আসে না। নীল জলও ঠান্ডা রাতে একাকী। নিস্তরঙ্গ। শরীরের মৃদু তাপে রিজ হিয়াকে জড়িয়ে ধরে। বরফকুঁচি ঠান্ডা রাতে হিয়া রিজকে বেগুনি চুমু এমনভাবে উপহার দেয় রিজ কোনও কথা বলতে পারে না। কনকনে ঠান্ডা সম্পূর্ণ বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ে। রিজ দূরের গলফ মাঠের শূন্যতা টের পায়। ঘন সবুজ মাঠ কনকনে রাতেও কেমন একা। মাঠের অদূরে নীল জলের প্রান্তে কেউ বেস থাকে না। পাইন গাছগুলিও একা। ওক গাছের আড়ালে একটি সাদা বল পড়ে থাকে। হয়ত পড়ন্ত বিকালে কোনও প্রেমিক প্রেমিকা খেলে যায়। নাম না জানা প্রেমিক প্রেমিকা বরফকুঁচি শীতল রাতে এখন রঙিন পানীয়তে দিশেহারা। একাকী। তারা জানেও না খেলার শেষে সাদা বল কোথায় হারিয়ে যায়! সফেদ টুপির ভিতর নিজেরা এখন প্রেমে মত্ত। খানাপিনায় ব্যস্ত। রঙিন পানীয়র সঙ্গে আসে। ঝলসানো মাংস এই মাংস ডাক অথবা টার্কির। কিংবা কচি পাঁঠারও হতে পারে। রহস্যময় মাংসের স্বাদই আলাদা। ঝলসানো মাংসে তৃপ্ত প্রেমিক নতুন করে প্রেমে মজে। এই প্রেম চির নতুন। সবুজ। কাল সকালে মনে হয় বরফ ঢাকা রাস্তা পরিষ্কার হতে পারে। এখন রাত বারোটা। প্রেমিক প্রেমিকার চোখে ভেসে ওঠে পাইন ওক। 

# #

পড়ন্ত বিকালে উটেরা ঘরে ফেরে। সোনা বালি পড়ন্ত বিকালে রঙহারা। প্রকট গরমে কিছু উঠ বসে পড়ে। মনে হয় জলপানে। জলপানের পর কি উটেরা হালকা হয়! জানি না দাবদাহ গরম বালি মাঠে তখনও কোনও ঝড় আসে না। উট চালকের পড়ন্ত বিকালে বিশ্রাম খোঁজে। পর্যটকেরা যে যার গন্তব্যে ফিরে যায়। দূরে রেলপথে ট্রেনের শব্দ ভেসে আসে। সেই শব্দে উট চালকদের ঘুরপথ। অন্যদিকে ঘুরে যায়। ক্লান্ত চোখে চালকেরা নিজেদের উটকে স্বপ্নের চোখে দেখে। পড়ন্ত বিকালে এই মরুস্বপ্ন নিটোল। হিমছাম। বসে থাকা উটেরা মরুছবি উপভোগ করে। মরিচাকাময় বালিমাঠ উটেদের চোখে স্বপ্ন মনে হয়। সেই স্বপ্নে বালি কাঁপে। দোলে। খুব প্রাচীন কাল থেকেই দিবাস্বপ্নে চালকেরা নিজেদের উটকে খেয়াল করে। খেয়াল করে মরিচিকা মাঠে উটেরা না হারায়। উট চালকদের গোপন গল্প মানুষদের জানা। যদি কখনও স্বর্ণবালু মাঠে উটেরা হারিয়েও ঠায় তবুও কাঁটা জঙ্গল দূরের রেলপথ বালিঘরের পাশ দিয়ে হারিয়ে যাওয়া উটেরা চালকের কাছে ঠিক ফিরে আসে। চালকের শরীরের গন্ধ উটেদের চেনা। হয়ত এই গন্ধ গোপন।

রাতের বালিমাঠ এখন ঠান্ডা। দিনের তপ্ত ভাব এখন নেই। কিছুক্ষণ আগে বালিঝড় ওঠে। বালুকণা উটেদের চোখে গোপন আস্তরণ ফেলে। উটেরা বালিঝড়ে নিজেদের চালকদের চিনতেই পারে না। মরুসন্ধ্যা তখন অনেক আরামদায়ক। বালুঝড়ে মরুশহর শান্ত। তৃপ্ত। রেশম প্রিয় বালিমাঠে বসে থাকে। দূরের বালুপথে ট্রেন চলে। আঁকাবাঁকা পথে ট্রেনের রহস্যময় শব্দে কোনও উপশালীয় দশটি উট চমকে ওঠে। চোখে নেমে আসে রুক্ষতা। তারপর রাতের শোভা দেখতে দেখতে চোখ শান্ত হয়। মায়াবী চোখে কালো জল চিকচিক করে। এই জল ঝরা কি দিনের পরিশ্রম! না ক্লান্তি!

আজ পূর্ণিমা। মরু আকাশে চাঁদ নিটোল ঝকঝকে। চন্দ্রালোকের রহস্যঘন ঝকঝকে রাত্রিতে রেশম আর প্রিয় জড়াজড়ি করে বসে । সকলের গোপনে  মরু পূর্ণিমা উপভোগ করে। কিছুটা দূরে মনে হয় কোনও উটশালা থেকে দশটি চঞ্চল উট চুপিচুপি বালিমাঠ ধরে হারিয়ে যেতে চায়। প্রিয় রেশমের নরম কোলে মাথা রেখে দশটি উটের ছায়াছবিতে হারিয়ে যায়। মরুচাঁদের রহস্যময় আলোক চিত্রে উটেদের দুলকি ছবি বালিমাঠে ভেসে ওঠে। রেশমদের আগামীকাল এই মরু শহর ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা। সাত দিনের গোপন ভ্রমণের ইতি। আবার পরিচিত সকলের কাছে ধরা দেওয়া। গতানুগতিক জীবনে ফিরে যাওয়া। কিন্তু এই মরুশহর মরু মানুষ মরু ঝড় মরুপশু দীর্ঘদিন স্মৃতিতে গেঁথে থাকবে। 

# #

সমুদ্রউপকূলবর্তী অঞ্চলে আজ ঝঞ্ঝা আসার কথা। পশু পাখিরা এই ঝঞ্ঝা আমাদের আবহাওয়াবিদদের সাংকেতিক চিহ্নে দুদিন আগেই বুঝিয়ে দেয়। আবহাওয়াবিদরা পশুপাখিদের সাংকেতিক চিহ্নে মোটেই পাত্তা দেয় না। তারা নিজেদের শিক্ষার উপেরই নির্ভর করে। পশু পাখিরা নিরাপদ অঞ্চলে আশ্রয় নেয়। কিন্তু ঝঞ্ঝা ঠিক সময়েই আসে। সমুদ্রজলতল বিপদসীমা অতিক্রম করে। পঞ্চাশ জন মৎস্যজীবীদের ডিঙি নৌকা উলটে যায়। সংবাদে আমরা দশজনের খবর পাই। চল্লিশ জন মৎস্যজীবী ভাইদের আমরা আজও খুঁজে পাই না। সেই চল্লিশ জন মৎস্যজীবী ভাইদের কেউ নব বা দোলার প্রতিবেশী। নব দোলা কম বয়সের। যৌবনের রঙ গাঢ়। কমলা। প্রতিদিন নব দোলা সমুদ্রের ঠান্ডা হাওয়া খেতে ভালবাসে। রাতের ঢেউ তাদের খুব প্রিয়। দুজনে কোলে  মাথা রেখে সমুদ্র ঢেউ গুনে যায়। সমুদ্র ঢেউ রহস্যময়। গোনার বাইরে। চারিদিকে সামুদ্রিক মাছের আঁশটে গন্ধ। লাল কাঁকড়ারা ছড়িয়ে থাকা মৃত মাছদের নিয়ে বালি গর্তে লুকিয়ে পড়ে। চিরদিন চিরকাল সমুদ্রকূল লাল কাঁকড়ারা দখল করে রাখে। মৎস্যজীবী পরিবারের নব দোলা লাল কাঁকড়াকে কখনও পাত্তাই দেয় না। মাছের আঁসটে গন্ধও খুবই পরিচিত। গা সওয়া। ফলে কাঁকড়ার ভয় মাছের আঁশটে গন্ধ নব দোলার কাছে নতুন কিছু নয়।

এক গ্রীষ্ম সন্ধ্যায় সমুদ্রের প্রাণ ঢেউ ওঠে। সেই ঢেউ সমতল ছাড়িয়ে অনেক উঁচুতে পৃথিবী স্পর্শ করে। পৃথিবীর মানুষেরা নিরাপদ আশ্রয় নিলেও নব দোলা রক্ষা পায় না। দুজন দুজনকে আলিঙ্গন করতে করতে হারিয়ে যায় গভীর জলে। তিন দিন বাদে দু’টি ফোলা শরীর ভেসে ওঠে অপরিচিত এলাকায়। অপরিচিত এলাকার জল পুলিশ মানুষ দুটির শরীর তালগাছের নিচে শুইয়ে দেয়। ফুলে ওঠা শরীর দুটির ভিতর এখনও গোপন ভালবাসার স্পষ্ট ছাপ।

আজ বুধবার। সমুদ্র অনেক শান্ত। জল পুলিশ অপরিচিত দুটি রহসময় দেহ ময়না তদন্তে পাঠায়। ফুলে থাকা সাদা কাপড়ে ঢাকা মানুষদুটির ভিতর অনেক গোপন গল্প। রহস্য। শান্ত সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে মানুষ কত স্মৃতির কথা মনে করে। স্মৃতির কথা ভাবতে গেলে রহস্যের কথা অন্তর্বাসের কথা উঁকি মারে। মনস্ত্বত্তবিদরা বলেন অন্তর্বাস মানে মায়া। মায়া মানে মরিচিকা। পৃথিবীর মানুষ নাকি এই মায়াপথে বহুদিন ধরে হাঁটে। এই হাঁটা অনন্ত। মায়াপথের লাল বালি সমুদ্র ঢেউ লাল কাঁকড়া আজও রহস্য। গোপন। গোপন মানেই কি মজা! পাঠকরা এই মজার কথা জানে না। মানুষ তবুও মায়াপথে হাঁটে। হাঁটার কষ্টে পায়ে জল ভরা ফোস্কা পড়ে। তবুও হাঁটে। কেননা এই হাঁটায় মজা আছে। ফোস্কা পায়ে অন্তর্বাস রহস্য জানতে চায়।


ফেসবুক অ্যাকাউন্ট দিয়ে মন্তব্য করুন

Categories: গল্প

তীর্থংকর নন্দী

জন্ম ৩১শে ডিসেম্বর ১৯৫৫। সত্তরের শেষাশেষি কফি হাউসে তিন বন্ধুর সঙ্গে সাহিত্য নিয়ে আলোচনা করতে করতে একটি পত্রিকা ‘নতুন নিয়ম’-এর প্রকাশ ঘটে। কোনও আন্দোলনের কথা বড় বড় ফতোয়া ঘোষণা করা হয় না। গল্পে গল্প থাকলে গুলি করা হবে এইসব শিশুসুলভ কথাও বলা হয় না। শুধুমাত্র বলা হয় যে যার মত নিজস্ব ঢঙে গল্প লিখে যাওয়ার কথা। কোনও নকল কাম্য নয়। তিন বন্ধু হল তাপস চৌধুরী, আশিস মুখোপাধ্যায় এবং পার্থ গুহবক্সী। আজ সকলেই তারা নিজস্ব ঢঙে গল্প লিখে প্রতিষ্ঠিত। একমাত্র আমি ছাড়া। আমি হয়ে রইলাম ব্যর্থ লেখক। আমার এখনও সেই কারণে নিজস্ব কোনও গল্পের বই হল না।

0 Comments

মন্তব্য করুন

Avatar placeholder

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।