আত্মিক বন্ধন
আজ চৈতির বিয়ে, আত্মীয় স্বজন বন্ধু বান্ধবে বাড়ি ভর্তি। সবাই ব্যস্ত, কারোর বসার সময় নেই, এরই মাঝে চলছে হাসি ঠাট্টা। গোধূলি লগ্নে বিয়ে, সেজন্য আরও সবাই ব্যস্ত হয়ে পরেছে। দুপুরেই পার্লার থেকে সাজাতে চলে এসেছে, একটু পরেই বর আসবে, লগ্ন এগিয়ে আসছে।
বাড়ির কর্তী কাবেরী বন্ধ দরজার কাছে গিয়ে বললো —হলো তোদের সাজ গোজ, এবার দরজাটা খোল, দেখি আমার মেয়েকে কেমন লাগছে।
ভেতর থেকে দরজা খুলে দিল, সাজানো শেষ হয়ে গেছে।
এমনিতেই সুন্দরী চৈতি, লাল বেনারসীতে যেন আরও রূপ খুলেছে।
চৈতিকে দেখে কাবেরী বললো–এইতো আমার মা, একেবারে লক্ষী প্রতিমা, কারোর যেন নজর না লাগে। চৈতির হাতটা টেনে নিয়ে কড়ে আঙুলের নখের কোণায় একটু কামড়ে দিলো।
চৈতি কাবেরীকে জড়িয়ে ধরে বললো–কি যে বলো মা, তোমার কাছে তো আমি লক্ষী।
কাবেরী –হ্যাঁ, তুই তো লক্ষীই, গুনে সরস্বতী, উচ্চ শিক্ষিতা, চাকরি করিস, এরকম মেয়ে কেউ পাবে? আমার মেয়ে যা আমি তাই বলেছি।
পাশে দাঁড়িয়ে ছিল চৈতির আসল মা বিনতা, এদের দুজনের ভালোবাসা দেখে চোখ ছলছল করে উঠলো।
হ্যাঁ, এখন চৈতির মা ওর শাশুড়ি মা কাবেরী। সাত বছর আগে এ বাড়িতে যখন চৈতি এসেছে তখন থেকেই চৈতির মা হয়ে গেছে কাবেরী। মাত্র কুড়ি বছর বয়সে চৈতির মা-বাবা বিয়ে দিয়ে পাঠিয়েছিল এ বাড়িতে, এরকম করে সাজিয়েই। এ বাড়ির বিলাসবাবু ও কাবেরীর একমাত্র ছেলে কৌস্তভের বউ হয়ে এসেছিল ও, কিন্তু দুর্ভাগ্য বশত হঠাৎ একটা এ্যাকসিডেন্টে মাত্র একবছর পরেই চলে যায় কৌস্তভ। চৈতি ও সাথে ছিল কিন্তু ও প্রাণে বেঁচে ফিরে আসে।
ছেলেকে হারিয়ে বিলাসবাবু ও কাবেরী চৈতিকে আরও আঁকড়ে ধরেছিলেন। চৈতি ও দুজনকে কেমন নিজের মা বাবার থেকেও আপন করে নিয়ে ছিল। ওর নিজের মা বাবা ও দাদা ফিরিয়ে নিয়ে যেতে এসেছিল কিন্তু চৈতি যায়নি,চৈতি তখন বলেছিল এটাই আমার বাড়ি, এরাই আমার মা বাবা।
চৈতিকে আবার কলেজে ভর্তি করে দিয়েছিলেন বিলাসবাবু, বলেছিলেন–মা তোর যতদূর ইচ্ছা পড়াশোনা কর, তারপর নিজের পায়ে দাড়া।
ওনাদের প্রেরণাতেই চৈতি আজ একটা বড় কম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টর।
চৈতি বিয়েতে কিছুতেই রাজী হচ্ছিল না, অনেক বুঝিয়ে রাজী করিয়েছেন বিলাসবাবু ও কাবেরী। দুজনেই বলেছেন –দেখ চৈতি, আমরা তো চিরদিন থাকবোনা, তোর পাশে থাকার জন্য একজন সঙ্গীর প্রয়োজন। তোর জন্য এ বাড়ির দরজা সব সময় খোলা, এটাতো তোরই বাড়ি, তুই যখন খুশি চলে আসবি, আর আমাদের তুই ছাড়া আর কে আছে বল?
চৈতি বলেছে–ঠিক আছে, কিন্তু কাছাকাছি থাকবো,যাতে তোমাদের দুজনকে সবসময় দেখতে পারি।
বিলাসবাবুর বন্ধুর ছেলের সাথে চৈতির বিয়ে ঠিক হয়েছে, বেশি দুরে না কাছাকাছিই ছেলের বাড়ি।
হঠাৎ তন্দ্রার ঘোর কেঁটে গেল চৈতির মা বিনতার, বর এসেছে বর এসেছে রব শুনে।এককোণায় বসে এতক্ষণ পুরোনো ঘটনাগুলো ভেসে উঠেছিল তার মনে, আঁধভেজা চোখটা রুমালে মুছে নিলেন,মুখটা হাসিতে ভরে উঠলো,চোখে খুশির ঝিলিক এলো।
0 Comments