মায়ের মতো

এরিনা ঘোষ on

(১)

সকালের মিষ্টি রোদ তেরছা ভাবে পরে ঘুমন্ত মুখটাকে আরো আদুরে করে তুলেছিল। থেলো থেলো কোঁকড়ানো চুলে ঘেরা একটা ফুলের মত মুখ। লাল ফ্রকটা হাঁটুর ওপরে উঠে আছ। হালকা হাসি মাখা ঠোঁট টাতে আঙুল ছুঁইয়ে দিল মৌ। এই পুতুলটা তিলে তিলে বেড়ে উঠেছে ওর ভিতরে। ভাবলেই অদৃশ্য অপত্যের এক তরল স্পর্শ দ্রবীভূত করে তোলে ওকে।আচমকা ঘোর কাটে ঈশানের ডাকে। নটায় বেরোতে হবে ওকে। মৌ এর হাতজোড়া কাজ এখন।

(২)

পরপর চারবার মিসক্যারেজের পর শহরের সবচাইতে নামী বিশেষজ্ঞর কাছে এসেছিল ওরা। সবরকম পরীক্ষার পর ২০শতাংশ আশার কথা বলেছিলেন উনি। উচ্ছল পাহাড়ী ঝর্নার মত মৌ ততদিনে আয়না দেখতেও ভয় পেত। সেই দিনগুলো কি আজকের চেয়েও ভয়াবহ ছিল? বুঝে উঠতে পারেনা ঈশান।

(৩)

চোদ্দ বছরের ঈপ্শিত অন্য বাচ্চাদের তুলনায় অনেক পরিনত। ছোটবেলা থেকে মা ছাড়া বড় হয়েছে। ছুটিছাটায় বাবা আসলেও মায়ের কোন স্মৃতিই নেই ওর। আজ প্রথম মা কে দেখার কথা। চাপা সংশয় ওর। কে জানে ওকে চিনবে কিনা ।

(৪)

জটিল মানষিক অসুখে আক্রান্ত মৌ ঈপ্সিত র জন্মের আগেই মা হয়ে গেছিল। ওর কল্পনায়। কড়া সিডটিভের ডোজে আচ্ছন্ন হয়ে জন্ম দেয় অপরিনত ছেলের। কিন্তু সেই সন্তান কে নিজের বলে মানতেই পারেনি। কয়েকদিনের সন্তান কে বালিশ চেপে মেরে ফেলার চেষ্ঠা করতে ডাক্তার এর পরামর্শে ঈপ্সিত কে আলাদা রাখে ইশান। মায়ের গল্প শুনেই এত বড় হয়েছে সে। বিগত কয়েকদিন ধরে অনেক বোঝান সত্বেও ঈপ্সিত কে মানতে পারলনা মৌ। নিজের পুতুল পুতুল মেয়ের বাইরে ওর যেন কোন অস্তিত্বই নেই। নতুন আসা ছেলেটাকে কেমন যেন ঈশানের মতই দেখতে।
দোতলার সিঁড়ি দিয়ে নামতেই পা পিছলে গেল ঈপ্সিতর। টানা আট ধাপ গড়িয়ে নিচে আসতে আসতে চাপ চাপ রক্তে ভিজে গেল মুখ। খাবার টেবিল থেকে দৌড়ে গেল ঈশান। চেয়ার আঁকড়ে থরথর করে কাঁপছে মৌ। তৃতীয় ধাপে হিসেব করেই তেল ফেলে রেখেছিল। এরকমটাই তো চেয়েছিল ও। তবে এত বেসামাল লাগছে কেন? কোথাও একটা ভাঙন টের পাচ্ছে। ছেলেটাকে কাঁধে ফেলে ড্রাইভার কে যত সম্ভব জোড়ে চালাতে বলে ঈশান গাড়ির দরজা আটকাতে গিয়ে দেখল আলুথালু মৌ খালি পায়েই দৌড়ে এসেছে। কিন্তু কেন?,রক্ত দিতে লাগলে?আমি দেব’ দু চোখ ভর্তি জল নিয়ে এ কোন মৌ? চোদ্দ বছরের টানাপোরেনে জেরবার ঈশান দেখল এক সদ্যজাতা মা কে।

ফেসবুক অ্যাকাউন্ট দিয়ে মন্তব্য করুন


এরিনা ঘোষ

পেশা — সিভিল ইন্জিনিয়ার, নেশা — বই ও কবিতা, অবসর বিনোদন — লেখা ও পশুপাখির সঙ্গে সময় কাটান।

1 Comment

Barun Paul. · মে 13, 2019 at 7:20 পূর্বাহ্ন

A great article, many ups and downs of life are lost in such a way. Mother’s world is too big, the world is too low for her. Such beautiful writing is something like in front of the eyes. Very alive.

মন্তব্য করুন

Avatar placeholder

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।