অসূর্যম্পশ্যা
আমি তখন ফার্স্ট ইয়ারের ছাত্রী । আমরা যেখানে ভাড়া থাকতাম, সেই পাড়াতেই নতুন বিয়ে হয়ে আসলো পাপড়ি বৌদি । আমার থেকে কয়েক বছরের বড়ো । দেখতে ভীষন সুন্দরী। বিশেষত সুজয়দার মতো কালো বিচ্ছিরি দেখতে একজন মানুষের পাশে তো, একেবারে যাকে বলে
অপরূপা । কি যেন একটা চলতি কথা আছে না, ‘কাকের পাশে কমলা’ একদমই তাই । সুজয়দার ইনকাম কিন্তু খুব ভালো ছিল । পাড়ার দু একটা মেয়ের সুজয়দার দিকে নজরও ছিল । কিন্তু সুজয়দা পছন্দ করলো তার দিদির ভাসুরের মেয়েকে । সম্পর্কে মামা ভাগ্নী ! সুতরাং অশান্তি অনিবার্য । অনেক অশান্তির পর ওদের বিয়ে হলো ।
আমার পাপড়ি বৌদিকে খুব ভালো লাগতো । মিষ্টি করে কথা বলত , কতো কিছু তখন বৌদির থেকে জানার ছিলো… কতো অজানা কথা !
আসা যাওয়ার পথে ওদের বাড়িটা পড়ত । কলেজ থেকে ফেরার পথে প্রায়ই ঢু্ঁ মারতাম। অনেক গল্প হতো । বৌদি আমাকে অনেক মনের কথা বলে ফেলত । আমিও বলতাম ।
অনেক সময় জেঠিমা মানে পাপড়ি বৌদির শাশুড়ি চা করে দিয়ে যেতেন।
এরকমই একদিন বসে আছি সেই সময় পাশের বাড়ির ছন্দা কাকিমা ,পাপড়ি বৌদির কাকিশাশুড়ি , বৌদির হাতে একটা প্লেট দিয়ে ঢাকা বাটি এনে দিলো ।
নতুন বৌদি একগাল হেসে জিজ্ঞেস করল -” কি আছে এতে ছোটমা ?”
– খুলেই দ্যাখ্ ।
– তিলের নাড়ু ! আমি খুউউব ভালোবাসি ।
– জানি তো ! সেই জন্যই তো বানালাম । আর সাথে সাথেই তোকে দিতে আসলাম ।
আমার ভাগ্যেও জুটলো দু একটা পিস্।
এরপর আমি যখনই যেতাম, দেখতাম ছন্দা কাকিমা পাপড়ি বৌদির জন্য কিছু না কিছু বানিয়ে দিয়ে যাচ্ছে । কখনো কখনো আবার নিজের গাছের ডাঁসা পেয়ারা, পাকা আম, কাঁঠাল এসবও দিয়ে যেতো ।
একদিন লক্ষ্য করলাম বৌদি যেন একটু সংকোচ বোধ করছে ছন্দা কাকিমার হাত থেকে কিছু
নিতে । মুখে বলছে -“কেন তুমি রোজ রোজ আমার জন্য এভাবে কিছু না কিছু নিয়ে আসো ছোটমা ?”
– উত্তর তো তোর কথার মধ্যেই আছে । আরে, তুই তো আমার মেয়ে। জানিস না তুই ?
– হ্যাঁ, সে তো জানি । আসলে রোজ রোজ তুমি কিছু না কিছু দিয়ে যাও তো , তাই বলছি ।
– তোকে না দিয়ে কিছু খেতে আমার ভালো লাগে না ।
এর মধ্যে জেঠিমা এই ঘরে চলে এসেছেন । কিছু বলার আগেই বলে উঠলেন — ছন্দা তুমি রোজ কেন পাপড়ির জন্য কিছু না কিছু নিয়ে আসো? এটা ঠিক না ।
বুঝলাম জেঠিমা হয়ত পছন্দ করছেন না বলেই বৌদি মানা করছিলো ।
কাকিমাও ফস্ করে বলে ফেললো – ও এইবারে বুঝলাম। আমিও কিন্তু ওর শাশুড়ি । তুমি ভুলে যেও না দিদি ।
কাকিমার মুখটা কেমন যেন অন্ধকার হয়ে গেল । আর দাঁড়ালো না । তাড়াতাড়ি চলে গেলো ।
জেঠিমা আমার দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলেন
– আমি একদম পছন্দ করি না ছন্দার এই সব ব্যাপার ।
কেন যে পছন্দ করেন না, সেটা অবশ্য আমার মাথায় ঢুকলো না ।
সেদিন বাসায় ফিরে মাকে সবটা বললাম । মা শুনে আমাকেই ধমকাতে লাগলো – তোর দরকার কি রোজ রোজ ওদের বাড়ি যাবার? কোনদিন তোকেও কিছু বলে দেবে । ঠিক হবে । কলেজ থেকে সোজা বাড়ি আসতে কি হয় ?
– আমাকে কেন বলবে ?
– কেন বলবে না ? ছন্দা ওনার জা , তাছাড়া ও এতো ভালো একটা মেয়ে! ওকে যদি বলতে পারে..
মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বললাম–আচ্ছা আর যাব না। না না , কম যাব ।
আমার মা কিন্তু এই ছন্দা কাকিমাকে খুব ভালোবাসতো। তার অনেক গুলো কারণ ছিল। বছর পাঁচেক আগে ছন্দা কাকিমার স্বামী মারা
যান । তখন আমরা নতুন এসেছিলাম এই পাড়ায়। কাকিমা নাকি খুব কান্নাকাটি করেছিল – ‘আমাকে কার কাছে রেখে গেলে’ , বলে। পাড়ার সব লোক সেদিন ওঁর বাড়িতে ভেঙে পড়েছিল । আমার মাও গিয়েছিল ।
অল্পবয়সী বিধবা, নিঃসন্তান। যথেষ্ট ভালো
দেখতে । চোখদুটো তো খুব সুন্দর, কিন্তু কোনোদিন ওঁর নামে কেউ কোনো বাজে কথা বলতে পারে নি । একটাই বদনাম ছিল – মুখরা ।
**********
অল্পবয়সে বিধবা হবার জন্যই বোধহয় কাকিমা নিজের চারপাশে একটা শক্ত দেওয়াল তুলে রাখতো । যাতে কোনো অনধিকার প্রবেশ না হয়ে যায়।
আমার মা তো বলতো – ছন্দা মুখরা বলেই অনেক বিপদের হাত থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে চলতে পারে । নাহলে এই অল্প বয়সের বিধবা , চারদিকে যা অবস্থা একা একা থাকা মুস্কিল হত । ছন্দা কাকিমার একটা ছোটবোন ছিল নন্দা। খুব বড়লোক বাড়িতে তার বিয়ে হয়েছিল।সে তার দিদির থেকেও সুন্দরী ছিল । সে কিন্তু খুব দিদির দেখাশোনা করত । ছন্দা কাকিমার ছোটভাই বাজার হাট করে দিয়ে যেতো । ফলে উনি খুব একটা রাস্তাঘাটে বের হতেন না। কিন্তু তার মধ্যেও যদি কখনও সখনও একটু আধটু বেরোতে হত, মাথায় ঘোমটা টা ঠিক টানা থাকত। ছন্দা কাকিমাকে ঘোমটা ছাড়া কোনোদিন দেখা যেত
না । জিজ্ঞাসা করলে বলত – তোমার কাকুর একটা সম্মান আছে না ! লোকে বলবে কি, অমুকের বউ কোনো সভ্যতা জানে না । তোমার কাকুর বদনাম হবে ।
— কিন্তু কাকু তো…
মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বলতেন – শোনো শোনো, তোমার কাকু নেই তো কি হয়েছে, আমি তো তাঁর স্ত্রী ! তাঁর সম্মানের কথা আমাকে তো ভাবতেই হবে !
অথচ যে সময়ের কথা বলছি- আটের দশকের মাঝামাঝি সময় ,তখন কিন্তু আধুনিকতার জোয়ার এসে পড়েছে । মেয়েরা রোজ রোজ নতুন নতুন স্বাধীনতার ছোঁয়া পাচ্ছে। ঘোমটা তো তার অনেক আগে থেকেই উঠে গেছে ।
একদিন আমার মাকে বললাম – আচ্ছা মা, ছন্দা কাকিমা যখন বিধবা হলো , তখন তো অনেক অল্প বয়স ছিলো, আবার বিয়ে করতে পারতো তো ! এখনও তো পারে ! সারাক্ষণ একা একা থাকে !
আমার মা বরাবরই অত্যন্ত আধুনিক মানসিকতার। সাথে সাথে বললো– হ্যাঁ,পারেই তো ! কিন্তু ও করবে না কি ? বলে কোনো লাভ
নেই । ও তো চাকরীটাই করলো না । ওকে তো ওর বরের অফিস থেকে চাকরী দিতে চেয়েছিলো । ওর বরের তো সরকারী চাকরী ছিল । সেই চাকরীটা কাকে একটা দিয়ে দিলো ।
– দিয়ে দিলো ? কেন ? কাকে দিলো ?
– বোধহয় ওর শশুরবাড়ির দিকের দূরসম্পর্কের কোনো আত্মীয়ের ছেলেকে। তাদের অবস্থা ভালো ছিলো না। ছেলেটার মা এসে কান্নাকাটি করে পড়লো, ছন্দা অমনি চাকরীটা ওর ছেলের নামে লিখে দিলো ।
– নিজে করলো না !
– না, আর বললো ও চাকরী করতে বেরোলে ওর বরের নাকি বদনাম হবে । আর তাছাড়া ওর থেকে নাকি ওই ছেলেটার প্রয়োজনটাও বেশি । তারা তো বোধহয় এখন ওর একটা খোঁজ নিয়েও দ্যাখে না।
**********
এরপর বেশ কিছুদিন কেটে যায় । মায়ের কাছে বকা খেয়ে আমি পাপড়ি বৌদির বাড়ি যাওয়া আগের থেকে অনেক কমিয়ে দিয়েছিলাম । তাছাড়া জেঠিমা সত্যিই পছন্দ করতেন না, ওনার বৌমার সাথে কেউ বেশী মেলামেশা করে । কারণটা অবশ্য আমি কোনোদিনই জানতে পারি নি । সুজয়দাও এই ব্যাপারে বেশ নির্বিকার ছিল । মায়ের বাধ্য ছেলে ছিল আর কি !
তবে ছন্দা কাকিমার সাথে অনেকবার দেখা হয়েছে। ছোটখাটো যে কোনো অনুষ্ঠানই হোক না কেন, মা ছন্দা কাকিমাকে ঠিক ডাকত।
একদিন আমার মা ‘সত্যনারায়ণ’-এর পুজো করেছে, আমি সেদিন বাড়িতেই ছিলাম । মা আমাকে বললো পাড়ার সব বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রসাদ দিয়ে আসতে ।
আমাদের বাড়ি থেকে কয়েকটা বাড়ি পরে পাপড়ি বৌদির বাড়ি আর তার ঠিক পাশেই ছন্দা কাকিমার বাড়ি । সব বাড়ি প্রসাদ দিতে দিতে পাপড়ি বৌদির বাড়ি গেলাম । আমার হাত থেকে প্রসাদের প্লেটটা নিতে নিতে বৌদি বললো – তুমি তো আজকাল আসা প্রায় ছেড়েই দিয়েছো । ভিতরে চলো ।
বললাম- না বৌদি, এখন আর যাব না, কাকিমার বাড়ি যাওয়া বাকি আছে । ওখানে যাবো ।
– ছোটমার বাড়ি যাবে ?
একটু সময় চুপ করে থেকে বললো– আজকে একটা খুব বাজে ব্যাপার হয়েছে ।
— কি হয়েছে ?
–ছোটমা এসেছিল ,জানোই তো যেমন আসে আমার কাছে আর সেটা আমার শাশুড়ির একদম পছন্দ নয় ।
– হ্যাঁ, কেন গো ?
–আসলে মা তো! বোঝো তো ! হয়ত ভাবেন যে, ছোটমা বোধহয় আমার কোনো ক্ষতি করে দেবে। খাবারের সঙ্গে কিছু মিশিয়ে দেবে !
– মানে ? এটা আবার হয় নাকি ? খুব বাজে ধারণা।
– হ্যাঁ, জানি তো । আজকে উনি ছোটমাকে অনেক গুলো বাজে বাজে কথা বলে দিয়েছেন । আমার এতো খারাপ লাগছে । তুমি একটু বুঝিয়ে বলবে ছোটমাকে?
– ঠিক আছে দেখছি । কিন্তু আমি কি বলবো ?
– যদি উনি তোমাকে কিছু বলেন , তাহলে একটু বুঝিও ।
দেখলাম ওর চোখদুটোও ছলছল করছে ।
আমি আর দাঁড়ালাম না। সত্যি বলতে কি, আমার আর দাঁড়াতে ইচ্ছেও করছিলো না।
মানুষ এখনও কতো কুসংস্কারাচ্ছন্ন । এই ধরনের মানসিকতা যে কবে পাল্টাবে ? ছন্দা কাকিমা কারও খারাপ করতে পারে, এ কথা তো স্বপ্নেও ভাবতে পারি না ।
কাকিমার গেটের সামনে দাঁড়িয়ে জোরে জোরে ডাকলাম – কাকিমা কাকিমা ।
কাকিমা ভিতর থেকে বেরিয়ে এলো, আমাকে দেখে বললো – এসো ভিতরে এসো ।
বললাম- মা প্রসাদ পাঠিয়েছে।
এতক্ষণে কাকিমার চোখের দিকে সোজাসুজি তাকালাম । চোখদুটো টকটকে লাল জবা ফুলের মতো হয়ে আছে । কাঁদতে কাঁদতে চোখ মুখ নাক সব ফুলে গেছে । মুখ থেকে আপনাআপনি বেরিয়ে এলো- এতো কেঁদেছো ?
অনেক কষ্টে মুখে হাসি টেনে এনে বললো – ওদের বাড়িতে তো গেছিলে ? পাপড়ি কিছু বলে নি ? আর যাব না ভাবছি , ওদের বাড়ি ।
– হ্যাঁ, পাপড়ি বৌদিরও খুব মন খারাপ। কষ্ট পাচ্ছে বোধহয়!
–মন খারাপ ? কষ্ট পাচ্ছে ? কই, একটা প্রতিবাদও তো করলো না , দিদি যে আমাকে এতো কিছু বললো, ও কিছু তো একটা বলতে পারতো । ওকে এতো ভালোবাসি, আমার নিজের মেয়ে মনে
করি ।
–হয়ত শাশুড়ির মুখের উপর কিছু বলতে পারে নি, কিন্তু জেঠিমার কথা মানতেও পারে নি । বৌদিও মনে হ’ল কান্নাকাটি করছিলো ।
— তুমি কি করে বুঝলে ?
— দেখে বোঝা যাচ্ছে তো কান্নাকাটি করেছে । তোমার জন্য কষ্ট পাচ্ছে ।
— দিদি কেন এমন করে বলো তো ? আমি কি পাপড়ির কোনো ক্ষতি করতে পারি, বলো তো ! আমাকে বলছে বাঁজা মেয়েছেলে । আমি নাকি ওনার বৌমাকে হিংসা করি ।
বলতে বলতে আবার দুচোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়তে লাগলো । আমি কাকিমার হাতের উপর আমার হাত রাখলাম ।
বললাম – ছাড়ো না কাকিমা ।
তাতে তার কান্না যেন আরও বেড়ে গেলো । কাঁদতে কাঁদতেই বলছে — আমি বাঁজা নই , আমি বাঁজা নই দিদি সব জানে, তাও আমাকে এভাবে বলে ।
বললাম – এরকম করলে এবার তোমার শরীর খারাপ হবে ।
এতো সহজে এই দুঃখ কমার ছিল না ।
কান্নার বেগ একটু সামলে, নিজে থেকেই বলতে শুরু করল —
আমরা তিন বোন এক ভাই । দিদি তারপর আমি তারপর নন্দা , ভাই সবার ছোট । বাবার মাছের ভেড়ীর ব্যাবসা ছিল। দিদির খুব ধুমধাম করে বিয়ে দিয়েছিলেন । নন্দাকেও দেখে শুনে ভালো বিয়ে দিলেন । মাঝখানে আমি । দিদির বিয়ের পর হঠাৎ করেই ব্যাবসার অবস্থা খারাপ হয়ে যায় । মন্দা আসে । ভীষণ অভাব অনটন শুরু হয় । দিদির বিয়েতে খরচও হয়েছিল অনেক। বাবা যেন আর পারছিলেন না ।
এই সময় তোমার কাকুর সাথে আমার বিয়ের সম্বন্ধ আসে । আমি তখন ক্লাস নাইনে পড়ি । পড়াশোনায় ভালো ছিলাম না, দুই তিন বার ফেল করেছিলাম । কিন্তু তাই বলে ঐ সময়ে বিয়ে করতেও চাই নি । এদিকে এদের কোনো দাবীদাওয়া ছিল না । শুধু শাঁখা সিঁদুর পরিয়ে বিয়ে দিলেই হবে, ছেলে সরকারী চাকরী করে, বিধবা মাকে নিয়ে সংসার, অন্য ভাইরা সব বিয়ে করে যার যার মতো আলাদা । মায়ের অনেক বয়স হয়ে গেছিলো । তাই তাড়া ছিলো ।
বাবা কোনো কিছু আর ভাবলেন না । বাবার মুখের উপর বলতেও পারলাম না, আমি এই বিয়ে করব না । বিয়ের সময় প্রথম দেখলাম তোমার কাকুকে। মনে হলো আমার থেকে অনেক বড়ো । পরে জানলাম সে আমার থেকে বাইশ বছরের বড়ো।
অবশ্য সে আমাকে কোনো দিন কোনো অসম্মান করে নি । খুব স্নেহ করত ।
এতক্ষণ পর বললাম – তাহলে তুমি বিয়ের পর ভালোই ছিলে,বলো । কাকু তো শুনেছি খুব ভালো মানুষ ছিলেন ।
– হ্যাঁ, ভালো তো ছিলামই, তোমার কাকু আমাকে খুব স্নেহ করত । বাচ্চা মেয়ে মনে করত সব সময়।
আবার চোখ থেকে জল গড়াতে লাগলো । আমি এতক্ষণ পাশে বসেছিলাম, এবার নেমে কাকিমার পায়ের কাছে বসে পড়লাম, দু’হাত দিয়ে কোলটা জড়িয়ে ধরলাম–তাহলে ? তাহলে তুমি এত কাঁদছো কেন?
– তুমি আমার সন্তানের মতো, তোমাকে কি করে বলি !
খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে যেন অনেক দ্বিধা কাটিয়ে ধীরে ধীরে বললেন– তোমার কাকুর সাথে আমার স্বামী স্ত্রীর মতো কোনো সম্পর্কই ছিল না । সে আমাকে কোনোদিন ছুঁয়েও দেখে নি ।
— মানে ? (বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে থাকি, বিষ্ময় ঝড়ে পরে আমার গলায় ।)এও আবার হয় নাকি ? আর এর পরেও তুমি … একটা প্রশ্ন করব ? যদি অভয় দাও !
— বলো ।
— তুমি কোনোদিন চেষ্টা করো নি কেন, কাকুকে কাছে টানতে ?
— তোমার কি ধারণা, সেই চেষ্টা আমি করি নি ? কিন্তু কোনো লাভ হয় নি ।আমি আজও কুমারী । বাঁজা নই ,আমি বাঁজা নই, বাঁজা নই…
অনেক অনেক দিনের জমে থাকা কষ্ট , যন্ত্রণা উষ্ণ তরল স্রোত হয়ে ভিতর থেকে বেরিয়ে আসতে থাকে । এক প্রজন্মের কাছে যেন আর এক প্রজন্মের অকপট আত্মসমর্পণ ।
আমি হতভম্বের মতো কাকিমার মুখের দিকে তাকিয়ে বসে থাকি । কি জানি কতক্ষণ !
মনে হলো,পলেস্তারা খসে খসে পড়া প্রায়ান্ধকার কাকিমার এই ঘরটা যেন আরও আরও অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছে ।
(সত্যি ঘটনা অবলম্বনে)
0 Comments