পদ্মা পাড়ের গল্প

গত পনের বছর ধরে বিশেষ প্রয়োজনে মাঝে মাঝে মুর্শিদাবাদ যেতে হয় আমাকে । যখনই মুর্শিদাবাদ যাই, সময় সুযোগ হলে একবার পদ্মার ধার থেকে ঘুরে আসি । জায়গাটার নাম খাদুয়া । লালগোলা থেকে পাঁচ কিলোমিটার ভেতরে ৷ এক সময় এই নামে একটা গ্রাম ছিল এখানে ৷ এখন নদীগর্ভে | রয়েগেছে শুধু নামটুকু | কেবল খাদুয়া নয়, কালীনর, সেখালি… এরকম অনেক গ্রাম তলিয়ে গেছে পদ্মার সর্বনাশা ভাঙনে | উদ্বাস্তু হয়েছে হাজার হাজার পরিবার ৷ কেউ আশ্রয় নিয়েছে আশেপাশের গ্রামে, কেউ রাস্তার ধারে সরকারি জায়গায়, কেউ চলে গেছে অন্যত্র | বর্ষায় সবচেয়ে ভয়াবহ হয়ে ওঠে পদ্মা ৷ দু কূল ছাপিয়ে বহুদূর প্লাবিত করে ৷ বর্ষার শেষ দিক থেকে শুরু হয় ভাঙ্গন |
বহু মৎস্যজীবী পরিবার আজ ও জীবিকার জন্য এই পদ্মার উপর নির্ভরশীল | আজও সূর্যাস্তে অপরূপ হয়ে ওঠে পদ্মাপাড় ৷ আজও শৈশবের ক্রীড়াভূমি এই পদ্মা | আশেপাশের গ্রামগুলির মানুষ পার্কের প্রয়োজন মেটাতে বিকালে ছুটে আসে এই পদ্মাপাড়ে ৷ প্রেমিক-প্রেমিকাদের নিভৃত যাপনের স্থানও এই পদ্মাপাড় ৷ পদ্মা ভাঙে | পদ্মা গড়ে ৷ এভাবেই বয়ে চলে পদ্মা ৷ বয়ে চলে পদ্মা পাড়ের জীবন ৷
ভাঙনঃ
দশ বছর আগে তোলা ছবি ৷ গ্রামের নাম সেখালিপুর ৷ এখন নামটুকুই আছে, গ্রামের চিহ্নমাত্র নেই ৷ আস্ত একটা গ্রাম তলিয়ে গেছে নদীগর্ভে৷ ভাঙছে পদ্মা, ডুবছে বাড়ি-ঘর ৷ এভাবেই প্রতি বর্ষার শেষে জলের আলপনা আঁকা হচ্ছে মাটিতেI পদ্মা খাচ্ছে চাষের জমি, কাড়ছে মুখের ভাত ৷ পদ্মারে তোর করাল গ্রাসে ভাঙছে বাড়ি-ঘর / ঘরের মানুষ ঘর হারাইয়া হয়ে গেল পর ৷
জীবিকাঃ
জীবিকার প্রয়োজনে এভাবেই প্রতিদিন পদ্মার বুকে জাল বিছায় মানুষ | জালেই জীবন বাধে | পদ্মা নদীর মাছ পেটের টানে শৈশবও জলে যায় ৷ যেতে হয়… জল মানুষের লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত মানুষই যেতে ৷
জীবনঃ
সূর্যাস্তে এভাবেই মোহময় হয়ে ওঠে পদ্মা | এভাবেই মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অঙ্গ হয়ে ওঠে৷ অবসর যাপন ৷ পদ্মাও যখন খেলার সাথি ৷ ছোট থেকে এভাবেই পরিচয় পদ্মার সাথে ৷
1 Comment
Via Artiam · জুন 21, 2020 at 7:58 অপরাহ্ন
খুব ভালো লাগলো