আগমনী

জয়িতা সেনগুপ্ত on

পিতৃপক্ষ পেরিয়ে দেবীপক্ষে দিয়ে পা,
শুনছি নাকী,আসছে ঘরে,আমাদের দুর্গা!
সঙ্গে থাকছে কর্তাসহ দুই ছেলে,দুই মেয়ে,
অসুরব্যাটাও খুশী নাকী আগেরবারের চেয়ে।
সিংহ,ইঁদুর,প্যাঁচা,ময়ূর দিব্যি সেজে গুজে,
নিজের নিজের জায়গাগুলো ঠিক নিয়েছে খুঁজে।
রাজহাসটার ভারী দেমাক,বইয়ের বাহক কিনা!
বলল,“ব্যাটা ইঁদুর,প্যাঁচা,আমায় চটাবি না!
রাগলে আমি,বীণার ঘায়ে মূর্ছা যাবি সবাই,
বাগ্‌দেবী খোদ,বাঘ হয়ে শোন,করবে তোদের জবাই!
ভয়ের চোটে প্যাঁচা,ইঁদুর সিংহটাকে ধরে,
বলল,“মামা বাঁচাও,নইলে সবাই যাব মরে!”
সিংহ হাসে,“ময়ূরবাহন থাকতে কীসের ভয়?
মা,ব্যাটাতে ত্রিলোকজুড়ে করবে বিপদ জয়!
আসছি সবাই সদলবলে,ফিরবও দল বেঁধে,
রইব যদিন,মায়ের আগমনীই যাব সেধে!”

শিউলীফুলের গন্ধে যখন,
দুর্গাপুজোর ডাক,
বাজল তখন ওই যে দুরে,
ঠাকুরবাড়ির ঢাক।
দুর্গাপুজোর আমেজমাখা,
এই প্রকৃতির টানে,
শিল্পীরা সব ব্যস্ত তখন,
নিজ সৃষ্টির পানে।
অসুরদলনী,সিংহবাহিনী
দেবী দশভূজা,
সবাই ভাবে আসবে কখন,
আবার দুর্গাপূজা?


পুজো মানে,
শিশিরস্নাতা ঘাসের ডগায় আঙুল ছোঁয়া,
পুজো মানে,
সুনীল আকাশ,পেজা মেঘের ঈষৎ ধোঁয়া।
পুজো মানে,
সদ্য ফোঁটা শিউলীরাশির সুবাস-আতর,
পুজোমানে,
রেল লাইনের গা-জড়ানো কাশের চাদর।
পুজো মানে,
কুমোরটুলীর সদ্য মাখা গন্ধ মাটির,
পুজো মানে,
শুনতে পাওয়া,বোল উঠছে ঢাকে কাঠির।
পুজো মানে,
ইচ্ছে মত সেজে ওঠা কয়েকটা দিন,
পুজো মানে,
হৃদয়পুরে হিল্লোল তোলে খুশীর বিন্‌।
পুজো মানে,
দুরের আসা,হঠাৎ ভীষণ কাছাকাছি,
পুজো মানে,
হপ্তাখানেক,মন্দ-ভালোয় দিব্যি বাঁচি।
শারদীয়া আসুক ফিরে,
আগমনীর সুরে সুরে,
আনন্দময়ী মেয়ে আসছেন,
বছর ঘুরে মায়ের দ্বারে।

আসছে পুজো,খুশীর রঙে,রাঙিয়ে দিতে মন,
শিউলীফুলের গন্ধে যেন,দেবীর আবাহন,
দুঃখ,ব্যথা ভুলে এখন সাজো সাজো রব,
আর কটা দিন বাদেই শুরু সেরা মহোৎসব।
পুজোর আলোয় দীপ্ত হবে বেদনাবিধূর মন,ম
মা আসছেন বাপেরবাড়ি,চলছে আয়োজন।
দশভূজার অপেক্ষাতে ব্যাকুল মন-প্রাণ,
বিশ্বভূবন গাইছে দেখ,আগমনীর গান।


শিউলিফুলের শুভ্র ডগায়,
শিশিরকুচি মেখে,
কাশের দোলায় ভুবন জুড়ে
শরৎ দিল এঁকে।
পেজা মেঘের ভেলায় চড়ে,
মেয়ে আসছে মায়ের ঘরে,
দেবীর আলোয়,মন্দ-ভালোয়
দুঃখ যাবে ঢেকে।
আশীর্বাদের সাজিয়ে ডালি,
চরণ রাখো সবার দোরে,
শক্তি তোমার,নারীর অঙ্গে
দাও ঢেলে আজ উপুর করে।
তুমি অসুরদলনী,অঙ্গে তোমার
পাপনিধনী মশাল জ্বলে,
আশিস্‌ কর,লড়াই যেন
জিততে পারি,সুকৌশলে।
যাত্রা তোমার,চারটে দিনের,
আগমনীর ছন্দে গেঁথে,
আঁধার ভুলে,হৃদয় খুলে,
সিঁদুরখেলায় উঠব মেতে।



মা চললেন শ্বশুরবাড়ী,
সন্তানদের হৃদয় ভারী,
চোখের জলে বিদায় বেলায়,
চলছে বরণ সিঁদুর খেলায়।
আসছে বছর আবার হবে,
শারদীয়ায় মাতব সবে,
আজ এখানেই দিলাম ইতি,
শুভ বিজয়ার,জানিয়ে প্রীতি।


ফেসবুক অ্যাকাউন্ট দিয়ে মন্তব্য করুন

Categories: ছড়া

জয়িতা সেনগুপ্ত

ইতিহাসে স্নাতকোত্তর রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।‘দেশ’ পত্রিকায় প্রকাশিত প্রথম ছোটগল্প ‘উল কাঁটা’ অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে পরিচালক শিলাদিত্য মৌলিকের প্রথম বাংলা ছায়াছবি ‘সোয়েটার’।প্রথম উপন্যাস ‘অন্য ত্রিকোণ’ প্রকাশিত শারদীয়া সানন্দায়,যেটি বই আকারে প্রকাশিত ‘আনন্দ পাবলিশার্স’ থেকে।এছাড়া বিভিন্ন লিটিল ম্যাগাজিনে নিয়মিত লেখালেখি করেন ।

0 Comments

মন্তব্য করুন

Avatar placeholder

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।