বয়সপঞ্জি অনুযায়ী…

মণিদীপা সেন on


কবিতা -১

আসলে বহুদিন রাত্রি হয় না। ঘুম জারিত মাথায় প্রতিবেশির আলো নিভিয়ে দেওয়াই রাত্রি নয়। জানলার ফাঁক ফোকর,  কপাটের সাথে মিশে যাওয়াই বা কতটুকু রাত্রি? দরজার ফালি দিয়ে হলুদ কুমড়োর মত আঁট নরম আলো এখনো আসছে। ভেতরে অবাধ্য অভুক্ত বাদুড় মরিয়া! কিছু চাই তার আরও…   আশেপাশের সকলের ভেতর হাত ডুবিয়ে দেখি। সবাই শরীরের পোষ্যকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছে, তারা গাছতলার মত ঠাণ্ডা!
সবার চুপ করে যাওয়াই বা কতটা রাত্রি?
আসলে বহুদিন রাত্রি হয় না।

কবিতা -২

একফালি স্নানে উত্তরমেরু, সাদা ফার, হাঁসের পা, আর কিছু ঠিকরে ওঠা সূর্য গলে গলে নেমে আসছে। কবোষ্ণ জল, শীতকালীন ইঙ্গিত এসব তুচ্ছ। নতুন বেলুনওয়ালা আসতে শুরু করেছে শহরে। চিকন রামধনু বুদবুদ। স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি মাত্রায়, তোমার আঙুল ধার করি এখন! ফাটলের আলো আলো লালে চেপে ধরো উপজাত এন্টিসেপ্টিক। 

কবিতা -৩

এরপর আমি আর তাকাইনা। কাচঢাকা গাড়ির পেছনে মুখ ঘুরিয়ে বসি। মাইলফলক থেকে উঠে আসছে, বিগত প্রেমিকদল। একবুক শাপ নিয়ে হাত নেড়ে যাচ্ছে। স্থিতিস্থাপক রাস্তায়, ভরা কোটালের ছটপটানি। ভেবো না। যে তোমায় ক্ষমা করেনি, সে তোমার কখনও হয়নি আদৌ!
এরপর আমি আর তাকাইনা। খুঁটে খাই ওভারড্রাফট জীবন। ছুঁড়ে দিই রেক্সিন সমব্যথী, বন্ধুত্ববার্তা।  তামাকের হলুদে তুলোতুলো ভাব; আসলে সাবধানবাণী ছিল, প্রতিরোধক নয়। তুমি জানোনি চুমুর গভীরতা  একমাত্র চোখের আচরণে  মাপা হয়। না ধরা কলসংখ্যা লাল হয়ে বাজলে সাদা কাপড়ে মুড়ে মৃত্যুর অবশেষ নিয়ে চলে যায় গোপন ফরিস্তা। নিকিয়ে নিই। ফাটা মাটি জোড়ার অছিলায় আদর করে নিই তোমার প্রথম কবর!

কবিতা -৪

চাঁদের খোসার ছবি আসা শুরু হয়েছে। দুম করে বৃষ্টিতে মাথা বাঁচাতে বাঁচাতে বাসের নম্বর জুম হল, দৌড়ে উঠতে জানলার ধার আর টপটপে চানজল। তীব্র রোদেভাজা কফির লাল ফলনির্যাস আর একদল বন্ধু। রিইউনিয়ন। সত্যি নিঙড়ে পড়ছে আর ওটুকুই বেঁচে থাকার মূল ও একমাত্র উপায়।
ঝুরিসুতো ডিম আর নরম মাছের কম্প্রেসড ককটেল। অযথা সময় ছিল বলেই ঘুরতে আসা তবু কাজ তো থাকেই। ছিলও। অনেকে। তবু দেখা হয়নি অনেকের সাথেই আবার কিছু পুরোনো, অপরিচিত হতে হতে না হলেও, রিনিউড পরিচয় বন্ধুতায় গড়ায় না। দুটো সিঁড়ি উঠতেই নিকষ ঝাঁকুনি আর হলুদ ভরসায় ভারসাম্য রক্ষা পেয়ে যায়। চারমাথার উদব্যস্ত মোড়ে ঝাঁক ঝাঁক কাশফুল ফুটে ওঠে। মানুষনদীর স্রোত। আর চড়া জাগা বুক। বাস পালটে বাস।
একটা আখ ছিবড়ের মেশিন। ক্রমাগত পিষেই চলে। রসভার তারিখের পেয়ালায় চুমুক দেয় মহানগর।

কবিতা -৫

চিহ্নহীন। অগাধ।
পরীর পালকে মুছে নেওয়া হয়েছে বায়ুর রক্ত৷
যারা স্বপ্ন দেখেছিল, ছড়ানো অলিন্দ ধমনীর কাছে আটকে থাকা
চুনি ছিঁড়ে
থালা সাজাচ্ছে…

তরুণ অন্ধকার।

আলোর দুধ মিলিয়ে গেছে। সেটুকু ছেঁকে নিতেই মানুষ

হাঁস হয়ে উঠতে বাধ্য হবে


ফেসবুক অ্যাকাউন্ট দিয়ে মন্তব্য করুন


মণিদীপা সেন

খড়খড়ি জানলা, লোহার ঘোরানো সিঁড়ি, প্রাচীন গ্রন্থাগার, খোলা মাঠ ইত্যাদি সমন্বিত গঙ্গা তীরবর্তী বনেদী মফস্বল হাওড়ার বালিতে জন্ম। ২০১৫ তে মাসকমিউনিকেশন -জার্নালিজমে স্নাতকোত্তর পাশ করার পরে একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের কর্পোরেট অফিসে কর্মজীবন শুরু। বর্তমানে সেই চাকরি ছেড়ে শিক্ষকতার সাথে যুক্ত। স্কুলজীবন থেকে লেখালিখির শুরু হলেও ২০১৫ থেকে বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ও ওয়েবজিনে লেখা প্রকাশ শুরু হয়। অপরাজিত, মধ্যবর্তী, বাক্, শহর, সৃষ্টির একুশ শতক, সোপান, দহগ্রাস, ক্রৌঞ্চদ্বীপ, ইত্যাদি পত্রিকা সহ অন্যান্য পত্রিকায় কবিতা ও গদ্য শাখায় তাকে পাওয়া গেছে। ২০১৭ সাল থেকে "এবং চিলেকোঠা" পত্রিকার কার্যকরী সম্পাদনায় যুক্ত। নির্জনতার যা যা উপাদান হয় সবই প্রিয় যেমন প্রত্যন্ত কোনো গ্রামের বাঁশ-বাখারির মাচা, বিস্তীর্ন নদীতট, জঙ্গুলে ট্রি হাউস বা লবঙ্গনির্যাস তামাকধোঁয়া।

0 Comments

মন্তব্য করুন

Avatar placeholder

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।